Mohammedan SC Season Review: হতাশার মরসুম শেষে পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জে টিম ব্ল্যাকপ্যান্থার

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ২০২৪-২৫ মরসুমে প্রথমবার অংশ নেওয়া মহামেডান এসসি-র জন্য এটি ছিল একটি দুঃস্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাব, যিনি গত মরসুমে…

Mohammedan SC ISL

short-samachar

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ২০২৪-২৫ মরসুমে প্রথমবার অংশ নেওয়া মহামেডান এসসি-র জন্য এটি ছিল একটি দুঃস্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাব, যিনি গত মরসুমে আই-লিগ জিতে ISL-এ উঠে এসেছিল৷  তাদের প্রথম মরসুমে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে শেষ করেছেন। ২৪টি ম্যাচে মাত্র ১৩ পয়েন্ট নিয়ে, ২টি জয়, ৭টি ড্র এবং ১৫টি হারের সঙ্গে মহামেডান এসসি-র সমর্থকদের প্রত্যাশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আগামী মরসুমের জন্য এই ক্লাবকে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

   

একটি বিপর্যয়কর মরসুম
মহামেডান এসসি-র এই মরসুমে দুটি জয়ই এসেছে দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচে—চেন্নাইয়িন এফসি এবং বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে। গত মরসুমে আই-লিগ জয়ের নায়ক কোচ আন্দ্রে চের্নিশভ শুরুতে দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু তিনি মাত্র দুটি জয় এনে দিতে পারেন। এরপর ৪১ বছর বয়সী ভারতীয় কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াদু দায়িত্ব নেন, কিন্তু তিনিও দলের ভাগ্য বদলাতে পারেননি। দলের রক্ষণে দুর্বলতা, অবস্থানগত সচেতনতার অভাব এবং ব্যক্তিগত ভুল তাদের পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। ১২ গোল করে এবং ৪৪ গোল হজম করে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার্স’ ISL-এর ইতিহাসে সবচেয়ে কম পয়েন্ট নিয়ে মরসুম শেষ করা দল হয়ে উঠেছে।

দলের পরিসংখ্যান
লিগে অবস্থান: ১৩
মোট ম্যাচ: ২৪
জয়: ২
ড্র: ৭
হার: ১৫
গোল করেছে: ১২
গোল হজম: ৪৪
পয়েন্ট: ১৩

শীর্ষ পারফরমার্স
অ্যালেক্সিস গোমেজ
আর্জেন্টিনার এই তরুণ ত্রেকুয়ারটিস্টা মহামেডান এসসি-র জন্য এই মরসুমের একমাত্র আলোর বিন্দু। দল যখন ভেঙে পড়ছিল, তখনও গোমেজ তাঁর উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স দিয়ে সমর্থকদের মন জয় করেছেন। ২৪ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার তাঁর বল-প্লেয়িং দক্ষতা, দৃষ্টিশক্তি এবং প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। ২১টি ম্যাচে তিনি একটি গোল এবং একটি অ্যাসিস্ট করেছেন, যা সংখ্যার দিক থেকে কম হলেও মাঝমাঠে তাঁর সৃজনশীলতা দলের জন্য অমূল্য ছিল। সমর্থকরা তাঁকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে দেখছেন।

মিরজালল কাসিমভ
উজবেকিস্তানের এই ডিপ-লাইং মিডফিল্ডার মাঝমাঠে একজন নির্ভরযোগ্য ধ্বংসকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দুটি গোল করার পাশাপাশি তিনি ১৮টি সুযোগ তৈরি করেছেন। তাঁর ১১৩টি রিকভারি, ২০টি ইন্টারসেপশন, ১০৪টি ডুয়েল জয় এবং ৩১টি ট্যাকল জয় তাঁর রক্ষণাত্মক দক্ষতার প্রমাণ। সেট-পিসে তিনি দলের মূল অস্ত্র ছিলেন, ৭২টি সঠিক লং বল দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছেন।

