জাতীয় গেমসে সোনা জয় বাংলার “রত্ন” জুয়েলের

৩৮ তম জাতীয় গেমসে একটি বিশেষ মাইলফলক স্থাপন করলেন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার গাজোল ব্লকের কৃষক পরিবারের সন্তান, তীরন্দাজ জুয়েল সরকার (Juyel Sarkar)। তিনি এবার ৩৮…

Juyel Sarkar Wins Gold at National Games

short-samachar

৩৮ তম জাতীয় গেমসে একটি বিশেষ মাইলফলক স্থাপন করলেন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার গাজোল ব্লকের কৃষক পরিবারের সন্তান, তীরন্দাজ জুয়েল সরকার (Juyel Sarkar)। তিনি এবার ৩৮ তম জাতীয় গেমসে বাংলাকে সপ্তম সোনাটি এনে দিলেন, যা বাংলার ক্রীড়াজগতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে।

   

জুয়েল সরকারের এই সোনার পদকটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি এমন একটি পরিবার থেকে আসেন, যেখানে কৃষি ছিল প্রধান পেশা এবং ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল কম। তবে, তার কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফলস্বরূপ তিনি আজ জাতীয় স্তরে সোনা জিতেছেন। তার সাফল্যের পিছনে ছিল ঝাড়গ্রামের বেঙ্গল আর্চারি আকাদেমির অবদান, যা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই আকাদেমিতে ২০১৮ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। আর সেই কঠোর পরিশ্রমের ফল এখন জাতীয় গেমসে সোনা জয়ের মাধ্যমে উঠে এসেছে।

বর্তমানে, এই আকাদেমি পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়াবিশ্বে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং তার শিক্ষার্থীরা দেশের অন্যান্য অংশে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করছেন। প্রধানত, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নজরদারিতে, ঝাড়গ্রামের বেঙ্গল আর্চারি আকাদেমি এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছে যেখানে দেশের সেরা তীরন্দাজরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

জাতীয় গেমসে সোনার পদক জয়ী জুয়েল সরকার শুধুমাত্র নিজের জেলা কিংবা রাজ্যের জন্য গর্বের বিষয় নয়, বরং পুরো দেশ তাঁর এই সাফল্যে গর্বিত। তার কৃতিত্ব শুধু একটি পদক জয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি প্রতিভার উদাহরণ। তার লক্ষ্য এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চ, বিশেষত অলিম্পিক্সের দিকে। দেশের ক্রীড়া মহল আশাবাদী যে, জুয়েল সরকার অলিম্পিক্স থেকেও পদক জিতবেন এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন।

এছাড়াও, জাতীয় গেমসে অন্যান্য তীরন্দাজরা যেমন সার্ভিসেস স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ডের ইন্দ্র চাঁদ ইন্দ্র এবং অভিজ্ঞ অলিম্পিয়ান তরুণদীপ রাইও নিজেদের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। ইন্দ্র চাঁদ ইন্দ্র রূপো জিতেছেন, আর তরুণদীপ রাই ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছেন। এই সমস্ত ক্রীড়াবিদদের একত্রিত পারফরম্যান্স দেশের ক্রীড়াবিশ্বে নতুন এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।

এখন, জাতীয় গেমসে পশ্চিমবঙ্গের পদক সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তারা ৭টি সোনা, ৫টি রূপো, এবং ৮টি ব্রোঞ্জ সহ মোট ২০টি পদক নিয়ে পদক তালিকায় ১২ নম্বরে অবস্থান করছে। সার্ভিসেস স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ড শীর্ষে রয়েছে, তবে পশ্চিমবঙ্গের পদক অর্জন আশা ও উৎসাহ জাগিয়েছে। কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্র যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়াজগতে এই সাফল্যগুলি শুধু একমাত্র জুয়েল সরকারের কৃতিত্ব নয়, বরং এক একটি সাফল্যের গল্প, যা প্রমাণ করে যে, মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনও পরিস্থিতি থেকে সাফল্য অর্জন সম্ভব। এই জয় বাংলার ক্রীড়া মহলকে একটি নতুন উৎসাহ দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো অনেক ক্রীড়াবিদ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনুপ্রাণিত হবে।

এখন সময় এসেছে আরও অনেক ক্রীড়াবিদদের উঠে আসার, যাদের মধ্যে জুয়েল সরকারের মতো অবিচল পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা রয়েছে। তাঁর এই সোনার পদক শুধুমাত্র একক সাফল্য নয়, এটি সমস্ত বাংলা তথা ভারতের ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রেও বাঙালি ক্রীড়াবিদরা নিজেদের কৃতিত্বের ছাপ রেখে যাচ্ছে, কিন্তু জুয়েল সরকারের মতো প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের সাফল্য আগামী দিনের ক্রীড়া ইতিহাসে আলোচিত হবে। তাঁর অর্জন প্রমাণ করেছে, যদি সুযোগ এবং সঠিক প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়, তবে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকেই বিশ্বমঞ্চে পৌঁছানো সম্ভব।