ইন্টার কাশীতে জনি কাউকোর আসার কারণ জানালেন হাবাস

ইন্ডিয়ান ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) পাশাপাশি এবার আইলিগের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও বেশি। কারণ, এই মরসুমে আইলিগে অংশগ্রহণকারী নতুন একটি…

Antonio Lopez Habas, Joni Kauko

ইন্ডিয়ান ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) পাশাপাশি এবার আইলিগের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও বেশি। কারণ, এই মরসুমে আইলিগে অংশগ্রহণকারী নতুন একটি দল ইন্টার কাশী ফুটবল ক্লাব। বারাণসীর এই দলটি তাদের প্রথম মরসুমেই দারুণ চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। শীর্ষস্থানীয় কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস (Antonio López Habas) এবং ফিনল্যান্ডের তারকা ফুটবলার জনি কাউকোর মতো নামি ব্যক্তিত্বদের দলে টেনে নজর কেড়েছে ক্লাবটি।

আগামী শুক্রবার নৈহাটির বঙ্কিমাঞ্চল স্টেডিয়ামে স্পোর্টিং ক্লাব বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে আইলিগ অভিযান শুরু করবে ইন্টার কাশী। বারাণসী ভিত্তিক ক্লাব হলেও কলকাতার এই স্টেডিয়ামকে তাঁদের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কিছুটা অবাক করলেও, টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, তাঁদের লক্ষ্য দলটিকে সর্বভারতীয় পর্যায়ে তুলে আনা।

   

হাবাসের নতুন চ্যালেঞ্জ
স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ভারতের ফুটবল মহলে নতুন নাম নন। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হিসেবে তিনি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। গত মরসুমে তাঁর কোচিংয়ে লিগ শিল্ড জেতে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। তবে নতুন মরসুমে বাগান ম্যানেজমেন্ট তাঁকে সরিয়ে দিয়ে দলের দায়িত্ব তুলে দেয় জোসে মোলিনার হাতে। বর্তমানে হাবাস ইন্টার কাশীর প্রধান কোচ হিসেবে নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন।

হাবাসের লক্ষ্য এবার আরও বড়। একাধিক আইএসএল ক্লাবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন আইলিগের ক্লাব বেছে নিলেন? হাবাস জানান, “এটি আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। ইন্টার কাশীকে শক্তিশালী দল হিসেবে তৈরি করা এবং এই ক্লাবকে সাফল্যের পথে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য।”

জনি কাউকোর আসার নেপথ্যে
জনি কাউকো একজন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ফুটবলার। গত মরসুমে মোহনবাগানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। আইএসএল ট্রফি জয়ের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তবে নতুন মরসুমে বাগান ম্যানেজমেন্ট তাঁকে ধরে রাখেনি।

কাউকোর মতো তারকা ফুটবলারকে দলে নেওয়া যে কোনও ক্লাবের জন্য বড় পাওয়া। আইএসএলের একাধিক ক্লাব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ইন্টার কাশীতে যোগ দেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত?

এই প্রসঙ্গে ইন্টার কাশীর কোচ হাবাস জানিয়েছেন, “জনি কাউকো আমার কথা শুনেই ইন্টার কাশীতে যোগ দিয়েছে। তাঁর কাছে আইএসএলের একাধিক ক্লাবের অফার ছিল। কিন্তু আমি ওকে বলেছিলাম, এখানে এসো এবং নতুন কিছু করো। আমাদের ক্লাব নতুন হলেও, জনির অভিজ্ঞতা এবং প্রতিভা আমাদের অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

হাবাস আরও বলেন, “কাউকো এমন একজন খেলোয়াড়, যে সব সময় নিজের সেরাটা দিতে চায়। ওর পরিশ্রম এবং খেলায় নিবেদন অনন্য। আমি নিশ্চিত, ইন্টার কাশীর হয়ে সে দুর্দান্ত পারফর্ম করবে।”

ইন্টার কাশীর লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা
ইন্টার কাশী ফুটবল ক্লাবের মালিকপক্ষ এবং ম্যানেজমেন্ট বেশ আশাবাদী। তাঁরা মনে করেন, হাবাস এবং কাউকোর মতো ব্যক্তিত্বরা ক্লাবকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন। যদিও প্রথম মরসুম হওয়ায় দল গঠনে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করেছে, খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ এবং উন্নতির জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এবারের মরসুমে ইন্টার কাশীর প্রধান লক্ষ্য আইলিগে ভালো পারফরম্যান্স করে ফুটবলপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নেওয়া। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হিসেবে তাঁরা আইএসএলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন। ক্লাবের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা বারাণসীর নাম উজ্জ্বল করতে চাই। দেশের ফুটবল মানচিত্রে বারাণসীকে জায়গা করে দিতে চাই। আমাদের যাত্রা এখনই শুরু হয়েছে। সামনে অনেক কাজ বাকি।”

হোম গ্রাউন্ড এবং সমর্থকদের প্রত্যাশা
বারাণসী ক্লাব হলেও ইন্টার কাশীর হোম গ্রাউন্ড হিসেবে এবার নৈহাটির বঙ্কিমাঞ্চল স্টেডিয়ামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কিছুটা বিতর্কিত হলেও, ক্লাব কর্তৃপক্ষের দাবি, কলকাতার ফুটবলপ্রেমী দর্শকদের কাছাকাছি থাকতে চেয়েই এই পদক্ষেপ। কলকাতার ফুটবল পরিবেশ, সমর্থকদের প্যাশন এবং স্টেডিয়ামের সুবিধা তাঁদের সিদ্ধান্তকে সহজ করেছে।

ইন্টার কাশীর প্রথম ম্যাচ দেখতে নৈহাটিতে দর্শকদের ভিড় হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। ক্লাবের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা জানি, আমাদের সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু আমরা তাঁদের হতাশ করব না। আমরা প্রতিটি ম্যাচে আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।”

ইন্টার কাশী ফুটবল ক্লাব এখন ভারতীয় ফুটবলের আলোচনার কেন্দ্রে। জনি কাউকো এবং হাবাসের মতো নামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তাঁদের যাত্রা শুরু হলেও, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ মাঠেই। প্রথম ম্যাচে স্পোর্টিং ক্লাব বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে জয় পেতে মরিয়া হাবাসের দল।

সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলে ইন্টার কাশী আইলিগের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসবে। আর যদি হাবাস এবং কাউকো তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তবে ইন্টার কাশী কেবল বারাণসীর নয়, গোটা ভারতের ফুটবলে নতুন ইতিহাস রচনা করবে।