দুই মাসের কঠোর পরিশ্রম, অনুশীলন ও প্রস্তুতির পর অবশেষে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দল (Indian Football Team) সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে (SAFF U19 Championship) শিরোপা ছিনিয়ে নিল। তবে এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল দলীয় আত্মবিশ্বাস ও কঠিন মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রাখার দক্ষতা। ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে, আর সেখানেই ভারতের জয় নিশ্চিত হয়।
২০২৫ সালের ১৮ মে অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) ইটানগরের গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে ভারতীয় দলের প্রশংসায় ভাসলেন কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেজ (Bibiano Fernandes)। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা জানতাম এটি সহজ ফাইনাল হবে না। বাংলাদেশ দুর্দান্ত একটি দল, তারা গোল খেয়ে ফিরে এসেছিল, যা তাদের মানসিক শক্তির পরিচয় দেয়। কিন্তু আমাদের ছেলেরা অসাধারণ চরিত্র দেখিয়েছে পুরো ৯০ মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়ে।”
ফার্নান্দেজের অধীনে এটি ছিল ভারতের চতুর্থ জুনিয়র সাফ শিরোপা। তিনি জানান, “আমি ছেলেদের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছিলাম। বিশেষ করে গোলকিপার সুরজ সিং আহেইবামকে নিয়ে আমি আশাবাদী ছিলাম। সে অনুশীলনে পেনাল্টি ঠেকানোর সময় দারুণ পারফর্ম করেছে। আমি জানতাম সে আমাদের গর্বিত করবে।”
তবে এই চ্যাম্পিয়নশিপ শুধু মাঠেই জয় নয়, মাঠের বাইরেও বড় এক জয় পেয়েছে ভারতীয় দল। অরুণাচল প্রদেশের দর্শকরা যেন প্রাণ ঢেলে দিয়েছিল তাদের সমর্থনে। কোচ ফার্নান্দেজ বলেন, “আমি কখনোই ভারতে কোনো জুনিয়র ম্যাচে এত দর্শক দেখিনি। অরুণাচলবাসী আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, তা জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। আমি এই জয়টি অরুণাচলের সব ফুটবলপ্রেমী দর্শকদের উৎসর্গ করতে চাই। তারা আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, আমাদের ঠেলেছে সামনের দিকে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই ধরনের অভিজ্ঞতা তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে। আমরা চাই আরও অনেক ওমাং ডোডুমের মতো খেলোয়াড় উঠে আসুক এই অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।”
ওমাং ডোডুম, যিনি নিজেই অরুণাচল প্রদেশ থেকে উঠে এসেছেন, এই টুর্নামেন্টে ভারতের অন্যতম উজ্জ্বল মুখ ছিলেন। তাঁর পারফরম্যান্স স্থানীয় তরুণদের কাছে এক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
এই বিজয়ের পর ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দল এখন প্রস্তুতি শুরু করবে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের জন্য, যা আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে। ফার্নান্দেজ বলেন, “ভারতে প্রতিভার কোনো অভাব নেই। সঠিক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা একদিন বিশ্বকাপের মূল মঞ্চেও পা রাখতে পারব। এটাই আমাদের চূড়ান্ত স্বপ্ন।”
মাঠের লড়াই যেমনই হোক না কেন, বিবিয়ানো ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে ভারতীয় যুবদল যে শুধুই খেলোয়াড় নয়, মানসিকভাবে দৃঢ় এক দল সৈনিক হয়ে উঠেছে, সেটাই প্রমাণিত হলো এই ফাইনালে। আর সেই যুদ্ধে সাহস জুগিয়েছে অরুণাচলের মানুষ, যাদের ভালোবাসা আর সমর্থন যেন ছিল আরও একটি অদৃশ্য খেলোয়াড় মাঠে।
এই অর্জন নিঃসন্দেহে ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি বড় সাফল্য এবং তা নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য একটি স্বপ্ন দেখাবে—জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠ কাঁপানোর স্বপ্ন।