আইপিএল পয়েন্ট টেবিলে আরসিবি শীর্ষে, কোহলি অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL 2025) ২০২৫-এ রবিবার একটি রোমাঞ্চকর দিনে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স (এমআই) এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) যথাক্রমে লখনউ সুপার জায়ান্টস (এলএসজি) এবং দিল্লি…

IPL 2025 Points Table Update RCB Tops

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL 2025) ২০২৫-এ রবিবার একটি রোমাঞ্চকর দিনে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স (এমআই) এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) যথাক্রমে লখনউ সুপার জায়ান্টস (এলএসজি) এবং দিল্লি ক্যাপিটালস (ডিসি)-এর বিরুদ্ধে দাপুটে জয় নথিভুক্ত করেছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাদের টানা পঞ্চম জয়ের মাধ্যমে পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে, যেখানে শীর্ষে রয়েছে গুজরাট টাইটান্স (জিটি) এবং দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি ক্যাপিটালস। তবে, আরসিবি তাদের টানা ষষ্ঠ অ্যাওয়ে জয়ের মাধ্যমে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছে, যার ফলে দিল্লি ক্যাপিটালস চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তৃতীয় স্থানে থাকলেও গুজরাট টাইটান্স সাময়িকভাবে দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে।

আরসিবি’র আইকন বিরাট কোহলি এই মরসুমে তাঁর ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অরেঞ্জ ক্যাপ দখল করেছেন। তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সূর্যকুমার ইয়াদব (৪২৭ রান) এবং গুজরাট টাইটান্সের সাই সুদর্শনকে (৪১৭ রান) পিছনে ফেলে শীর্ষস্থান অধিকার করেছেন। কোহলি এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ৪৪৩ রান সংগ্রহ করেছেন। সুদর্শনের সামনে সোমবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচে অরেঞ্জ ক্যাপ পুনরুদ্ধারের সুযোগ রয়েছে।

   

অন্যদিকে, আরসিবি’র পেসার জশ হ্যাজলউড দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে দুটি উইকেট নিয়ে পার্পল ক্যাপ দখল করেছেন। এই মরসুমে তিনি মোট ১৮টি উইকেট নিয়েছেন, যা তাঁকে শীর্ষ উইকেট শিকারী বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠে ১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আরসিবি শুরুতে ২৬-৩-এ ধাক্কা খায়। কিন্তু বিরাট কোহলি এবং ক্রুনাল পান্ডিয়া ১১৯ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান। মাত্র নয় বল বাকি থাকতে তারা লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী কোহলি ৫১ রান করেন, আর বাঁ-হাতি পান্ডিয়া ৪৭ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তিনি এই ম্যাচে তাঁর বাঁ-হাতি স্পিনে ১-২৮ রান দিয়ে বোলিংয়েও অবদান রাখেন। এই জয় ছিল আরসিবি’র এই মরসুমে ১০ ম্যাচে সপ্তম জয়, যা তাদের ১০-দলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে নিয়ে গেছে।

এই জয় আরসিবি’র টানা ষষ্ঠ অ্যাওয়ে জয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০০৮ সালে আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় থাকা আরসিবি এবং কোহলি এই জয়ের মাধ্যমে তাদের প্রথম শিরোপার স্বপ্নকে আরও জোরালো করেছে।

পান্ডিয়া একবার সেট হয়ে গেলে তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রদর্শন করেন। তিনি বাউন্ডারি এবং ছক্কার মাধ্যমে রান তুলতে থাকেন এবং অক্ষর পটেলের বলে একটি চার মেরে ৩৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। কোহলি তাঁর ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি করেন এবং সূর্যকুমার ইয়াদবের ৪২৭ রানের রেকর্ড ভেঙে এই মরসুমের শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪৪৩ রানের মালিক হন। তিনি শ্রীলঙ্কার পেসার দুশমন্থ চামিরার বলে আউট হন। এরপর পান্ডিয়া এবং টিম ডেভিড, যিনি মাত্র পাঁচ বলে অপরাজিত ১৯ রান করেন, দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন।

এই ম্যাচে আরসিবি’র ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় বিভাগেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখা গেছে। কোহলির ধারাবাহিকতা এবং পান্ডিয়ার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দলকে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে। হ্যাজলউডের বোলিংও দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর ১৮ উইকেট এই মরসুমে তাঁর ধারাবাহিকতা এবং কার্যকারিতার প্রমাণ দেয়।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সও তাদের দুর্দান্ত ফর্ম অব্যাহত রেখেছে। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে তাদের পঞ্চম জয় তাদের পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে নিয়ে গেছে। সূর্যকুমার ইয়াদব, যিনি অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে কোহলির কাছে পিছিয়ে পড়েছেন, তবুও তাঁর ৪২৭ রানের সংগ্রহ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুম্বাইয়ের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাদের প্লে-অফের দৌড়ে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে।

পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা আরসিবি এখন ১২ পয়েন্ট নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। গুজরাট টাইটান্স এবং দিল্লি ক্যাপিটালসও ১২ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। পয়েন্ট টেবিলের মাঝামাঝি অংশে পাঞ্জাব কিংস এবং লখনউ সুপার জায়ান্টসও ১০ পয়েন্ট নিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে রয়েছে। তবে রাজস্থান রয়্যালস এবং চেন্নাই সুপার কিংস, যারা মাত্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নিচের দিকে রয়েছে, তাদের জন্য প্লে-অফের পথ ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

এই মরসুমে অরেঞ্জ ক্যাপ এবং পার্পল ক্যাপের দৌড়ও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোহলির ৪৪৩ রান তাঁকে অরেঞ্জ ক্যাপের শীর্ষে রেখেছে, তবে সুদর্শন (৪১৭ রান), নিকোলাস পুরান (৩৭৭ রান), এবং সূর্যকুমার ইয়াদব (৩৭৩ রান) তাঁর কাছাকাছি রয়েছেন। পার্পল ক্যাপের দৌড়ে হ্যাজলউডের ১৮ উইকেট তাঁকে শীর্ষে রেখেছে, তবে গুজরাট টাইটান্সের প্রসিদ্ধ কৃষ্ণও ১৬ উইকেট নিয়ে তাঁর সমান্তরালে রয়েছেন।

আইপিএল ২০২৫ এখন তার মধ্য পর্যায়ে রয়েছে, এবং প্লে-অফের দৌড় ক্রমশ জমে উঠছে। আরসিবি এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মাধ্যমে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কোহলি এবং হ্যাজলউডের নেতৃত্বে আরসিবি তাদের প্রথম শিরোপার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাদের অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সমন্বয়ে প্লে-অফের জন্য শক্তিশালী দাবিদার হিসেবে রয়েছে। আগামী ম্যাচগুলোতে এই দুই দলের পারফরম্যান্স কীভাবে এগোয়, সেটাই এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বড় আগ্রহের বিষয়।