সুইডিশ কোচ মিকেল স্ট্যাহরের (Mikael Stahre) অধীনে দুরন্তভাবে মরশুম শুরু করেছিল কেরালা ব্লাস্টার্স। ডুরান্ড কাপে তাঁদের দাপুটে পারফরম্যান্স বিশেষভাবে নজর কেড়েছিল। শক্তিশালী প্রতিপক্ষদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল কেরালা। যদিও শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরু এফসির কাছে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হয়। এরপর ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) নিজেদের সাফল্যের লক্ষ্যে মাঠে নামে কোয়ামি পেপরা, আদ্রিয়ান লুনার দল। কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি কেরালার।
হতাশার সূচনা: ঘরের মাঠেই হার
আইএসএলের প্রথম ম্যাচে কোচিতে নিজেদের ঘরের মাঠে শক্তিশালী পাঞ্জাব এফসির কাছে ১-৩ ব্যবধানে পরাজিত হয় কেরালা ব্লাস্টার্স। মরশুমের শুরুতেই এই হার সমর্থকদের হতাশ করে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে নোয়া সাদাউরা ও কোয়ামি পেপরার গোলের সৌজন্যে দুর্বল ইমামি ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল দল।
জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ
ইমামি ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পর কেরালা বেশ কিছু ম্যাচে ড্র করে। তবে কলকাতার কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে দারুণ জয় পায় তাঁরা। এই ম্যাচে লুনার অনবদ্য নেতৃত্ব দলকে তিন পয়েন্ট এনে দিয়েছিল। কিন্তু সাদা-কালোর বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতার পরই শুরু হয় কেরালার পতন।
টানা তিনটি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে মিকেল স্ট্যাহরের ছেলেরা। বেঙ্গালুরু এফসি এবং মুম্বাই সিটি এফসির বিপক্ষে তাঁদের লড়াই সত্ত্বেও জয় তুলে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে মুম্বাই সিটির বিপক্ষে ম্যাচে পেট্রো ক্র্যাটকির দাপটের কাছে হার স্বীকার করতে হয় কেরালাকে।
হতাশার চূড়ান্ত ধাক্কা: হায়দরাবাদ ম্যাচ
ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসির বিপক্ষে আরও একবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কেরালা। জেসুস জেমিনেজের গোলে শুরুতে এগিয়ে গেলেও, শেষ পর্যন্ত ১-২ ব্যবধানে ম্যাচ হারতে হয়। থাংবোই সিংটোর নেতৃত্বে হায়দরাবাদের দল পিছিয়ে থেকেও ম্যাচে দারুণভাবে কামব্যাক করে। এই পরাজয় কেরালা ব্লাস্টার্স সমর্থকদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়।
ম্যানেজমেন্টের আস্থা হারাচ্ছেন স্ট্যাহর
টানা তিন ম্যাচ হারের পর মিকেল স্ট্যাহরের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যানেজমেন্ট যে মোটেই সন্তুষ্ট নয়, এমনটাই জানা গেছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে। স্ট্যাহরের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে, দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব এবং ম্যাচের শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে ব্যর্থ হওয়া ম্যানেজমেন্টের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ: চেন্নাইয়িন এফসি
আগামী ২৪ নভেম্বর কোচিতে নিজেদের ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসির মুখোমুখি হবে কেরালা ব্লাস্টার্স। এই ম্যাচ এবং এর পরের ম্যাচে দল কেমন পারফর্ম করে, তার উপর নির্ভর করছে স্ট্যাহরের ভবিষ্যৎ। এই দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স বিচার করেই হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেরালা ম্যানেজমেন্ট।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
কেরালা ব্লাস্টার্স সমর্থকরা শুরু থেকেই দলের প্রতি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। মিকেল স্ট্যাহরের অধীনে শুরুতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ব্যর্থতা সমর্থকদের হতাশ করেছে। স্ট্যাহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও, অনেক সমর্থকই মনে করেন যে তাঁকে আরও সুযোগ দেওয়া উচিত। বিশেষ করে, পরবর্তী ম্যাচগুলোতে দলের ফর্ম ফেরাতে তিনি কীভাবে নেতৃত্ব দেন, তা দেখার বিষয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?
মিকেল স্ট্যাহরের বদলে নতুন কোচের সন্ধান করা হতে পারে কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যানেজমেন্টের পরবর্তী পদক্ষেপ। তবে, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দল এবং কোচিং স্টাফকে আরও সময় দেওয়া হতে পারে। বিশেষত, চেন্নাইয়িন এফসি এবং তার পরের ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স করলে হয়তো পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।
কেরালা ব্লাস্টার্সের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ নিজেদের মর্যাদা ফেরানো। স্ট্যাহরের অধীনে দল কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।