রবিবার,সন্ধ্যায় কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে খেলতে নামছে ATK মোহনবাগান (Mohun Bagan), প্রতিপক্ষ কেরালা ব্লাস্টার্স (KBFC vs ATK MB)। চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড ঘরের মাঠে নেমেও শুরুটা ভাল করতে পারেনি। এগিয়ে থেকেও হেরে গিয়েছে চেন্নাইন এফসি-র কাছে। ফলে দলের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো অবশ্য বলে চলেছেন, নিজের দলের ওপর তাঁর পুরো আস্থা রয়েছে। ভবিষ্যতে তারা ভাল খেলবেই।
এমন আবহে কোচির মাঠে নামার আগে অন্তত পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে এগিয়ে মেরিনার্সরা। এখনও পর্যন্ত সবুজ মেরুন ব্রিগেডকে হারাতে পারেনি কেরালার তারকা দল।ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ৪ বার। ব্লাস্টার্স কোনও বারই জিততে পারেনি। তিনবার জিতেছে, ATK মোহনবাগান। দুই দলের এই চারবারের দ্বৈরথে মোট ১৬ গোল হয়েছে। দশটি দিয়েছে কলকাতার দল ও ছ’টি দিয়েছে ব্লাস্টার্স।২০২০-২১ মরশুমে প্রথম ম্যাচে ১-০ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৩-২ গোলে জেতে ATK মোহনবাগান। ২০২১-২২ মরশুমে প্রথমে ৪-২ গোলে জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী ও পরের বার ২-২ হয়।
কেরালা ব্লাস্টার্স গতবারের দলের বেশিরভাগ ভারতীয় খেলোয়াড়দের রেখে দিয়েছে। তবে বেশ কয়েকজন নতুন বিদেশিকে নিয়েছে তারা। এর পরিবর্তে অবশ্য আলভারো ভাসকেজ ও জর্জ পেরেরা দিয়াজের মতো দুই বিদেশি ফুটবলারকে হারাতে হয়েছে। নতুন বিদেশিদের মধ্যে রয়েছেন দুই গ্রিসজাত সেন্টার ফরোয়ার্ড আপোস্তোলোস গিয়ানু ও দিমিত্রিয়স দায়ামান্তাকস, স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক ভিক্টর মঙ্গিল এবং ইউক্রেনের মিডফিল্ডার ইভান কালিউঝনি।
মিডফিল্ডার ইভান কালিউঝনি
গত ম্যাচে প্রথম আইএসএলে খেলতে নেমে জোড়া গোল করে দলকে জিতিয়ে দেন। গতবারের দলে থাকা গোলকিপার প্রভসুখন গিল, রাইট ব্যাক হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা, ক্রোয়েশিয়ান সেন্টার ব্যাক মার্কো লেসকোভিচ, তারকা মিডফিল্ডার সহাল আব্দুল সামাদ, উরুগুয়ের মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান লুনা, গোয়ানিজ লেফট ব্যাক জেসেল কার্নেইরো তো আছেনই। সে দিনের জোড়া গোলের জন্য কি রবিবার প্রথম এগারোয় থাকবেন কালিউঝনি? কোচ ইভান ভুকোমানোভিচ বলছেন, “এখনই আমরা ওর ওপর বেশি চাপ দিতে রাজি নই। আগে ও পরিবেশ, সতীর্থদের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নিক, তার পরে ক্রমশ ওকে বেশি দায়িত্ব দেওয়া হবে”।
সন্দেশ ঝিঙ্ঘান ও তিরির অভাব পূরণের জন্য দুই বিদেশি ডিফেন্ডার গিনির ফ্লোরেন্তিন পোগবা ও অস্ট্রেলিয়ার ব্রেন্ডান হ্যামিলকে এনেছে ATK মোহনবাগান। গত আইএসএল মরশুমে ATK মোহনবাগান লিগ পর্বে ২৬টি গোল খেয়েছিল, যা চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই এ বার দলবদলের শুরুতেই রক্ষণ মজবুত করার দিকে জোর দেন কোচ ফেরান্দো। যোগ দিয়েছেন গত আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি থেকে আসা ডিফেন্ডার আশিস রাই।
কিন্তু ডুরান্ড কাপে এই ডিফেন্স লাইন-আপকে তেমন শক্তিশালী মনে হয়নি। গ্রুপ পর্বে ছ’গোল দিয়ে চার গোল খায় তারা। গত মরশুম পর্যন্ত যে কাজটা করেছেন রয় কৃষ্ণ, সেই কাজটা এ বার অস্ট্রেলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চির দিমিত্রিয়স পেট্রাটস করবেন বলেই শোনা গিয়েছিল। তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি নিজেই। প্রথম ম্যাচে নিজে গোল করতে না পারলেও মনবীর সিংকে যে ভাবে গোল করতে সাহায্য করেন, তা ছিল অনবদ্য। পেট্রাটস মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। গোলের সুযোগ তৈরি করে দিতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। তাঁর পরিসংখ্যান দেখলেই তা বোঝা যায়। ভারতে এসে প্রথম ম্যাচে সেই ভূমিকাতেই বেশি সফল হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
