২৩ জুলাই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ১৩৪ তম ডুরান্ড কাপের (Durand Cup 2025) পর্দা উঠেছে এক বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রথম দিনেই ইস্টবেঙ্গল এফসি তাদের আধিপত্য দেখিয়ে পাঁচ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে সাউথ ইউনাইটেড এফসিকে। আর দ্বিতীয় দিনেই গ্রুপ ‘সি’-র প্রথম ম্যাচে উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দিল জামশেদপুর এফসি ও নেপালের ত্রিভুবন আর্মি এফসি। ম্যাচে দু’বার সমতায় ফিরেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি ত্রিভুবন। খালিদ জামিলের কোচিংয়ে ৩-২ ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে জামশেদপুর।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় নামে জামশেদপুর এফসি। ম্যাচের ৬ মিনিটেই গোলের খাতা খোলে তারা। প্রণয় হালদারের লম্বা থ্রো থেকে বল পেয়ে টাচে নিখুঁত শটে বল জালে পাঠান সার্থক গোলুই। গোটা মাঠ তখন উল্লাসে ফেটে পড়ে।
ত্রিভুবন আর্মির পক্ষে ম্যাচে ফেরার প্রথম সুযোগ আসে ১৫ মিনিটে। দীনেশ একা গোলমুখে পৌঁছলেও কাজ শেষ করতে পারেননি। ১৮ মিনিটে আবার সুযোগ আসে তাঁর সামনেই, কিন্তু এইবার গোললাইন থেকে সেভ করেন জামশেদপুর গোলরক্ষক। এর মাঝেই ১৬ মিনিটে জামশেদপুরের ডিফেন্ডার আশুতোষ মেহেতা হলুদ কার্ড দেখেন এক কঠিন ফাউলের জন্য।
২৫ মিনিটে আবার গোলের সুযোগ নষ্ট করেন জামশেদপুর। নিশু কুমারের শট বাঁচান ত্রিভুবনের গোলকিপার, সেই ফিরতি বল নিয়ে দীনেশ জামশেদপুর বক্সে ঢুকে পাস বাড়ান অধিনায়ক জর্জ প্রিন্স কারকিকে, যিনি কোনও ভুল না করে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান (১-১)।
৩১ মিনিটে আবার নাটকীয় ভাবে ম্যাচের রাশ নিজের হাতে তুলে নেয় জামশেদপুর। মাঝমাঠ থেকে জয়েশ রানে পাস বাড়ান ভিন্সি ব্যারেটোর দিকে, তিনি ওভারল্যাপিং মনবীর সিংকে বল বাড়িয়ে দেন। মনবীর দারুণ ফিনিশে দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে নতুন ছকে দল নামান কোচ খালিদ জামিল। জামশেদপুর দল কখনো রক্ষণে তো কখনো হঠাৎ আক্রমণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ম্যাচের ৫১ মিনিটে সানান গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও আবার বল পোস্টে মারেন। ম্যাচে এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় পোস্ট হিট।
A winning start at home! 🏟️🔥
Jamshedpur FC edge past Tribhuvan Army FT with a thrilling 3-2 win in front of a packed stadium. Goals from Sarthak, Manvir, and super-sub Nikhil Barla seal all three points.
[Jam Ke Khelo, Durand Cup 2025, Jamshedpur, Men Of Steel] pic.twitter.com/ujeP696pAC
— Jamshedpur FC (@JamshedpurFC) July 24, 2025
৬৩ মিনিটে সমতা ফেরায় ত্রিভুবন। আনান্ত তামাং দূরপাল্লার শটে অসাধারণ একটি গোল করেন। কলকাতা ময়দানের পরিচিত মুখ আনান্ত এক সময় খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের হয়েও। তাঁর সেই গোল মুহূর্তেই চমকে দেয় জামশেদপুরের রক্ষণভাগকে।
তবে এই সমতা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি।
৬৮ মিনিটে মাঠে নামানো হয় ভারতীয় অনূর্ধ্ব-২৩ দলের মিডফিল্ডার নিখিল বার্লাকে। মাঠে নেমে মাত্র ২ মিনিটের মধ্যেই ৭০ মিনিটে গোল করে নিজের উপস্থিতি জানান দেন তিনি। এটি ছিল তাঁর জামশেদপুরের হয়ে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক গোল। তাঁর এই গোলেই ফের এগিয়ে যায় ইস্পাত নগরীর ক্লাব।
ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোলের আরও একটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন মনবীর সিং। তবে গোটা ম্যাচে এক গোল এবং অসাধারণ খেলার সুবাদে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর পুরস্কার জিতে নেন তিনি।
এই ম্যাচে জামশেদপুরের রক্ষণভাগ কখনো কখনো ছন্দপতন ঘটালেও, মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগে দল যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। বিশেষ করে জয়েশ, ভিন্সি এবং মনবীরের কম্বিনেশন ছিল চোখে পড়ার মতো। জামিলের পরিকল্পনা অনুযায়ী বার বার পজিশন বদল এবং ডান-হাফ স্পেস ব্যবহার করে ত্রিভুবনের রক্ষণ বিভ্রান্ত করেছে জামশেদপুর।
অন্যদিকে, ত্রিভুবন আর্মি এফসি দুর্দান্ত লড়াই দিয়েছে। তাদের দুই গোলই ছিল চমৎকার। আনান্ত তামাংয়ের গোল নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।