গোলের জাদুকর! আইএসএলে গোল্ডেন বুট জয়ীদের ইতিহাস

ISL Golden Boot Winners: গোল করা সহজ মনে হলেও, পুরো মরশুম ধরে ধারাবাহিকভাবে গোলের জালে বল পাঠানো একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। এর জন্য প্রয়োজন অটুট নিষ্ঠা,…

ISL Golden Boot Winners

ISL Golden Boot Winners: গোল করা সহজ মনে হলেও, পুরো মরশুম ধরে ধারাবাহিকভাবে গোলের জালে বল পাঠানো একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। এর জন্য প্রয়োজন অটুট নিষ্ঠা, অক্লান্ত পরিশ্রম, কঠোর শৃঙ্খলা এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) গোল্ডেন বুট বিজয়ীরা এই গুণগুলির মাধ্যমে অন্যান্য গোলদাতাদের থেকে নিজেদের আলাদা করেছেন। প্রতি মরশুমে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে দেওয়া গোল্ডেন বুট পুরস্কারটি একজন স্ট্রাইকারের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক। আইএসএল-এর ইতিহাসে এই পুরস্কারের দৌড়ে দেখা গেছে তীব্র প্রতিযোগিতা। চলুন, আইএসএল-এর সকল গোল্ডেন বুট বিজয়ীদের গল্প জেনে নেওয়া যাক।

২০১৪ – এলানো ব্লুমার (চেন্নাইয়িন এফসি) – ১১ ম্যাচে ৮ গোল
আইএসএল-এর প্রথম মরশুমে ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের তারকা এলানো ব্লুমার চেন্নাইয়িন এফসি-র হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। মাত্র ১১ ম্যাচে ৮ গোল করে তিনি দলকে লিগ টেবিলের শীর্ষে এবং সেমিফাইনালে নিয়ে যান। তার দক্ষতা এবং নেতৃত্বে চেন্নাইয়িন এফসি মাঠে দাপট দেখায়। ২০১৬ সালে দুই বছরের সফর শেষে এলানো ক্লাব ছাড়েন। কিন্তু তার অবদান চিরস্মরণীয়।

   

২০১৫ – স্টিভেন মেন্দোজা (চেন্নাইয়িন এফসি) – ১৬ ম্যাচে ১৩ গোল
চেন্নাইয়িন এফসি-র আরেক তারকা স্টিভেন মেন্দোজা ২০১৫ মরশুমে মাঠ কাঁপিয়েছিলেন। ১৬ ম্যাচে ১৩ গোল করে তিনি দলকে প্রথম আইএসএল কাপ জিতিয়েছিলেন। ফাইনালে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে তার স্টপেজ টাইম গোল ছিল মরশুমের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত। এই কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার ২০১৬ সালে ক্লাব ছাড়েন। কিন্তু তার গোলের জাদু আজও ভক্তদের মনে রয়েছে।

২০১৬ – মার্সেলো পেরেইরা (দিল্লি ডায়নামোজ) – ১৫ ম্যাচে ১০ গোল
মার্সেলিনহো নামে পরিচিত ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড তার প্রথম আইএসএল মরশুমেই ১০ গোল ও ৫ অ্যাসিস্ট করে দিল্লি ডায়নামোজকে টানা দ্বিতীয়বার সেমিফাইনালে নিয়ে যান। তার বহুমুখী খেলার ধরন এবং গোলস্কোরিং ক্ষমতা কোচ, বিশ্লেষক এবং খেলোয়াড়দের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

২০১৭/১৮ – ফেরান কোরোমিনাস (এফসি গোয়া) – ২০ ম্যাচে ১৮ গোল
‘কোরো’ নামে পরিচিত ফেরান কোরোমিনাস তার প্রথম মরশুমেই এফসি গোয়ার সমর্থকদের মন জয় করেন। ২০ ম্যাচে ১৮ গোল করে তিনি দলের আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দেন। কোচ সার্জিও লোবেরার অধীনে তার খেলা ছিল নিখুঁত সমন্বয়ের উদাহরণ।

২০১৮/১৯ – ফেরান কোরোমিনাস (এফসি গোয়া) – ২০ ম্যাচে ১৬ গোল
কোরো টানা দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বুট জিতে ইতিহাস গড়েন। ১৬ গোল করে তিনি এফসি গোয়াকে দ্বিতীয়বার ফাইনালে নিয়ে যান। মোট ৪৮ গোল নিয়ে তিনি ক্লাব ছাড়েন, এফসি গোয়ার কিংবদন্তি হয়ে। তার গোলস্কোরিং ধারাবাহিকতা এবং দক্ষতা আইএসএল-এর ইতিহাসে অতুলনীয়।

২০১৯/২০ – নেরিজুস ভালস্কিস (চেন্নাইয়িন এফসি) – ১৬ ম্যাচে ১৫ গোল
এই মরশুমে গোল্ডেন বুটের দৌড় ছিল আইএসএল-এর ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র। নেরিজুস ভালস্কিস, রয় কৃষ্ণ এবং বার্থোলোমিউ ওগবেচে তিনজনেই ১৫ গোল করেছিলেন। অ্যাসিস্ট এবং কম ম্যাচ খেলার নিয়মের ভিত্তিতে ভালস্কিস শেষ মুহূর্তে পুরস্কার জিতেন। কারণ তিনি কৃষ্ণের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেছিলেন।

Advertisements

২০২০/২১ – ইগোর অ্যাঙ্গুলো (এফসি গোয়া) – ২১ ম্যাচে ১৪ গোল
ইগোর অ্যাঙ্গুলো ১৪ গোল করে এফসি গোয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি রয় কৃষ্ণের সঙ্গে গোলের সংখ্যায় সমান হন। কিন্তু কম ম্যাচ খেলার সুবাদে গোল্ডেন বুট জিতেন। তার ধারাবাহিকতা গোয়ার আক্রমণভাগকে শক্তিশালী করেছিল।

২০২১/২২ – বার্থোলোমিউ ওগবেচে (হায়দরাবাদ এফসি) – ২০ ম্যাচে ১৮ গোল
নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার বার্থোলোমিউ ওগবেচে ৩৭ বছর বয়সেও অসাধারণ ফর্মে ছিলেন। ২০ ম্যাচে ১৮ গোল করে তিনি হায়দরাবাদ এফসি-কে আইএসএল কাপ জিতিয়েছিলেন। তার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোল করার ক্ষমতা দলের শিরোপা জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

২০২২/২৩ – দিয়েগো মৌরিসিও (ওডিশা এফসি) – ২৫ ম্যাচে ২৩ গোল
দিয়েগো মৌরিসিও ওডিশা এফসি-র প্রথম গোল্ডেন বুট বিজয়ী হন। ২৩ গোল ও ৪ অ্যাসিস্টের সুবাদে তিনি ক্লেইটন সিলভা এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসকে পেছনে ফেলেন। তার গোল প্রতি মিনিটের অনুপাত তাকে এই সম্মান এনে দেয়। ২০২৪/২৫ মরশুমে তিনি ৯ গোল ও ৬ অ্যাসিস্ট করে ওডিশার সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। ক্লাব ছাড়ার আগে কলিঙ্গ সুপার কাপ জিতে কিংবদন্তি হয়ে যান।

২০২৩/২৪ – দিমিত্রিওস দিয়ামান্তাকোস (কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি) – ১৭ ম্যাচে ১৩ গোল
এই মরশুমে গোল্ডেন বুটের দৌড় ছিল অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। দিয়ামান্তাকোস এবং রয় কৃষ্ণ উভয়েই ১৩ গোল করেন, কিন্তু দিয়ামান্তাকোস ১৭ ম্যাচে এই গোল করে কৃষ্ণের (২৫ ম্যাচ) চেয়ে এগিয়ে যান। তার ৩ অ্যাসিস্ট এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্স কেরালা ব্লাস্টার্সকে টানা তৃতীয়বার প্লে-অফে নিয়ে যায়।

২০২৪/২৫ – আলাউদ্দিন আজারাই (নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি) – ২৫ ম্যাচে ২৩ গোল
আলাউদ্দিন আজারাই তার প্রথম মরশুমেই ২৩ গোল ও ৭ অ্যাসিস্ট করে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে প্লে-অফে নিয়ে যান। তার ৩০ গোল অবদান এক মরশুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড। তিনি গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল জিতে আইএসএল-এর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই দ্বৈত সম্মান অর্জন করেন।