ভারতীয় (Indian Cricket Team) টেস্ট ক্রিকেটের (Test Cricket) ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) টেস্ট থেকে অবসরের পর ভবিষ্যতের জন্য দল গঠনের বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI)। বিশেষ করে বিরাট কোহলির মতো একজন বিশ্বমানের ব্যাটারের জায়গা পূরণ করা যে সহজ হবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে নির্বাচকরা ও কোচিং স্টাফ এখন করুণ নায়ারের (Karun Nair) ওপর ভরসা রাখতে শুরু করেছেন। ৮ বছর পর প্রত্যাবর্তন করে করুণ যেন সেই বিশ্বাসের যথার্থ মূল্য দিয়েছেন ভারত ‘এ’ দলের হয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে।
সম্প্রতি ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে করুণ নায়ার খেলেছেন এক অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস। ২০৪ রানের এই ইনিংস ছিল নিখুঁত পরিকল্পনা, ধৈর্য ও নিখুঁত ব্যাটিং কৌশলের এক অপূর্ব নিদর্শন। ইনিংসে ছিল ২৬টি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারি। শুরুটা কিছুটা ধীরে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের ছন্দে ফিরেছেন করুণ। ব্যক্তিগত ৮৯ রানে একবার স্লিপে ক্যাচ উঠেছিল, তবে সেটি ফসকে যাওয়ার পর আর প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ দেননি তিনি।
এটি ছিল করুণ নায়ারের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কেরিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি। এর মধ্যে একটি অবশ্যই স্মরণীয়—২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে করা ৩০৩ রানের ইনিংস। সেই ইনিংস তাঁকে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছিল। ভারতের হয়ে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন করুণ। এরপর অবশ্য দীর্ঘদিন জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। তবে এবার তিনি যেন নতুন উদ্যমে ফিরে এসেছেন।
গত সিজনে করুণ নায়ার ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন। সেখানেও তাঁর পারফরম্যান্স নজরকাড়া ছিল— প্রায় ৫০০ রান করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর এই ইনিংসে স্পষ্টভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে। ইংল্যান্ডের পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও পরিণত করেছে বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়ে ভারতীয় টেস্ট দলের নতুন দিশা খোঁজা হচ্ছে। গম্ভীর বরাবরই প্রতিভা ও ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দেন। করুণ নায়ারকে টেস্ট দলে জায়গা দেওয়ার পেছনে গম্ভীরেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত ‘এ’ দলের হয়ে এই ইনিংস করুণের আত্মবিশ্বাস যে কতটা বাড়াবে, তা বলাই বাহুল্য। বিরাট কোহলির জায়গা পূরণ করা হয়তো অসম্ভব, তবে করুণ নায়ার অন্তত সেই জায়গার দাবিদার হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে শুরু করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন প্রতিভাবান ব্যাটারদের সুযোগ দেওয়ার সময় এসেছে, যাঁরা পরিশ্রম, ধৈর্য এবং বড় ম্যাচে পারফর্ম করার মানসিকতা রাখেন।
ভারতের আসন্ন ইংল্যান্ড সফরে করুণ নায়ার যদি মূল দলে সুযোগ পান, তবে সেটি তাঁর কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার মতোই হবে। তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নির্বাচকদের ভাবনায় রেখেছে তাঁকে। যদি সুযোগ পান, তবে এই করুণ নায়ার হয়তো নিজেকে আর একবার প্রমাণ করবেন এবং হয়তো এই প্রশ্নের জবাবও দেবেন— বিরাট কোহলির বিকল্প কি ভারত পেয়েছে?
প্রতিভা কখনও হারিয়ে যায় না। সময় দিলে, সুযোগ দিলে আবার জ্বলে ওঠে। করুণ নায়ার তার বড় উদাহরণ। এখন শুধু অপেক্ষা, জাতীয় দলের জার্সিতে এই ফর্মকে কীভাবে তিনি কাজে লাগান।