ISL youngest players: কমবয়সী ফুটবলাররা আইএসএল-এ রেকর্ড গড়ছে

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি প্রতিভা উন্মোচনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই লিগে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু কিশোর প্রতিভা তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের…

ISL’s Youngest Ever Players

short-samachar

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি প্রতিভা উন্মোচনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই লিগে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু কিশোর প্রতিভা তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, পাঞ্জাব এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি এবং ইস্ট বেঙ্গল এফসি-এর মতো ক্লাবগুলো তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে উদারতা দেখিয়েছে। প্রতি মরশুমে আইএসএল আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে, এবং তরুণ প্রতিভাদের উত্থান ভারতীয় ফুটবলের সামগ্রিক মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। এখানে আমরা আইএসএল-এর ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী পাঁচজন খেলোয়াড়ের তালিকা তুলে ধরছি।

   

৫. কোমল থাটাল (১৭ বছর, ১৩২ দিন) – এটিকে
তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছেন কোমল থাটাল, যিনি ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি এটিকে (বর্তমানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট) ক্লাবের হয়ে আইএসএল-এ অভিষেক করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর এবং ১৩২ দিন। একসময় ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল প্রতিভা হিসেবে বিবেচিত থাটাল ২০১৭ সালে ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলেছিলেন। তাঁর গতি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা তাঁকে তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে আলাদা করে দিয়েছিল।

তবে, আইএসএল-এ তিনি সীমিত সুযোগ পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি চেন্নাইয়িন এফসি-র যুব দলে খেলছেন। থাটাল এখনও তাঁর সম্ভাবনা পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেননি, তবে তাঁর অভিষেক ভারতীয় ফুটবলে তরুণদের সম্ভাবনার একটি উদাহরণ হয়ে রয়েছে।

৪. কোরো সিং (১৭ বছর, ১২৫ দিন) – কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি
তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কোরো সিং, যিনি ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র হয়ে আইএসএল-এ অভিষেক করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর এবং ১২৫ দিন। তরুণ প্রতিভা উন্মোচনে পরিচিত কেরালা ব্লাস্টার্স তাঁদের ভিশনের আরেকটি প্রমাণ দিয়েছে সিং-এর অভিষেকের মাধ্যমে।

সিং-এর গতি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা তাঁকে ভবিষ্যতের একটি সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই মরশুমে তিনি ১৪টি ম্যাচে পাঁচটি গোল অবদান রেখেছেন, যা তাঁর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। কেরালা ব্লাস্টার্সের ভক্তরা আশা করছেন, সিং আগামী বছরগুলোতে দলের মূল খেলোয়াড় হয়ে উঠবেন।

৩. বিশাল যাদব (১৭ বছর, ৪৩ দিন) – পাঞ্জাব এফসি
তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিশাল যাদব, যিনি ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব এফসি-র হয়ে আইএসএল-এ অভিষেক করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর এবং ৪৩ দিন, যা তাঁকে লিগের ইতিহাসে তৃতীয় কমবয়সী খেলোয়াড় করে তুলেছে। এই তরুণ প্রতিভা পাঞ্জাব এফসি-র যুব দলের প্রতি আস্থার প্রতীক।

যাদব তাঁর অভিষেক ম্যাচে ১০ মিনিটের একটি ক্যামিও খেলেন, যা ক্লাবগুলোর তরুণ প্রতিভার ওপর বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। পাঞ্জাব এফসি-র সমর্থকরা আশা করছেন, যাদব ভবিষ্যতে দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠবেন। তাঁর এই অভিষেক ভারতীয় ফুটবলের উদীয়মান তারকাদের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে।

