জামশেদপুর এফসির (Jamshedpur FC) প্রথমবারের মতো সুপার কাপ ফাইনালে (Super Cup Final) ওঠার ঐতিহাসিক যাত্রার মূল চাবিকাঠি ছিল দলের মিডফিল্ডের দাপুটে পারফরম্যান্স। সেই মাঝমাঠের কাণ্ডারী হিসেবে রেই তাচিকাওয়া (Rei Tachikawa) হয়ে উঠেছেন দলের সাহস ও স্থিরতার প্রতীক। কোচ খালিদ জামিল (Khalid Jamil) ম্যাচের আগে যে বার্তা দিয়েছিলেন, “নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলো” — তা যেন মন্ত্র হয়ে আত্মস্থ করেছিলেন এই জাপানি মিডফিল্ডার।
রেই বলেন, “ম্যাচের আগে কোচ আমাকে শুধু বলেছিলেন, তোমার স্বাভাবিক খেলা খেলো। হ্যাঁ, কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল, কিন্তু তিনি আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাস দিয়েছিলেন। ওটাই আমার স্থিরতা ও মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। আমি বিশ্বাস করি, যখন তুমি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, নিজের খেলার ধারা মেনে চলো, তখন ভালো কিছুই হয়।”
এই আত্মবিশ্বাস এবং স্থির মানসিকতার প্রতিফলন দেখা গেছে সেমিফাইনালে, যেখানে তাচিকাওয়া শুধু খেলার ছন্দ নির্ধারণই করেননি, বরং ম্যাচের ৮৭তম মিনিটে গোল করে নিশ্চিত করে দেন জামশেদপুরের ফাইনালে জায়গা। তবে গোল করা নয়, বরং দলের সম্মিলিত পারফরম্যান্সকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে তিনি জানান, “গোল করে দারুণ লেগেছে, কিন্তু তার থেকেও বেশি গর্বিত দলের পারফরম্যান্সে। আমরা একাধিক সুযোগ তৈরি করেছি, আরও ২-৩টা গোল হতে পারতো। প্রত্যেকে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে, এবং সেই সম্মিলিত প্রয়াসটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।”
মাঠে নিজের ভূমিকা নিয়ে রেই বলেন, “আমি সবসময়ই চেষ্টা করি মাঝমাঠে জায়গা তৈরি করতে, কারণ এমন কঠিন ম্যাচে মিডফিল্ডই ছিল মূল লড়াইয়ের জায়গা। গরম এবং টানা খেলার কারণে বলের নিয়ন্ত্রণ এবং খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি একদিকে ডিফেন্ডারদের সাহায্য করেছি, অন্যদিকে সুযোগ বুঝে এগিয়ে গিয়েছি।”
তাচিকাওয়ার এই নেতৃত্ব ফলেই জামশেদপুর এফসি তাদের প্রতিপক্ষদের তুলনায় মাঠে আধিপত্য দেখিয়েছে। পাসিং, পজিশনিং এবং ম্যাচ রিডিংয়ের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন কেন তিনি দলের প্রাণকেন্দ্র।
৩ মে ভুবনেশ্বরের কালিঙ্গ স্টেডিয়ামে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে নামবে জামশেদপুর এফসি। ম্যাচের আগে রেই তাচিকাওয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দল কোনও অজুহাত দিতে রাজি নয়। “আমরা জানি, এই ফাইনাল কঠিন হবে। গরম, টানা ম্যাচ — সবই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এটা আমাদের শেষ লড়াই, শেষ নাচ এই মরশুমে। আমরা সবকিছু উজাড় করে দেব। কোনও অজুহাত নয়। আমরা একসঙ্গে লড়াই করব, একটাই দল হিসেবে।”
এই মানসিকতাই দেখাচ্ছে যেন জামশেদপুর এফসি আজ দেশের সেরা দলগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। একদিকে অভিজ্ঞ কোচ খালিদ জামিলের কৌশল, অন্যদিকে রেই তাচিকাওয়ার মাঠের মস্তিষ্ক হয়ে ওঠা — এই সংমিশ্রণই তাদের এনে দিয়েছে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত।