ভারতের কনিষ্ঠ দলগুলোর (Indian Football Team) কোচ হিসেবে বিবিয়ানো ফার্নান্দেজের (Bibiano Fernandes) সময়টা ছিল অত্যন্ত সফল। তার কোচিংয়ের সময়েই ভারত একেবারে এক ধাপ দূরে ছিল ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে (FIFA U-17 World Cup) খেলার থেকে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে এক রোমাঞ্চকর কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ০-১ গোলে হেরে ভারতের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল।
তবে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা হওয়াই তার লক্ষ্য নয়, বরং বিশ্ব মঞ্চে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্নই বুকে পুষে রেখেছেন বিবিয়ানো। সম্প্রতি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা স্বপ্নটা পূরণ করতে পারি। তখন আমি সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, আর আমাদের দল এক ধাপ দূরে ছিল বিশ্বকাপ থেকে। এখন আমাদের যুব কাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। অনেক বেশি ম্যাচ খেলা হচ্ছে, আর RDFL-অর্থাৎ রিলায়েন্স ডেভেলপমেন্টাল ফুটবল লিগ সাহায্যও অনেক। তবে আরও অনেক কিছু করা বাকি।”
সম্প্রতি সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। মাত্র দুই মাস আগে জাতীয় দলের দায়িত্বে ফিরে আসেন বিবিয়ানো, বেঙ্গালুরু এফসির কোচিং ছাড়ার পর। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রথমে মনে হয়েছিল কাজটা কঠিন হবে, কারণ সময় খুব কম ছিল। কিন্তু ছেলেদের প্রতিভা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।”
এই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই আইএসএল দলের সঙ্গে যুক্ত এবং সিনিয়র দলের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করছে। এর ফলেই তারা আন্তর্জাতিক স্তরের পারফরম্যান্স দিতে পেরেছে বলে মত বিবিয়ানোর। “আমি সত্যিই আশা করিনি যে তারা এত ভালো খেলবে,” বলেন তিনি।
অরুণাচল প্রদেশের ইয়ুপিয়ার গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে বিপুল সংখ্যক সমর্থকদের উপস্থিতিও দলের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেছে। এই সমর্থনই ভবিষ্যতে বড় প্রতিযোগিতার জন্য দলকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
এখন ভারতের লক্ষ্য আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য AFC অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব। তার আগেই আবার বিবিয়ানো মনোযোগ দিচ্ছেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলের দিকে, যাদের সামনে রয়েছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং নভেম্বরে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব।
ভারত ২০১৭ সালে ঘরের মাঠে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে অংশ নেয়। কিন্তু তারপর আর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। বিবিয়ানোর অধীনে ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে একদম কোয়ার্টার ফাইনালে থেমে যেতে হয়। সেই অপূর্ণ কাজটা শেষ করতেই তিনি আবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
“আমরা খুব কাছে পৌঁছেছিলাম,” স্মরণ করেন তিনি। “আমরা এখন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের কথা ভাবতে পারি, আর ধীরে ধীরে সেখান থেকে সিনিয়র দলও বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখতে পারে।”
ভারতের সিনিয়র পুরুষ দল বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৭ নম্বরে রয়েছে। এই বাস্তবতায় স্পষ্ট যে, শুধুমাত্র ঘরোয়া লীগ নয়, বরং শৈশব পর্যায় থেকেই বিনিয়োগ করাটাই হবে ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।
বিবিয়ানোর মতে, “আমাদের প্রতিটি অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য নিয়ে নামতে হবে। ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করলে আগামী ৬-৭ বছরের মধ্যে আমরা নিয়মিত বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারব।”
এই স্বপ্ন শুধু একটি দলের নয়, পুরো দেশের। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হলে এখনই সঠিক বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার প্রয়োজন। বিবিয়ানো এবং তার ছেলেরা হয়তো সেই পরিবর্তনের সূচনা করে দিয়েছেন।