বাংলা ক্রিকেটের (Bengal Cricket) ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করল বেঙ্গল প্রো টি২০ লিগের (Bengal Pro T20 League) দ্বিতীয় মরসুম। সোমবার কলকাতার এক অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত হল পুরুষ বিভাগের খসড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান, যেখানে রেকর্ড সংখ্যক — ৮০২ জন ক্রিকেটারকে ড্রাফট করা হয়েছে। এই আয়োজনের জাঁকজমক এবং পরিসর স্পষ্টই প্রমাণ করে দিচ্ছে, বাংলা ক্রিকেটে এই লিগের গুরুত্ব কতটা বেড়ে উঠেছে। বিশেষত এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ভারতীয় তারকা পেসার মহম্মদ শামিকে (Mohammed Shami) ঘিরে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের () সভাপতি স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি অমলেন্দু বিশ্বাস, সচিব নরেশ ওঝা, কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী এবং যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভারতের মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিএবির অ্যাপেক্স কাউন্সিল সদস্য, প্রাক্তন অফিস বেয়ারার এবং বিভিন্ন কমিটির চেয়ারপার্সনরা।
আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজি — সোবিস্কো মালদা, অ্যাডামাস হাওড়া ওয়ারিয়র্স, শিলিগুড়ি স্ট্রাইকার্স, হারবার ডায়মন্ডস, শ্রাচি রাঢ় টাইগার্স, লাক্স-শ্যাম কলকাতা রয়্যাল টাইগার্স, মুর্শিদাবাদ কিংস এবং রশ্মি মেদিনীপুর উইজার্ডস নিজেদের দল গঠনে বেছে নিল প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের। প্রতিটি বাছাই ছিল অত্যন্ত কৌশলগত এবং দীর্ঘ পরিকল্পনার ফল।
দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ভারতীয় তারকা পেসার মহম্মদ শামিকে শ্রাচি রাঢ় টাইগার্সের দলে নেওয়া। এই সিদ্ধান্তের পরেই দলের পেস বিভাগে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং অনেকেই বলছেন, শামির সংযুক্তি লিগে নতুন উত্তেজনা যোগ করবে।
এই খসড়া নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন লিগ কমিটির সদস্যরা — দীপ চ্যাটার্জী, শুভ্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা ব্যানার্জি, কেয়া রায়, সুরজিত লাহিড়ী, অম্বরীশ মিত্র, সৌমেন্দু চ্যাটার্জী এবং জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁদের সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়।
তবে এই বছরের খসড়ার আরেকটি দিক ছিল সত্যিই অনন্য — বাংলা সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘অরিভা স্পোর্টস’ এবং ‘দীপ প্রকাশন’ যৌথভাবে লিগের ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত করেছে বাংলার প্রিয় কমিক চরিত্র ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-কে। নারায়ণ দেবনাথের অমর সৃষ্টি বাঁটুল এবার মাঠে নামছে, ব্যাট-বলের প্রতীক হয়ে। এই সিদ্ধান্ত বাংলা ক্রিকেট এবং বাংলা সংস্কৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন তৈরি করেছে।
সিএবি সভাপতি স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এই ঐতিহাসিক দিনে বর্তমান ও প্রাক্তন সকল ক্রিকেট প্রশাসকদের, আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। এবারের খসড়া শুধুমাত্র সংখ্যার নিরিখে নয়, ভাবনার দিক থেকেও এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর অন্তর্ভুক্তি আমাদের শৈশবের স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনছে, আবার ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তৈরির পথও খুলে দিচ্ছে। আমরা দীপ প্রকাশন ও অন্যান্য অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞ। চলুন, এই লিগে আমরা বাঁটুলের শক্তি আর সাহস নিয়ে মাঠ কাঁপাই।”
সব মিলিয়ে, প্রতিভা, ঐতিহ্য এবং জনপ্রিয়তার অনন্য মিশ্রণে সাজানো বেঙ্গল প্রো টি২০ লিগের দ্বিতীয় মরসুম এক গভীর সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া আন্দোলনের সূচনা করল। এই লিগ শুধু খেলোয়াড়দের নয়, গোটা বাংলা সমাজের জন্যই এক গর্বের অধ্যায় হয়ে উঠতে চলেছে।