ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের অন্যতম ভরসার নাম কিদাম্বি শ্রীকান্ত (Kidambi Srikanth)। এই শাটলার বহুবার ভারতকে গর্বিত করেছেন তার পারফরম্যান্সে। তবে গত কয়েক বছর ধরে চোট ও ফর্মের অবনতি তার কেরিয়ারকে থমকে দেয়। সেই শ্রীকান্ত আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি হারিয়ে যাননি, একটু সময় চেয়েছিলেন ফিরে আসার জন্য। মালয়েশিয়া মাস্টার্স (Malaysia Masters) সুপার ৫০০ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছে যেন নিজেকে নতুন করে চিনিয়ে দিলেন তিনি।
৩২ বছর বয়সি শ্রীকান্ত শনিবার সেমিফাইনালে জাপানের বিশ্ব র্যাঙ্কিং ২৩ নম্বর খেলোয়াড় ইউশি তানাকাকে সরাসরি সেটে ২১-১৮, ২৪-২২ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছান। এই জয় শুধু একটা ম্যাচ জয় নয়, বরং তার দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। প্রায় ছয় বছর পর বিডব্লিউএফ ওয়ার্ল্ড ট্যুরে পুরুষ সিঙ্গলসের ফাইনালে উঠলেন শ্রীকান্ত। শেষবার তিনি ২০১৯ সালে ইন্ডিয়া ওপেনের ফাইনালে খেলেছিলেন, যেখানে রানার-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে।
পুরনো ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত
২০১৭ সালে এক মরসুমে চারটি বড় খেতাব জিতে বিশ্ববাসীর নজরে আসেন শ্রীকান্ত। তবে এরপর থেকেই শুরু হয় তাঁর কঠিন সময়। নানা চোট-আঘাত, বিশেষ করে গোড়ালির সমস্যা, তাঁর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে থাকে। এমনকি ২০২১ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রূপো জেতার পরও তিনি স্থায়ী ফর্মে ফিরতে পারেননি। ২০২২ সালে থমাস কাপ জয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও ধারাবাহিকতা ছিল না। র্যাঙ্কিং ক্রমশ নিচে নেমে আসে – বর্তমানে তার বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৬৫।
তবে মালয়েশিয়া মাস্টার্সে শ্রীকান্তের খেলা দেখে বোঝা গেল, তিনি পুরনো ছন্দে ফেরার জন্য প্রস্তুত। তানাকার বিরুদ্ধে ম্যাচে শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও ক্রমে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ম্যাচের রাশ নিজের হাতে নিয়ে নেন। তার স্মার্ট নেট প্লে, শক্তিশালী স্ম্যাশ এবং দ্রুতগতির কভারেজ প্রমাণ করে দিল, শ্রীকান্ত এখন প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন।
প্রস্তুতির পেছনের গল্প
শ্রীকান্ত নিজে জানিয়েছেন, গত তিন মাস ধরে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তার ফিটনেস এবং র্যালির গতি বাড়ানোর উপর বিশেষ নজর দিয়েছেন কোচ আরএমভি গুরুসাই দত্ত ও পারুপল্লি কাশ্যপ। এছাড়া, খেলার প্রতি মনোযোগ এবং নিয়মিত ম্যাচ অনুশীলনের অভাব পূরণ করতেই বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গত বছর খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারিনি। কোয়ালিফাইং খেলতে হয়েছে, তাই ম্যাচের ছন্দটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবে গত এক মাস ধরে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। সবকিছু যেন এই টুর্নামেন্টে ঠিকঠাক হয়ে গেল।”
টুর্নামেন্টে ভারতের একমাত্র আশা
এই বছরের মালয়েশিয়া মাস্টার্সে শ্রীকান্তই এখন ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রয়ে গেছেন ফাইনালে। এর আগে পিভি সিন্ধু, প্রণয়, ধ্রুব কপিলা-তানিশা ক্রাস্টোদের মতো খেলোয়াড়রা বিদায় নিয়েছেন। মিক্সড ডাবলসে ধ্রুব ও তানিশার জুটি কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী চাইনিজ জুটির বিরুদ্ধে লড়াই করে হেরে যায়। ফলে ভারতের চোখ এখন শুধুই শ্রীকান্তের উপর।
ফাইনালে প্রতিপক্ষ চীনের লি শি ফেং
ফাইনালে শ্রীকান্তের মুখোমুখি হবেন দ্বিতীয় বাছাই চীনের লি শি ফেং, যিনি বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ উপরের দিকে রয়েছেন এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও খুব ভালো। তবে শ্রীকান্ত যদি সেমিফাইনালের মতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারেন, তাহলে বড় চমক দিতেও পারেন। ফাইনাল ম্যাচটি তাঁর জন্য শুধু একটি খেতাব নয়, বরং এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
কিদাম্বি শ্রীকান্তের এই প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র ক্রীড়াক্ষেত্রে নয়, জীবনের একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প। চোট-আঘাত, ব্যর্থতা এবং মনোবল ভেঙে পড়ার মাঝেও যিনি হার মানেননি, বরং নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে ফিরে এসেছেন। মালয়েশিয়া মাস্টার্সের ফাইনালটি তাঁর জীবনের আরেকটি বড় লড়াই — আর এই লড়াইয়ে গোটা দেশ তাঁর পাশে আছে।