এশিয়ান কাপে ফেরার লড়াইয়ে ডাক দিলেন ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল তারকা

লালরিনজুয়ালা ছাংতে (Lallianzuala Chhangte) ভারতীয় ফুটবল (Indian Football Team) অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নাম। মিজোরামের এই উইঙ্গার শুধু দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেননি।…

Indian Football Team player Lallianzuala Chhangte aims AFC Asian Cup 2027

লালরিনজুয়ালা ছাংতে (Lallianzuala Chhangte) ভারতীয় ফুটবল (Indian Football Team) অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নাম। মিজোরামের এই উইঙ্গার শুধু দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেননি। বরং কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন বহু তরুণ ফুটবলারের কাছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের মধ্যেও ছাংতে যেন আলোর রেখা। তিনি এই অভিজ্ঞতাকে দেখেছেন শেখার সুযোগ হিসেবে এবং এখন তার লক্ষ্য ২০২৭ সালের এশিয়ান কাপে (AFC Asian Cup 2027) যোগ্যতা অর্জনের জন্য দেশের জন্য আবার লড়াই করা।

২০২৩ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত এএফসি এশিয়ান কাপ ছিল ছাংতের প্রথম অভিজ্ঞতা এই মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে। যদিও ভারতীয় দল তিনটি ম্যাচেই হেরে যায় এবং টুর্নামেন্টটি তাদের জন্য হতাশাজনক ছিল, তবু ছাংতের মতে এটি ছিল শেখার এক অনন্য সুযোগ। তিনি বলেন, “আমরা এশিয়ার সেরা দলগুলোর (অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তান ও সিরিয়া) সঙ্গে একই গ্রুপে ছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক কিছু শিখেছি। বিশেষ মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, চাপ সামলানো, আর দল হিসেবে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। সেটব্যাক আমাদের আরও ভালো খেলোয়াড় ও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছে।”

   

২০২৭ সালের লক্ষ্য

আগামী ১০ জুন হংকং বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত, যেটি হবে ২০২৭ সালের এশিয়ান কাপের কোয়ালিফায়ার। তার আগে ৪ জুন থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ব্লু টাইগার্সরা। ছাংতে বলেন, “এখন পুরো দলের মনোযোগ একটাই — যোগ্যতা অর্জন করা। ক্যাম্পের পরিবেশ দারুণ, সবাই মনোযোগী, অনুপ্রাণিত এবং প্রস্তুত। ব্যর্থতার পর সবার মধ্যে একটা জেদ কাজ করছে — সবকিছু বদলে দেওয়ার। সবাই আমাদের সমর্থন করছেন।”

৯ বছরের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা

মাত্র ১৮ বছর বয়সে ২০১৫ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে অভিষেক হয় ছাংতের। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই নেপালের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে চমকে দিয়েছিলেন ফুটবলপ্রেমীদের। আজ ৪২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলা এই ২৭ বছর বয়সী তারকা ভারতের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। বর্তমান স্কোয়াডে শুধু সুনীল ছেত্রী ও সন্দেশ ঝিঙ্গন তাঁর চেয়ে আগে জাতীয় দলে অভিষেক করেছিলেন।

ছাংতে বলেন, “জাতীয় দলের হয়ে খেলা একজন ফুটবলারের জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান। আমি প্রতিবার যখন ভারতীয় জার্সি পরি, তখন নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমি প্রতিদিন চেষ্টা করি যেন দেশকে গর্বিত করতে পারি।”

চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা

দেশবাসীর প্রত্যাশা এখন ছাংতের প্রতি অনেক বেশি। কিন্তু তিনি এই চাপকে উৎসাহ হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, “যখন প্রত্যাশা বাড়ে, তখন বুঝি আমি সাধারণ খেলোয়াড় নই। আমি অহঙ্কার করছি না, কিন্তু যখন ক্লাব ও দেশের হয়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলি, তখন কোচ, সমর্থক এবং সতীর্থদের প্রত্যাশা বাড়ে আমি সেটাকে উপভোগ করি। এটা আমাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করে।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, “ছেত্রী ভাই ও সন্দেশ ভাই আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা। আমি তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি পেশাদারিত্ব, নেতৃত্ব, এবং মাঠের বাইরের আচরণ।”

ক্লাব পর্যায়ের সাফল্য

মুম্বই সিটি এফসির হয়ে ছাংতের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। তিনি জিতেছেন আইএসএল শিল্ড, কাপ এবং Player of the League পুরস্কার। আইএসএলে ৪৬ গোল করে তিনি সুনীল ছেত্রীর পর ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তার গোলসংখ্যা আট, যা বর্তমান স্কোয়াডে ছেত্রীর পর সর্বাধিক।

প্রতিটি গোলের পর ছাংতের গোল সেলিব্রেশনের একটি নির্দিষ্ট ধরণ আছে — আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাসী মানুষ। যখন গোল করি, আমি জানি সেটি কোথা থেকে এসেছে। অনেক সময় নিজেই বুঝি না, কোথা থেকে সুযোগটা এল। তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘ঈশ্বর, এটা তোমার কাজ।’ আমি কৃতজ্ঞ থাকি, ঈশ্বর সবসময় আমার পাশে আছেন।”

লালরিনজুয়ালা ছাংতে এখন শুধু একজন ফুটবলার নন, বরং একজন পথপ্রদর্শক। দেশের যুব প্রজন্মের কাছে তিনি অনুপ্রেরণা, যে দেখিয়ে দিয়েছে অধ্যবসায়, বিশ্বাস এবং সঠিক মানসিকতা দিয়ে যেকোনো উচ্চতায় পৌঁছানো সম্ভব।

২০২৭ সালের এশিয়ান কাপের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো ভারতীয় ফুটবল দল। আর এই অভিযানে ছাংতে হতে পারেন ভারতের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। তাঁর লক্ষ্য এখন শুধু গোল করা নয়, বরং দলের তরুণদের পথ দেখানো এবং দেশের হয়ে আরও একবার গর্বের সঙ্গে খেলাটা উপভোগ করা।