ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল, ব্লু টাইগ্রেস, এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ ২০২৬ (AFC-Qualifiers) কোয়ালিফায়ারে তাদের অভিযান শুরু করেছে মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩-০ গোলের এক ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে। সোমবার, থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের ৭০০তম অ্যানিভার্সারি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ভারত প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিল।
এই জয় এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপের (AFC-Qualifiers) ইতিহাসে (ফাইনাল রাউন্ড ও কোয়ালিফায়ার) ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে, ১৯৯৭ ও ২০০৫ সালে গুয়ামের বিরুদ্ধে ১০-০ গোলের জয় ছিল ভারতের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ম্যাচে ভারতের হয়ে পিয়ারি জাক্সা (২৯’, ৪৫’, ৪৬’, ৫২’, ৫৫’) পাঁচটি গোল করেন, যা তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের প্রমাণ।
সৌম্যা গুগুলোথ (২০’, ৫৯’) এবং প্রিয়দর্শিনী সেল্লাদুরাই (৭৩’, ৮৬’) দুটি করে গোল করেন। এছাড়া, সঙ্গীতা বসফোর (৮’), রিম্পা হালদার (৬৭’), মালবিকা (৭১’), এবং গ্রেস ডাংমেই (৭৫’ পেনাল্টি) একটি করে গোল যোগ করেন। ম্যাচের শুরু থেকেই ভারত দাপটের সঙ্গে খেলা শুরু করে। মাত্র ৮ মিনিটে সঙ্গীতা বসফোর সৌম্যার ক্রস থেকে হেড করে প্রথম গোলটি করেন।
২০ মিনিটে সৌম্যা নিজেই রিম্পা হালদারের ক্রসে একটি শক্তিশালী ভলি মেরে গোল করেন, যা পোস্টে লেগে জালে জড়ায়। এরপর পিয়ারি সৌম্যার কাট-ব্যাক থেকে ২৯ মিনিটে গোল করে ভারতের লিড বাড়ান। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে তিনি দূরপাল্লার একটি দুর্দান্ত শটে গোল করে ভারতকে ৪-০ গোলে এগিয়ে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে ভারত আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মাত্র এক মিনিটের মধ্যে পিয়ারি গ্রেস ডাংমেইয়ের ক্রসে ভলি করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। ৫২ ও ৫৫ মিনিটে তিনি আরও দুটি গোল করে নিজের গোল সংখ্যা পাঁচে নিয়ে যান। সৌম্যা ৫৯ মিনিটে মঙ্গোলিয়ার গোলকিপারের ভুলের সুযোগে গোল করে ভারতের অষ্টম গোলটি করেন।(AFC-Qualifiers)
এরপর কোচ ক্রিস্পিন চেত্রী কিছু পরিবর্তন আনেন। তিনি সেন্টার-ব্যাক পূর্ণিমা কুমারী, প্রিয়দর্শিনী, এবং মালবিকাকে মাঠে নামান। পরে রঞ্জনা চানু এবং গোলকিপার মোনালিশা দেবীকেও খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। এই পরিবর্তনগুলো ভারতের আক্রমণের ধার কমায়নি। রিম্পা, মালবিকা, এবংপ্রিয়দর্শিনী দ্রুত তিনটি গোল যোগ করেন, যার ফলে ভারতের গোল সংখ্যা দশ ছাড়িয়ে যায়।
৭৫ মিনিটে গ্রেস ডাংমেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ভারতকে ১২-০ গোলে এগিয়ে দেন। ম্যাচের শেষ দিকে প্রিয়দর্শিনী তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করে ভারতের ১৩তম গোল নিশ্চিত করেন। ভারতের এই জয় তাদের গ্রুপ বি-তে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড, তিমুর লেস্তে, এবং ইরাক।(AFC-Qualifiers)
গ্রুপের শীর্ষ দলই অস্ট্রেলিয়ায় ২০২৬ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনাল টুর্নামেন্টে যোগ্যতা অর্জন করবে। এই টুর্নামেন্টটি ২০২৭ সালের ফিফা মহিলা বিশ্বকাপের জন্যও কোয়ালিফায়ার হিসেবে কাজ করবে। কোচ ক্রিস্পিন চেত্রী ম্যাচের পর বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি দুর্দান্ত শুরু। পিয়ারি, সৌম্যা, প্রিয়দর্শিনী, এবং পুরো দল অসাধারণ খেলেছে।
আমরা এখন পরবর্তী ম্যাচের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।” তিনি দলের তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মিশ্রণের প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের দলের গড় বয়স মাত্র ২৩.৬ বছর, তবে অভিজ্ঞতারও কোনো কমতি নেই। এই ম্যাচ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।”
ভারতের পরবর্তী ম্যাচ ২৯ জুন তিমুর লেস্তের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচেও ভারত তাদের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইবে। মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে এই জয় ভারতের শক্তিশালী আক্রমণ ও সুসংগঠিত প্রতিরক্ষার প্রমাণ। পিয়ারি জাক্সার পাঁচ গোল তাঁকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরেছে, যখন সৌম্যা ও প্রিয়দর্শিনী মতো খেলোয়াড়রা দলের গভীরতা প্রদর্শন করেছেন।
এই ম্যাচটি ভারতীয় মহিলা ফুটবলের জন্য একটি মাইলফলক (AFC-Qualifiers)। ২০০৩ সালের পর ভারত এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপে অংশ নেয়নি। ২০২২ সালে ভারত টুর্নামেন্টের আয়োজক হলেও কোভিড প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রথম ম্যাচের পর তাদের প্রত্যাহার করতে হয়। এই জয়ের মাধ্যমে ব্লু টাইগ্রেস অস্ট্রেলিয়ার পথে একটি শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে।
আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর কেউ তৈরি করতে পারে B-2 বম্বার! এই বিমানের বিশেষত্ব কী?
ভারতীয় ফুটবল সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে এই জয় উদযাপন করছেন। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ব্লু টাইগ্রেসের এই জয় ভারতীয় মহিলা ফুটবলের নতুন যুগের সূচনা। পিয়ারি জাক্সা অসাধারণ!” এই জয় ভারতের তরুণ প্রজন্মের জন্যও একটি প্রেরণা, যারা মহিলা ফুটবলকে একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার হিসেবে দেখছে। (AFC-Qualifiers) এই ঐতিহাসিক জয় ভারতীয় মহিলা ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। ব্লু টাইগ্রেস এখন তাদের গ্রুপে শীর্ষে থেকে এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।