২০২২ সালের এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় করুণ নায়ার (Karun Nair) লিখেছিলেন, ‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা চান্স দাও!’ সেই টুইট এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর সেই লেখার শব্দগুলো ছিল তাঁর মনের গভীর যন্ত্রণা আর অব্যক্ত ভালোবাসার প্রতিধ্বনি। সেদিনই কর্নাটকের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছিলেন করুণ। জাতীয় দলে জায়গা হারানোর কষ্ট তো ছিলই, তার ওপর ডোমেস্টিক ক্রিকেট থেকেও নাম মুছে যাওয়ার খবর যেন তাকে আরও ভেঙে দিয়েছিল। ক্রিকেট যে তাঁর জীবনের ভালোবাসা, সেটাই হয়তো করুণ তখন শব্দে বন্দি করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু ক্রিকেটের গল্পগুলো সহজে শেষ হয় না। সময় পেরিয়ে গেল দুটো বছর। সেই হারিয়ে যাওয়া করুণ যেন জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করলেন বিজয় হাজারে ট্রফি ২০২৪/২৫-এ।
কর্ণাটককের দল থেকে বাদ পড়ার পর বিদর্ভের হয়ে খেলে ৭ ইনিংসে ৭৫২ রান করেছেন করুন। গড়— ৭৫২.০০। পাঁচটা সেঞ্চুরি। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, এটা এক লড়াইয়ের গল্প। প্রত্যাখ্যান, বেদনা আর হারানোর যন্ত্রণা বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখে করুণ নেমেছিলেন নতুন যুদ্ধে। আর সেই যুদ্ধের মঞ্চে তার ব্যাট কথা বলেছে। প্রতিটা রান যেন তার হৃদয়ের কথা, প্রতিটা সেঞ্চুরি তার সাহস আর প্রতিজ্ঞার প্রতিচ্ছবি।
সেমিফাইনালে ৪৪ বলে ৮৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে করুণ যেন শুধু রান করেননি, নিজের গল্পটা আরও বড় করে তুলেছেন। যাঁরা একদিন তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলেছিলেন, তাঁদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর উত্তর দিয়েছেন তিনি।
করুণের সেই ট্যুইটটা এক গভীর প্রেমপত্র। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, তাঁর মনের আকুতি, সবকিছু এক সুতোর মধ্যে গেঁথে দিয়েছিল সেই লাইন। কিন্তু এই প্রেম একতরফা নয়। ক্রিকেটও করুণকে ভালোবাসে। তাই তো দু’বছর পর আবার তাকে ডেকে বলেছে, “ফিরে এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
করুণের জীবন থেকে আমাদের শেখায়,জীবনে যতই বাঁধা আসুক, ততবারই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হয়। ব্যর্থতা জীবনের অঙ্গ, কিন্তু সেটাকে সাফল্যের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়াই আসল সাহস। করুণ প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন দেখার সাহস আর পরিশ্রম থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
আজ করুণ নায়ারের নাম শুধু পরিসংখ্যানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আমাদের চোখে এক নতুন ভোরের প্রতিশ্রুতি। জাতীয় দলে জায়গা হয়তো এখনও তাঁর কাছে দূরের স্বপ্ন, কিন্তু তাঁর ব্যাট যেন বলে, “স্বপ্ন দেখো, স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার সাহস রাখো।”
ক্রিকেট সুন্দর, কারণ এই খেলায় হারের পরও ফিরে আসার সুযোগ থাকে। আর করুণ নায়ারের গল্প তারই প্রমাণ। ব্যর্থতা আর প্রত্যাখ্যানের পরেও তিনি ভালোবেসেছেন ক্রিকেটকে। আর এই ভালোবাসা তাঁকে আবার দাঁড় করিয়েছে।করুণের কাহিনি আমাদের বলে দেয়, প্রতিটা স্বপ্নই একদিন বাস্তব হতে পারে, যদি তুমি লড়ে যাও। প্রশ্ন অন্য জায়গায়, ‘ও গান ওলা আরেকটা গান গাও’-গানের লাইনের মতো করুণ-এর র ব্যাট যখন আরও একবার গান গাইছে তবে কি একটা ছোট হলেও কামব্যক হবে জাতীয় দলে?