এশিয়ান কাপের (AFC Asian Cup 2027) যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে ভারতীয় ফুটবল দলের (ndian Football Team) সামনে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে সোমবার। সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri), সন্দেশ ঝিঙ্গান, অনিরুদ্ধ থাপাদের নিয়ে গঠিত মানোলো মার্কুয়েজের (Manolo Marquez) দল মুখোমুখি হবে সদ্য সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জয়ী বাংলা (Bengal) দলের। ম্যাচটি নিছক এক প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও এর তাৎপর্য অনেক বড়, বিশেষ করে জাতীয় দলের তরুণ ফুটবলারদের জন্য।
ভারতীয় কোচ মানোলো মার্কুয়েজ কলকাতায় এই প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর আয়োজন করতে চেয়েছিলেন স্পষ্ট উদ্দেশ্যে—দল গঠন প্রক্রিয়ায় খেলোয়াড়দের কার্যকারিতা যাচাই করা। তাই সোমবারের ম্যাচে দেখা যেতে পারে সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলার রণনীতি। মনে করা হচ্ছে প্রথমার্ধে এক দল, দ্বিতীয়ার্ধে আরেক দল—এইভাবে কোচ পরীক্ষা করে নিতে চান সব ফুটবলারদের। বিশেষত যারা দীর্ঘদিন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের বাইরে ছিলেন।
সুহেল ভাট, নিখিল প্রভু, বিক্রম প্রতাপ সিংদের মতো তরুণদের সামনে এই ম্যাচগুলো হয়ে উঠতে পারে স্বপ্নপূরণের মঞ্চ। থাইল্যান্ড সফরের দলে জায়গা পেতে হলে, মানোলোকে প্রমাণ করতে হবে এখানেই। আর যদি ছাপ ফেলতে পারেন, তাহলে জাতীয় দলের মূল স্কোয়াডে ঢোকার দরজাও খুলে যেতে পারে।
বাংলার কোচ সঞ্জয় সেন জানেন, তাঁর দলের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের সেরা ফুটবলাররা। তবে তা সত্ত্বেও তিনি আত্মবিশ্বাসী সুরে বলেন, “তিন দিনের অনুশীলনে কী হবে জানি না, কিন্তু ছেলেরা নিজেদের উজাড় করে দেবে। জাতীয় কোচের সামনে পারফর্ম করার সুযোগ জীবনে বারবার আসে না। তাই ফলাফলের চেয়ে ভালো লড়াই দেওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য।”
বাংলা দলের রবি হাঁসদা, চাকু মান্ডিরা এই সুযোগ পেয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। মরসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও যখন জানা গেল সুনীলদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে, তখন নতুন করে অনুশীলনে ফেরেন নরহরি শ্রেষ্ঠা, রাজা ঘোষরা। সঞ্জয় সেনের ডাকে মাত্র তিন দিনের জন্য হলেও তারা শিবিরে অংশ নেন, লক্ষ্য একটাই—জাতীয় দলের সামনে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ।
এই ম্যাচ শুধু ভারতীয় দলের প্রস্তুতির অঙ্গ নয়, বরং বাংলার ফুটবলারদের জন্যও এক বিরল সুযোগ। তারা জানেন, একটা ভালো পারফরম্যান্স জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের খেলোয়াড়দের জন্য এটি ভবিষ্যতের দরজা খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
এরপর মঙ্গলবার ভারতীয় দল আরও একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বলে জানা গিয়েছে। যদিও প্রথমে এই ম্যাচটি নৈহাটি স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা ছিল, পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে রাজারহাটে অবস্থিত সেন্টার ফর এক্সিলেন্সে। উদ্দেশ্য একটাই—এশিয়ান কাপের যোগ্যতা পর্বের আগে যতটা সম্ভব ম্যাচ অনুশীলন করে ফেলা।
তবে ভারতের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আশাব্যঞ্জক নয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র মানোলোদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তাই আগামী ম্যাচগুলোতে আরও সংগঠিত ও কার্যকর দলে পরিণত হওয়াটাই এখন মূল লক্ষ্য।
সোমবারের প্রস্তুতি ম্যাচ তাই এক অর্থে ‘সিলেকশন ম্যাচ’—যেখানে শুধু জয় নয়, বরং খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের নিরিখে ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারিত হতে চলেছে। তরুণদের জন্য এটি হতে পারে জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত, আর সিনিয়রদের জন্য ছন্দে ফেরার এক অনন্য সুযোগ।
সব মিলিয়ে, সুনীলদের বিরুদ্ধে বাংলার ম্যাচ শুধু একটি প্রস্তুতি ম্যাচ নয়, বরং তা ভারতীয় ফুটবলের আগামী দিনের রূপরেখা নির্ধারণের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।