ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ২০২৪-২৫ মরশুমের নিয়মিত পর্ব শক্তিশালীভাবে শেষ করতে চায় চেন্নাইয়িন এফসি (Chennaiyin FC)। রবিবার, ৯ মার্চ, তারা চেন্নাইয়ের মেরিনা এরিনায় জামশেদপুর এফসিকে (Jamshedpur FC) স্বাগত জানাবে। এই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে তারা লিগ পর্বের শেষটা ইতিবাচকভাবে শেষ করে আসন্ন সুপার কাপের জন্য গতি তৈরি করতে চায়। চেন্নাইয়িন এফসি এবং জামশেদপুর এফসির মধ্যে আইএসএল-এ এ পর্যন্ত ১৫টি মুখোমুখি লড়াই হয়েছে। এর মধ্যে চেন্নাইয়িন সাতটি ম্যাচে জয় পেয়েছে এবং পাঁচটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। এই মরশুমে তাদের আগের সাক্ষাতে চেন্নাইয়িন ৫-১ গোলে জয় পেয়েছিল, যা এই মরশুমে তাদের সবচেয়ে বড় জয়। ঘরের মাঠে ফিরে তারা এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে মরিয়া।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে চেন্নাইয়িন এফসির প্রধান কোচ ওয়েন কয়েল জামশেদপুর এফসির প্রধান কোচ খালিদ জামিলের প্রশংসা করেছেন। কয়েলের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চেন্নাইয়িনের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ফারুখ চৌধুরী। তিনি এবং ইরফান ইয়াদওয়াদ মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচের জন্য ভারতীয় জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। এই মরশুম এবং তার নির্বাচন নিয়ে ফারুখ বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমরা এই মরশুমে অসঙ্গতিপূর্ণ ছিলাম। যদি আমরা ধারাবাহিক হতাম, তবে আরও অনেক পয়েন্ট পেতাম। এটা আমি নিজের দিকে তাকিয়ে প্রথমে বলছি। দ্বিতীয়ত, এমন কোচ থাকা সবসময় ভালো, যিনি খেলোয়াড়দের ওপর ভরসা করেন। এখানে গ্যাফার (কয়েল) সবসময় আমার পিছনে থেকে আমাকে সমর্থন করেন। একইভাবে, গত দুটি জাতীয় শিবিরে গিয়ে আমি মনে করি ভালো করেছি। একটি গোল করেছি, একবার ১০ নম্বর পজিশনে খেলেছি। হয়তো এজন্যই তিনি (মানোলো মার্কেজ) আমাকে আবার ডেকেছেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কোচদের এই বিশ্বাস আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কখনও কখনও নিজেকে তুলে আবার শুরু করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সময় এই সমর্থন আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এই নির্বাচন আমাকে উৎসাহ দেয়। আমি সেখানে যাব, কঠোর পরিশ্রম করব, এখানে যা করছি তাই করব এবং আমার ক্ষমতা দেখাব।”
হেড-টু-হেড রেকর্ড ও ফর্ম
চেন্নাইয়িন এফসি এবং জামশেদপুর এফসির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ। ১৫টি ম্যাচে চেন্নাইয়িনের সাতটি জয় এবং পাঁচটি ড্র তাদের এই মুখোমুখিতে এগিয়ে রেখেছে। জামশেদপুর মাত্র তিনটি ম্যাচে জিতেছে। এই মরশুমের প্রথম লেগে চেন্নাইয়িন ৫-১ গোলে জামশেদপুরকে পরাজিত করেছিল। সেই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে, এই মরশুমে চেন্নাইয়িনের ফর্ম অসঙ্গতিপূর্ণ। ২৩ ম্যাচে মাত্র ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তারা টেবিলে ১১ নম্বরে রয়েছে। জয় দিয়ে লিগ শেষ করলে তারা ২৭ পয়েন্টে পৌঁছবে, যা গত মরশুমে প্লে-অফের জন্য যথেষ্ট হলেও এবার যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে, জামশেদপুর এফসি ইতিমধ্যেই প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে। ২৩ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে তারা চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তারা এই ম্যাচে ১৩তম জয়ের লক্ষ্যে নামবে, যা তাদের সেরা মরশুমের রেকর্ডের সমান হবে। তবে, গত পাঁচ ম্যাচে তারা মাত্র একটি জয় পেয়েছে। প্লে-অফের আগে এই ম্যাচে গতি ফিরে পাওয়া তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দলের শক্তি ও কৌশল
চেন্নাইয়িন এফসির আক্রমণভাগে ফারুখ চৌধুরী, ইরফান ইয়াদওয়াদ এবং উইলমার জর্ডান গিলের মতো খেলোয়াড় রয়েছেন। তাদের আগের ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ৫-১ জয়ে আক্রমণের দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে। তবে, প্রতিরক্ষায় দুর্বলতা তাদের সমস্যায় ফেলেছে। কোচ কয়েল এই ম্যাচে তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে পারেন, যেমন গোলকিপার সমীক মিত্র, যাতে তারা সুপার কাপের আগে নিজেদের প্রমাণ করতে পারে।
জামশেদপুর এফসির শক্তি তাদের বিদেশি ত্রয়ী—জাভি হার্নান্দেজ (৭ গোল), জর্ডান মারে (৬ গোল) এবং জাভি সিভেরিও (৬ গোল)। তবে, হার্নান্দেজ এই ম্যাচে সাসপেনশনের কারণে খেলতে পারবেন না। তাদের ১১ জন ভিন্ন গোলদাতা রয়েছে, যা তাদের আক্রমণের বৈচিত্র্য দেখায়। খালিদ জামিলের কৌশল হবে আক্রমণাত্মক খেলার পাশাপাশি প্রতিরক্ষায় শক্ত থাকা।
সমর্থকদের প্রত্যাশা
চেন্নাইয়িনের সমর্থকরা ঘরের মাঠে জয়ের আশায় মেরিনা এরিনায় ভিড় করবে। এই মরশুমে তারা ঘরে মাত্র দুটি ম্যাচ জিতেছে। জামশেদপুরের সমর্থকরা তাদের দলের প্লে-অফের প্রস্তুতি দেখতে উৎসুক। দুই দলেরই এই ম্যাচে অনেক কিছু প্রমাণ করার আছে—চেন্নাইয়িন গর্বের জন্য, আর জামশেদপুর গতির জন্য।
এই ম্যাচ চেন্নাইয়িন এফসি এবং জামশেদপুর এফসির জন্য আলাদা তাৎপর্য বহন করে। চেন্নাইয়িন লিগ পর্ব শেষ করতে চায় মাথা উঁচু করে, যখন জামশেদপুর প্লে-অফের আগে ফর্ম ফিরে পেতে চায়। ওয়েন কয়েল এবং খালিদ জামিলের কৌশলের লড়াই এই ম্যাচকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। ফারুখ এবং ইরফানের জাতীয় দলে ডাক এই ম্যাচে অতিরিক্ত উৎসাহ যোগ করেছে। ক্রীড়াপ্রেমীরা এই উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।