আইপিএল ২০২৫-এ (IPL 2025) লখনউ সুপার জায়ান্টস (LSG) ঋষভ পন্থকে (Rishabh Pant) ২৭ কোটি টাকায় কিনে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকায় তাকে দলে ভিড়িয়ে এলএসজি তাকে ২০২৫ মরশুমের অধিনায়কও নিযুক্ত করেছে। গত কয়েক বছর ধরে দিল্লি ক্যাপিটালসের (ডিসি) পোস্টার বয় হিসেবে পরিচিত পন্থ তার উইকেটকিপিং দক্ষতা এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শৈলীর জন্য বিখ্যাত। কিন্তু, এই মরশুমে তার পারফরম্যান্স এবং অতীতের রেকর্ড দেখে মনে হচ্ছে, এলএসজি হয়তো এই বিশাল বিনিয়োগে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসুন, তিনটি প্রধান কারণে বিশ্লেষণ করি কেন এলএসজি’র জন্য এটি একটি বড় ভুল হতে পারে।
১. অধিনায়ক হিসেবে দুর্বল রেকর্ড
ঋষভ পন্থ ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দিল্লি ক্যাপিটালসের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০২১ সালে তার নেতৃত্বে দিল্লি পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে শেষ করলেও, প্লে-অফে টানা দুটি ম্যাচ হেরে ফাইনালে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। এরপরের তিন মরশুমে দিল্লি একবারও প্লে-অফে জায়গা করে নিতে পারেনি। অথচ, ২০২০ সালে শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বে দিল্লি ফাইনালে পৌঁছে রানার্স-আপ হয়েছিল। পন্থের অধিনায়কত্বে দিল্লি কখনোই শিরোপা জিততে না পারায় তার নেতৃত্বের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এলএসজি গত দুই মরশুমে কেএল রাহুলের নেতৃত্বে প্লে-অফে পৌঁছেছিল। সেই দল এখন পন্থের উপর ভরসা করে একটি বড় ঝুঁকি নিয়েছে। ২৭ কোটি টাকার এই বিনিয়োগ যদি শিরোপা না এনে দেয়, তবে এটি দলের মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠতে পারে। পন্থের অভিজ্ঞতা থাকলেও, তিনি এখনও দেখাতে পারেননি যে তিনি একটি দলকে শিরোপা জয়ের পথে নিয়ে যেতে সক্ষম। এই দিক থেকে এলএসজি’র সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
২. টি-টোয়েন্টিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাটিং
পন্থ টেস্ট ক্রিকেটে তার দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গাবায় তার ঐতিহাসিক ইনিংস ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিনি ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। আইপিএল ২০২৪-এ তার গড় ৪০-এর বেশি ছিল, যা একটি উজ্জ্বল দিক। তবে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তার গড় ছিল ৩০-৩৫-এর মধ্যে।
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি আইপিএল মরশুমে তিনি মাত্র সাতটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। তার স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৪৮, যা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু বড় ম্যাচে তিনি প্রায়ই ব্যর্থ হয়েছেন। ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে তার গড় মাত্র ২৩, যা তার প্রতিভার সঙ্গে মেলে না। এত বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে এমন একজন ব্যাটারের উপর নির্ভর করা এলএসজির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অন্যান্য দল যেমন পঞ্জাব কিংস শ্রেয়াস আইয়ারকে ২৬.৭৫ কোটি টাকায় কিনে একজন প্রমাণিত নেতা পেয়েছে, সেখানে পন্থের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।
৩. আইপিএল ২০২৫-এ হতাশাজনক পারফরম্যান্স
