আই-লিগ ক্লাব ইন্টার কাশি (Inter Kashi FC) গত শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০২৫) অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF ) আপিল কমিটির চূড়ান্ত রায়ের পর একটি কঠোর বিবৃতি জারি করেছে। এই বিবৃতিতে ক্লাবটি মামলার প্রক্রিয়ার সময়সীমা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং এই বিষয়টিকে কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট (CAS)-এ নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় জানিয়েছে। এআইএফএফ আপিল কমিটির চূড়ান্ত রায় নামধারী এফসি-র পক্ষে গেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে এআইএফএফ ডিসিপ্লিনারি কমিটির প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। প্রক্রিয়াগত ভুল এবং যোগাযোগের অভাবের কারণে উভয় শাস্তি বাতিল করা হয়েছে, ফলে ইন্টার কাশি ২০২৪-২৫ আই-লিগের চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।
ইন্টার কাশির (Inter Kashi FC) সিএএস-এ ন্যায্য শুনানির প্রত্যাশা
ইন্টার কাশি শনিবার একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে এআইএফএফ আপিল কমিটির রায়কে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা দাবি করেছে যে এই প্রক্রিয়াটি আই-লিগ মৌসুম শেষ হওয়ার আগে, অর্থাৎ ৬ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিল। ক্লাবটি জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার সমাপ্তির ফলে তারা এখন সিএএস-এ মামলাটি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তারা এখন “সত্যিকারের স্বাধীন এবং ন্যায্য শুনানি” পাওয়ার স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলে মনে করে। ইন্টার কাশির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই মামলাটি “কিছু অকাট্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে নিয়ম ও বিধিমালার একটি সহজ ব্যাখ্যা” নিয়ে গঠিত।
এআইএফএফ আপিল কমিটির চূড়ান্ত রায় কী ছিল?
নামধারী এফসি-র বিরুদ্ধে ইন্টার কাশিকে তিন পয়েন্ট প্রদানের সিদ্ধান্ত, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে নামধারী একজন অযোগ্য খেলোয়াড়কে মাঠে নামিয়েছিল, তা আপিল কমিটি বাতিল করেছে। এর ফলে নামধারী এফসি-র পয়েন্ট ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত চার্চিল ব্রাদার্সকে ইন্টার কাশিকে এক পয়েন্টে পিছনে ফেলে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ইন্টার কাশি ২০২৪-২৫ আই-লিগে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছে, ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে, যেখানে চার্চিল ব্রাদার্স ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। নামধারী এফসি ৩২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।
আপিল কমিটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজেশ ট্যান্ডন, উল্লেখ করেছে যে ২০২৪ সালের ২৮ ও ৩১ ডিসেম্বরের ডিসিপ্লিনারি আদেশগুলো প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতি লঙ্ঘন করে জারি করা হয়েছিল, কারণ ক্লাব এবং খেলোয়াড়কে ন্যায্য শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়নি। ‘অডি অলটারাম পার্টেম’ নীতি, অর্থাৎ ‘শুনানির অধিকার’, উল্লেখ করে কমিটি জানিয়েছে যে ডিসিপ্লিনারি কমিটির প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। নামধারী এফসি-র খেলোয়াড় ক্লেডসন সি. সিলভার উপর আরোপিত তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা, যা রিয়াল কাশ্মীর এফসি-র বিরুদ্ধে লাল কার্ডের ঘটনার জন্য দেওয়া হয়েছিল, জানুয়ারি ও মার্চ মাসে অন্তর্বর্তী আদেশের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছিল। নামধারী এফসি সৎ বিশ্বাসে কাজ করেছিল এবং ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে খেলোয়াড়ের যোগ্যতা যাচাই করেছিল, তবুও তাদের ০-৩ ফরফিট হারের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
ইন্টার কাশির অবস্থান এবং অভিযোগ