মরসুমের হতাশাজনক পারফরমার
মার্ক আন্দ্রে শ্মেরবক
জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে অস্ট্রিয়ার এই স্ট্রাইকার দলে যোগ দেন, সমর্থকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। কিন্তু ৩০ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়, যিনি অস্ট্রিয়ান কাপ জিতেছেন, ছয়টি ম্যাচে মাত্র একটি গোল করেন। সেই গোলটি আসে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে (২-২ ড্র), যা তাঁর ২০২১ সালের পর প্রথম পেশাদার গোল। তিনি সিজার মানজোকির ভূমিকায় ফিট করতে পারেননি এবং তাঁর খেলার ধরন বেশি ‘ডামি রানার’ হিসেবে দেখা গেছে। সুপার কাপ ২০২৫-এ তাঁর ভূমিকা কী হবে, তা দেখার বিষয়।

সেরা পারফরম্যান্স
চেন্নাইয়িন এফসি ০-১ মহামেডান এসসি: একটি অ্যাওয়ে জয় যা দলের সম্ভাবনা দেখিয়েছিল।
বেঙ্গালুরু এফসি ০-১ মহামেডান এসসি: আরেকটি অ্যাওয়ে জয়, যা সমর্থকদের আনন্দ দিয়েছিল।
মহামেডান এসসি ২-২ পাঞ্জাব এফসি: মরসুমের শেষ ম্যাচে ড্র, যেখানে লড়াইয়ের মনোভাব ফুটে ওঠে।

কোচের রিপোর্ট কার্ড
আন্দ্রে চের্নিশভের বিদায়ের পর মেহরাজউদ্দিন ওয়াদু দায়িত্ব নেন। তবে সীমিত সম্পদ এবং দলের বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণে তিনি সাফল্য পাননি। বিভিন্ন কৌশল চেষ্টা করা সত্ত্বেও রক্ষণের দুর্বলতা এবং খেলোয়াড়দের ভূমিকার অদলবদল তাঁর পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে। উদাহরণস্বরূপ, কার্লোস হেনরিক ফ্রাঙ্কা সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে ভালো হলেও তাঁকে টার্গেট ম্যানের ভূমিকায় দেখা গেছে।

শিক্ষা
মহামেডান এসসি-র জন্য এই মরসুমের প্রথম শিক্ষা হল—খেলোয়াড়, কোচ এবং স্টাফদের সঠিকভাবে পারিশ্রমিক দেওয়া। মাঠে সাফল্যের জন্য ঘরের ব্যবস্থা ঠিক থাকা জরুরি। তারা ISL-এর ইতিহাসে প্রথম দল হয়েছে যারা পুরো মরসুমে একটিও হোম ম্যাচ জিততে পারেনি। কীভাবে তারা নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করবে, তা এখনও অস্পষ্ট। কলকাতার এই দলকে এমন খেলোয়াড় প্রয়োজন, যারা দলের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং কোচের কৌশল বাস্তবায়ন করতে সক্ষম।

পজেশন-ভিত্তিক খেলার জন্য প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ খেলোয়াড় এবং রক্ষণে অবদান রাখতে পারে এমন খেলোয়াড় দরকার। গোলপোচার এবং টার্গেট ম্যানের অভাব তাদের দুর্বলতাকে আরও প্রকট করেছে। আগামী মরসুমে ISL-এর বড় দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এই দিকগুলোতে উন্নতি আনতে হবে।

সমর্থকদের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রতি ম্যাচের পর দর্শক সংখ্যার উল্লেখযোগ্য হ্রাস ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে অকল্পনীয় ছিল। কলকাতার ময়দানের তিন প্রধান ক্লাবের মধ্যে মহামেডান এসসি-র ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তাই তাদের এই দুরবস্থা দেখে সমর্থকদের হৃদয় ভেঙেছে। আই-লিগ ২০২৩-২৪ জয়ের পর ISL-এ তলানিতে শেষ করা তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

তবে খারাপ পরিস্থিতিতেও খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা উচিত। চেন্নাইয়িন এবং বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে জয় সমর্থকদের জন্য স্মরণীয় মুহূর্ত। তরুণ ভারতীয় খেলোয়াড় মাকান উইঙ্কল চোথের প্রচেষ্টাও প্রশংসনীয়। সমর্থকরা আশা করছেন, আগামী দিনে ক্লাব তাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবে।