খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস ২০২৫-এর (Khelo India Winter Games) দ্বিতীয় পর্ব রবিবার, ৯ মার্চ, জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গের মনোরম কংডুরি ঢালে শুরু হতে চলেছে। এই মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রথম পর্বের বিজয়ী লাদাখ ইউনিয়ন টেরিটরির কাছ থেকে শীর্ষস্থান ছিনিয়ে নিয়ে তাদের সামগ্রিক শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে নামবে। প্রথম পর্বে লাদাখ সাতটি পদক জিতে শীর্ষে থাকলেও, এবার গুলমার্গের তুষারময় ঢালে সেনাবাহিনী তাদের দক্ষতা প্রমাণ করতে মরিয়া।
প্রথম পর্বে, যা গত জানুয়ারি মাসে লাদাখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, লাদাখ চারটি স্বর্ণসহ মোট সাতটি পদক জিতে প্রথম স্থান অধিকার করে। তামিলনাড়ু তিনটি স্বর্ণসহ পাঁচটি পদক নিয়ে দ্বিতীয় হয়, যখন মহারাষ্ট্র সর্বাধিক দশটি পদক জিতলেও মাত্র দুটি স্বর্ণের কারণে তৃতীয় স্থানে থাকে। এবার গুলমার্গে ৩৫০-এর বেশি ক্রীড়াবিদ ১১টি রাজ্য, দুটি ইউনিয়ন টেরিটরি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী—ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইন্দো-তিব্বতি সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি) এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)—থেকে অংশ নেবেন। এই পর্বে চারটি শাখায় প্রতিযোগিতা হবে: আলপাইন স্কিইং, নর্ডিক স্কিইং, স্কি মাউন্টেনিয়ারিং এবং স্নোবোর্ডিং। ফেব্রুয়ারিতে অপর্যাপ্ত তুষারপাতের কারণে এই ইভেন্টটি স্থগিত করা হয়েছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক তুষারপাত এখন এই প্রতিযোগিতার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে।
কাশ্মীরের ক্রীড়াবিদদের উৎসাহ
জম্মু ও কাশ্মীরের আলপাইন স্কিইং ক্রীড়াবিদ ওয়াসিম ভাট এই প্রতিযোগিতার জন্য উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, “খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস জম্মু ও কাশ্মীরের শীর্ষ ক্রীড়াবিদদের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য প্রতিভাকে ফোকাসে এনেছে। কাশ্মীরের পাহাড় আমাকে নির্ভীক এবং অভিযোজিত হতে শিখিয়েছে। আমি রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় আমার দক্ষতা পরীক্ষা করতে এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে গর্বিত করতে উৎসাহী।” ওয়াসিমের এই কথা কাশ্মীরের তরুণ ক্রীড়াবিদদের মধ্যে উদ্দীপনার প্রতিফলন ঘটায়, যারা এই মঞ্চকে তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তার পরীক্ষা
দিল্লির স্কি মাউন্টেনিয়ারিং ক্রীড়াবিদ ক্যাপ্টেন অমিত কাপুর এই প্রতিযোগিতার অনন্যত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “২০২০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস অনেক দূর এগিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর এই প্রতিযোগিতা ক্রীড়াবিদদের ভারতের শীতকালীন ক্রীড়ার রাজধানী জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ে এসেছে, যেখানে এখন পর্যন্ত সব উইন্টার গেমস হয়েছে। স্কি মাউন্টেনিয়ারিং হল সহনশীলতা, দক্ষতা এবং মানসিক দৃঢ়তার খেলা। গুলমার্গের ঢালে চড়া কঠিন হলেও, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা অসাধারণ।” অমিতের এই মন্তব্য শীতকালীন ক্রীড়ার চ্যালেঞ্জ এবং আকর্ষণকে তুলে ধরে।
স্থানীয় প্রতিভার আন্তর্জাতিক মঞ্চ
জাতীয় গেমসের স্বর্ণপদক বিজয়ী ভাকার আহমদ লোন, যিনি জম্মু ও কাশ্মীরের একজন স্নোবোর্ডিং ক্রীড়াবিদ, এই গেমসকে স্থানীয় প্রতিভার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, “খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস স্থানীয় প্রতিভার ওপর আলো ফেলছে এবং বাইরে থেকে আগত ক্রীড়াবিদদের গুলমার্গের মনোমুগ্ধকর তুষারে খেলার সুযোগ দিচ্ছে। আমার জন্য স্নোবোর্ডিং শুধু খেলা নয়, এটি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ এবং আমার সীমা পরীক্ষার একটি উপায়। আমি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিশ্বকে দেখাতে উৎসাহী যে কাশ্মীরি ক্রীড়াবিদরা কী করতে পারে।” ভাকারের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা কাশ্মীরের তরুণদের মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের প্রমাণ করার স্বপ্নকে প্রতিফলিত করে।
প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপট
খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস ২০২৫-এর প্রথম পর্ব জানুয়ারি ২৩ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত লাদাখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে বরফের ওপর খেলা যেমন আইস হকি এবং স্পিড স্কেটিং হয়। লাদাখ সেখানে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে শীর্ষে উঠে আসে। এবার গুলমার্গে তুষারভিত্তিক খেলাগুলোর মাধ্যমে সেনাবাহিনী তাদের গত বছরের শিরোপা ধরে রাখতে চায়। ২০২৪ সালে সেনাবাহিনী ১০টি স্বর্ণ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, যখন লাদাখ এবং জম্মু ও কাশ্মীর যৌথভাবে আয়োজক ছিল। এবারও এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে লড়াই তীব্র হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গুলমার্গের প্রস্তুতি
গত ফেব্রুয়ারিতে অপর্যাপ্ত তুষারপাতের কারণে দ্বিতীয় পর্ব স্থগিত করা হয়েছিল। তবে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গুলমার্গে প্রচুর তুষারপাত হয়েছে, যা কংডুরি ঢাল এবং গল্ফ কোর্স ক্লাবকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেছে। ৩০০-এর বেশি ক্রীড়াবিদ এই চারটি শাখায় অংশ নেবেন, এবং আয়োজকরা ইতিমধ্যে সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছেন। এই ইভেন্টটি ১২ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
শীতকালীন ক্রীড়ার গুরুত্ব
খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস ২০২০ সাল থেকে ভারতে শীতকালীন ক্রীড়ার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি তরুণ প্রতিভাদের জন্য একটি জাতীয় মঞ্চ প্রদান করে এবং ২০২৬ শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য ভারতীয় ক্রীড়াবিদ তৈরিতে সহায়তা করে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়া বলেছেন, “এই গেমস আমাদের দেশের শীর্ষ ক্রীড়াবিদদের খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। হিমালয়ের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রতিভা উঠে আসছে, যা খুবই উৎসাহজনক।”
গুলমার্গে খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমসের দ্বিতীয় পর্ব সেনাবাহিনী এবং লাদাখের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী হবে। স্থানীয় ক্রীড়াবিদদের জন্য এটি তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের একটি সুবর্ণ সুযোগ। ওয়াসিম, অমিত এবং ভাকারের মতো ক্রীড়াবিদরা এই মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে প্রস্তুত। তুষারময় গুলমার্গের মাটিতে এই প্রতিযোগিতা ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।