বুধবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সামনে যা ঘটেছে, তা কল্পনাও করতে পারেনি কেউ। আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) বিজয় উৎসব পরিণত হল এক মর্মান্তিক ঘটনায়। খেলোয়াড়দের এক ঝলক দেখতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ১১ জন সমর্থক। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আনন্দের মুহূর্ত মুহূর্তেই রূপ নিল বিভীষিকায়।
হঠাৎ করেই মৃত্যু মিছিল
বুধবার সকাল থেকেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে জমতে থাকে মানুষের ঢল। প্রত্যেকেই আশা করছিলেন প্রিয় তারকা বিরাট কোহলি সঙ্গে দলের বাকি সদস্যদের একঝলকের জন্য দেখতে পাবেন। আয়োজকরা আশা করেছিলেন কিছু হাজার লোক আসবে, কিন্তু বাস্তবে হাজির হয়েছিল প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ মানুষ। অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে ব্যর্থ হয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি সব মিলিয়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। এক সময় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ঘটে প্রাণঘাতী ঘটনা। ঘটনাস্থলেই মারা যান কয়েকজন, বাকিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আরও মৃত্যুর খবর আসে।
এই ঘটনার পর দিন, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু একটি বিবৃতিতে জানায় তাদের গভীর শোক ও সহানুভূতির কথা। তারা ঘোষণা করেছে, নিহত ১১ জন সমর্থকের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ তহবিল ‘RCB Cares’।
আরসিবি-র বিবৃতিতে বলা হয়, “ঘটনাটি আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আমাদের সমর্থকরাই আমাদের শক্তি, আর তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই ক্ষতির পূরণ করা সম্ভব নয়, তবে আমরা পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে চাই, তাদের এই কঠিন সময়ে একটু সাহস ও সহায়তা দিতে চাই।”
𝗢𝗳𝗳𝗶𝗰𝗶𝗮𝗹 𝗦𝘁𝗮𝘁𝗲𝗺𝗲𝗻𝘁: 𝗥𝗼𝘆𝗮𝗹 𝗖𝗵𝗮𝗹𝗹𝗲𝗻𝗴𝗲𝗿𝘀 𝗕𝗲𝗻𝗴𝗮𝗹𝘂𝗿𝘂
The unfortunate incident in Bengaluru yesterday has caused a lot of anguish and pain to the RCB family. As a mark of respect and a gesture of solidarity, RCB has announced a financial… pic.twitter.com/C50WID1FEI
— Royal Challengers Bengaluru (@RCBTweets) June 5, 2025
সরকার ও বিসিসিআই প্রতিক্রিয়া
ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে কর্ণাটক সরকারও এগিয়ে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া ঘোষণা করেছেন, নিহতদের পরিবারগুলিকে রাজ্যের পক্ষ থেকেও ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। উপমুখ্যমন্ত্রী ডি. কে. শিবকুমার জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি সামলাতে না পারায় বিজয় শোভাযাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হন তারা।
বিসিসিআই সচিব দেবজিত শইকিয়া এই ঘটনাকে “গভীরভাবে দুর্ভাগ্যজনক” বলে মন্তব্য করেছেন। আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধুমাল জানিয়েছেন, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘উৎসব’ থেকে ‘শোক’
আরসিবির পক্ষে এই জয় ছিল ঐতিহাসিক—প্রথমবারের মতো তারা আইপিএল ট্রফি জিতেছে। তবে সেই আনন্দের মুহূর্তকে ছাপিয়ে গেছে এই মানবিক বিপর্যয়। যেসব তরুণ প্রাণ চিরতরে নিভে গেল, তারা এসেছিল কেবল তাদের প্রিয় দলের আনন্দ ভাগ করে নিতে। কেউ হয়তো পরিবারকে না জানিয়েই এসেছিল, কেউ বা বন্ধুদের সঙ্গে, খালি হাতে কিন্তু হৃদয়ভরা ভালোবাসা নিয়ে। তাঁদের জীবন এত অপ্রস্তুতভাবে থেমে যাবে, তা কেউ ভাবেনি।