২. ভ্যানলালপেকা গুইতে (১৬ বছর, ৩৩৭ দিন) – ইস্ট বেঙ্গল এফসি
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ভ্যানলালপেকা গুইতে, যিনি ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইস্ট বেঙ্গল এফসি-র হয়ে আইএসএল-এ অভিষেক করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর এবং ৩৩৭ দিন। এই কম বয়সে অভিষেক তাঁকে লিগের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ তরুণ প্রতিভা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ভ্যানলালপেকা গুইতে চটুলতা, ড্রিবলিং দক্ষতা এবং বলের ওপর আত্মবিশ্বাস তাঁকে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাঁর এই অভিষেক ইস্ট বেঙ্গলের যুব প্রতিভা লালনের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। এই তরুণ খেলোয়াড় আগামী দিনে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে ভক্তরা আশাবাদী।

১. আলফ্রেড লালরোতসাং (১৬ বছর, ২৩৯ দিন) – নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি
আইএসএল-এর ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন আলফ্রেড লালরোতসাং। তিনি ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র হয়ে অভিষেক করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর এবং ২৩৯ দিন। এই তরুণ মিডফিল্ডারের অভিষেক ক্লাবের যুব উন্নয়ন ব্যবস্থার ওপর আস্থার প্রতিফলন।

লালরোতসাং তাঁর অভিষেক ম্যাচে ৯ মিনিট খেলেন এবং দুর্দান্ত স্থিরতা ও সম্ভাবনা প্রকাশ করেন। তিনি ভারতীয় ফুটবলের শীর্ষ বিভাগে অভিষেককারী সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তাঁর এই কীর্তি অন্যান্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

আইএসএল-এ তরুণ প্রতিভার উত্থান
আইএসএল ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতীয় ফুটবলের প্রতিভা উন্মোচনের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। এই লিগে তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। নর্থইস্ট ইউনাইটেড আলফ্রেড লালরোতসাং-এর মাধ্যমে যুব প্রতিভার প্রতি আস্থা দেখিয়েছে। পাঞ্জাব এফসি বিশাল যাদবকে মাঠে নামিয়ে তাদের যুব বিনিয়োগের প্রমাণ দিয়েছে। কেরালা ব্লাস্টার্স কোরো সিং-এর মতো তরুণদের উৎসাহিত করছে, আর ইস্ট বেঙ্গল গুইটে ভানলালপেকার মাধ্যমে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে।

এই তরুণরা শুধু অভিষেকই করেনি, তারা সম্ভাবনাও দেখিয়েছে। কোমল থাটাল গোল করে আইএসএল-এর সবচেয়ে কমবয়সী গোলদাতা হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। কোরো সিং এই মরশুমে গোল অবদান রেখে তাঁর দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। এই প্রতিভারা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করছে।

ভারতীয় ফুটবলের জন্য তাৎপর্য
আইএসএল-এ তরুণদের উত্থান ভারতীয় ফুটবলের মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই তরুণরা জাতীয় দলের জন্য একটি শক্তিশালী পাইপলাইন তৈরি করছে। ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া থাটাল এবং সিং-এর মতো খেলোয়াড়রা দেখিয়েছে যে, ভারতের যুব প্রতিভারা বিশ্ব মঞ্চে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

ক্লাবগুলোর যুব উন্নয়নের প্রতি আগ্রহ ভারতীয় ফুটবলের গ্রাসরুট স্তরকে শক্তিশালী করছে। আইএসএল-এর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তরুণদের দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, ভারতীয় ফুটবল আগামী দিনে আরও উন্নতি করবে।

ভক্তদের প্রত্যাশা
আইএসএল ভক্তরা এই তরুণদের কাছ থেকে বড় কিছু আশা করছেন। থাটাল, সিং, যাদব, ভানলালপেকা এবং লালরোতসাং-এর মতো খেলোয়াড়রা ভবিষ্যতে তাদের ক্লাব এবং জাতীয় দলের মূল শক্তি হয়ে উঠতে পারেন। তাদের এই শুরু ভারতীয় ফুটবলের একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
আইএসএল-এর মঞ্চে এই তরুণরা যে পথচলা শুরু করেছে, তা ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। তাদের প্রতিভা এবং সম্ভাবনা ভারতকে বিশ্ব ফুটবলে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।