আইপিএল ২০২৫-এ এখনও পর্যন্ত পন্থের ব্যাটিং তার ২৭ কোটি টাকার মূল্যের সঙ্গে মেলেনি। প্রথম ম্যাচে তার পুরনো দল দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে তিনি ৬ বলে শূন্য রানে আউট হন। দ্বিতীয় ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে ১৫ বলে ১৫ রান করেন, যার মধ্যে একটি ছক্কা ছিল। তৃতীয় ম্যাচে পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে তিনি মাত্র ২ রান করতে পারেন।
তিন ম্যাচে তার মোট রান ১৭, যা তার মূল্যের তুলনায় অত্যন্ত কম। তার স্ট্রাইক রেটও প্রত্যাশা পূরণ করছে না। গত মরশুমে তিনি ১৫৬-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৪৪৬ রান করেছিলেন, কিন্তু এবার তিনি ফর্মে ফিরতে পারছেন না। এই দুর্বল শুরু এলএসজি ভক্তদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে এবং পন্থের উপর চাপ বাড়িয়েছে। দলের অন্যান্য খেলোয়াড় যেমন নিকোলাস পুরান এবং মিচেল মার্শ এখনও পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু পন্থের ব্যর্থতা দলের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলএসজির সিদ্ধান্তের সমালোচনা
২৭ কোটি টাকা খরচ করে পন্থকে কেনার ফলে এলএসজি দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিনিয়োগের সুযোগ হারিয়েছে। তারা আরও শক্তিশালী বোলিং ইউনিট বা ধারাবাহিক ওপেনারে টাকা খরচ করতে পারত। পন্থের উপর এত বড় নির্ভরতা দলের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। দলের মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা পন্থের “নেভার-সে-ডাই” মনোভাবের প্রশংসা করলেও, তার বর্তমান ফর্ম এবং অতীতের রেকর্ড এই বিনিয়োগকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
পন্থের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
পন্থের প্রতিভা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি ভারতের প্রথম পছন্দের উইকেটকিপার-ব্যাটার এবং তার আক্রমণাত্মক শৈলী ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ২০১৮ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে তার ১২৮* রানের ইনিংস তার ক্ষমতার প্রমাণ। কিন্তু ২৭ কোটি টাকার মূল্য এবং অধিনায়কত্বের চাপ তাকে প্রভাবিত করছে বলে মনে হচ্ছে। এই মরশুমে তিনি যদি ফর্মে না ফিরতে পারেন, তবে এই বিনিয়োগ ব্যর্থতার উদাহরণ হয়ে থাকবে।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে পন্থের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা চলছে। একজন ভক্ত লিখেছেন, “২৭ কোটি টাকার খেলোয়াড় এভাবে খেললে দলের কী হবে? পুরানই এখন দলকে বাঁচাচ্ছে।” আরেকজন লিখেছেন, “পন্থকে এত টাকা দেওয়া গোয়েঙ্কার বড় ভুল।” এলএসজি সমর্থকরা হতাশ হলেও, তারা এখনও আশা করছেন পন্থ ফিরে আসবেন।
এলএসজির ভবিষ্যৎ
এই মরশুমে এলএসজির এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। পন্থ যদি তার পুরনো ফর্মে ফিরতে পারেন, তবে এই বিনিয়োগ সফল হতে পারে। তবে, তার অধিনায়কত্বের দুর্বলতা, টি-টোয়েন্টিতে অসামঞ্জস্য এবং এই মরশুমে দুর্বল শুরু এলএসজির জন্য চিন্তার কারণ। দলের অন্যান্য তারকা খেলোয়াড়দের উপর নির্ভরতা বাড়ছে, এবং পন্থের ব্যর্থতা দলের মনোবলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ঋষভ পন্থের জন্য ২৭ কোটি টাকা খরচ করা এলএসজির একটি সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তার নেতৃত্বে সাফল্যের অভাব, টি-টোয়েন্টিতে অসামঞ্জস্য এবং এই মরশুমে হতাশাজনক পারফরম্যান্স এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। পন্থ যদি নিজেকে প্রমাণ করতে না পারেন, তবে এই বিনিয়োগ এলএসজির জন্য একটি বড় ভুল হিসেবে গণ্য হবে। এখন দেখার বিষয়, পন্থ কি তার সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করতে পারবেন, নাকি এলএসজির এই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।