ইন্টার কাশি পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে দাবি করে আসছে যে নামধারী এফসি একজন নিষিদ্ধ খেলোয়াড়কে মাঠে নামিয়েছিল, এবং আপিল কমিটির এই সিদ্ধান্তকে তারা প্রক্রিয়াগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ এবং অন্যায্য বলে মনে করে। ক্লাবটি এই মামলাটিকে নিয়ম ও বিধিমালার সহজ ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে একটি সরল বিষয় বলে উল্লেখ করেছে। তারা এআইএফএফ-এর প্রক্রিয়ার সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যা তাদের মতে, লিগ শেষ হওয়ার আগেই সমাধান করা উচিত ছিল। ইন্টার কাশি এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করার জন্য সিএএস-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে একটি বিরল পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ ক্লাবটির এই বিষয়টির প্রতি কতটা গুরুত্ব দেয় তা প্রকাশ করে।
চার্চিল ব্রাদার্সের উদযাপনের প্রতি কটাক্ষ
ইন্টার কাশি তাদের বিবৃতিতে চার্চিল ব্রাদার্স এফসি-র সম্ভাব্য শিরোপা উদযাপনের প্রতি একটি সূক্ষ্ম কটাক্ষ করেছে। তারা বলেছে, “এই সময়ের মধ্যে যেকোনো উদযাপন শেষ পর্যন্ত অকাল হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে ক্লাবটি ইঙ্গিত দিয়েছে যে সিএএস-এ তাদের মামলার ফলাফল এই শিরোপার চূড়ান্ত ফলাফলকে পরিবর্তন করতে পারে। চার্চিল ব্রাদার্সকে এআইএফএফ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৪-২৫ আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছে এবং তারা ২০২৫-২৬ মৌসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এ প্রোমোশন পেয়েছে। তবে, ইন্টার কাশির আইনি পদক্ষেপ এই উদযাপনের উপর ছায়া ফেলতে পারে।
সিএএস-এ মামলার সম্ভাব্য প্রভাব
ইন্টার কাশির সিএএস-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত ২০২৪-২৫ আই-লিগ মৌসুমের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তিকে আরও বিলম্বিত করতে পারে। সিএএস, যিনি লুসানে অবস্থিত একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া সংক্রান্ত আইনি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পরিচিত। এই মামলাটি ভারতীয় ফুটবলের এখতিয়ার থেকে বেরিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশিতে চলে যাবে, যা এআইএফএফ-এর প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। সিএএস-এ মামলা জেতার ক্ষেত্রে ইন্টার কাশি তিন পয়েন্ট ফিরে পেতে পারে, যা তাদের পয়েন্ট সংখ্যাকে ৪২-এ নিয়ে যাবে, এবং তারা চার্চিল ব্রাদার্সকে ছাড়িয়ে শিরোপা জিততে পারে। এটি আই-লিগের ফলাফল এবং আইএসএল প্রোমোশনের উপর বড় প্রভাব ফেলবে।
ফুটবল সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের পর সামাজিক মাধ্যমে ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু সমর্থক চার্চিল ব্রাদার্সের শিরোপা জয় উদযাপন করলেও, অনেকে ইন্টার কাশির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে এআইএফএফ-এর প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছে। কেউ কেউ এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যিনি রায়ের আগেই চার্চিল ব্রাদার্সকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ইন্টার কাশির সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে সিএএস-এ মামলা জিতলে তারা শিরোপা ফিরে পাবে এবং এআইএফএফ-এর উপর জরিমানা বা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হতে পারে।
ইন্টার কাশির সিএএস-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভারতীয় ফুটবলে একটি নজির স্থাপন করতে পারে। এই ঘটনা এআইএফএফ-এর প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। যদিও চার্চিল ব্রাদার্স বর্তমানে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষিত হয়েছে, ইন্টার কাশির আইনি লড়াই এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। সিএএস-এর রায় এখন ভারতীয় ফুটবল সম্প্রদায়ের জন্য অপেক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এটি ২০২৪-২৫ আই-লিগ মৌসুমের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে।
To read only sports news, visit Sports 24X7.