মাঝামাঠের এ পার থেকে ব্যাকহিল করে হুগো বুমৌস বল বাড়ান মনবীরকে। তিনি হাফলাইনের ওপারে ডানদিকে পেট্রাটসকে বল দেন। শেষে গোলের পাসটা ডানদিক থেকে মনবীরকে দেন তিনিই। এবং বাঁ দিক দিয়ে ওঠা মনবীর বক্সে ঢুকে গোলে কোণাকুনি শট নেন। গত ম্যাচে লিস্টন কোলাসোকে প্রথম এগারোয় দেখা যায়নি।
এই ম্যাচে হয়তো দেখা যাবে। আশিক কুরুনিয়ানকে শুরু থেকেই দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন আশিক নিজেই। সাংবাদিক বৈঠকে তা বলেও দেন তিনি। তাঁর জায়গায় লিস্টনকে রাখতে পারেন কোচ। গত ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা কার্ল ম্যাকহিউকেও প্রথম এগারোয় দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্রেন্ডান হ্যামিল, জনি কাউকো ও হুগো বুমৌসের মধ্যে একজনকে হয়তো বসতে হতে পারে।
নজরে যে তারকারা:
আদ্রিয়ান লুনা (অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি)
প্রথম ম্যাচেই কেরালা ব্লাস্টার্স সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন এই মিডফিল্ডার, যিনি প্রথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গ এফসি’র বিরুদ্ধে গোল করে তাঁর ৬ বছরের মৃত মেয়েকে সেই গোল উৎসর্গ করেন। সে দিন ৭১ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে হরমনজ্যোৎ সিং খাবরার হাওয়ায় ভাসানো বল সোজা ইস্টবেঙ্গলের ইনসাইড বক্সের মাথায় গিয়ে ল্যান্ড করে, যেখানে ছিলেন লুনা। তিনি সেই গতিময় বল পা ছুঁইয়ে জালে জড়িয়ে দেন। গত মরসুমেও তিনি ব্লাস্টার্সের সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন ছ’টি গোল করে ও সাতটি করিয়ে।
এ বার প্রথম ম্যাচেই গোলের খাতা খুলে ফেলেছেন উরুগুয়ে থেকে আসা ৩০ বছর বয়সী এই ফুটবলার। এ বছর এপ্রিলে তাঁর ছ’বছরের মেয়ে জুলিয়া তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তার পর থেকে ডান হাতের বাহুতে মেয়ের মুখের ট্যাটু করেছেন। সে দিন গোল করে সেই সবাইকে সেই ট্যাটু দেখাতে দেখাতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি লুনা। এ বারের মরশুমেও সফল হলে হয়তো সেই সাফল্য মৃত সন্তানকেই উৎসর্গ করবেন তিনি।
মনবীর সিং (ফরোয়ার্ড, এটিকে মোহনবাগান)
সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের আক্রমণ বিভাগে মনবীর সিং’ই যে এ বার হতে চলেছেন অন্যতম সেরা অস্ত্র, তা তিনি প্রথম ম্যাচে ইঙ্গিত দিয়েছেন এক অসাধারণ গোল করে। যদিও সেই গোল সে ভাবে কাজে লাগেনি তাঁর দলের। কিন্তু যে গোল সেদিন করেন, তাতে বোঝা গিয়েছে, দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামা অস্ট্রেলীয় ফুটবলার দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের সঙ্গে একটা ভাল বোঝাপড়া ক্রমশ গড়ে উঠছে তাঁর। সে দিন ম্যাচের ২৭ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠের এ পার থেকে ব্যাকহিল করে হুগো বুমৌস বল বাড়ান মনবীরকে।
তিনি হাফলাইনের ওপারে ডানদিকে পেট্রাটসকে বল দেন। শেষে গোলের পাসটা ডানদিক থেকে মনবীরকে দেন অস্ট্রেলিয়ানই এবং বাঁ দিক দিয়ে ওঠা মনবীর বক্সে ঢুকে নিখুঁত কোণাকুনি শট নেন গোলে। গত মরশুমে ২২ ম্যাচে হাফ ডজন গোল করেছিলেন মনবীর। একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন। তবে গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন অজস্র। প্রথম ম্যাচে তাঁর খেলা দেখে মনে হচ্ছে এ বার সেই দোষ কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। রবিবার আরও গোল করেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সমর্থকেরা।