র‍্যাঙ্কিংকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সঙ্গীতার জোড়া গোলে ইতিহাস গড়ল ভারতীয় মেয়েরা

সাহস, পরিশ্রম আর অদম্য লড়াইয়ের ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল (Indian Football Team) শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় এক সোনালি অধ্যায়ের রচনা করল। থাইল্যান্ডকে (Thailand ) ২-১ গোলে হারিয়ে…

Indian Football Team beat Thailand by 2-1 with qualify to AFC Womens Asian Cup 2026 at Australia

সাহস, পরিশ্রম আর অদম্য লড়াইয়ের ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল (Indian Football Team) শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় এক সোনালি অধ্যায়ের রচনা করল। থাইল্যান্ডকে (Thailand ) ২-১ গোলে হারিয়ে ২০২৬ এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপে (AFC Womens Asian Cup 2026) নিজেদের জায়গা পাকা করল ‘ব্লু টাইগ্রেসরা (Blue Tigresses)। শুধু জয় নয়, ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেক উপরে থাকা দলকে হারিয়ে এই সাফল্য ভারতীয় মেয়েদের ফুটবল ইতিহাসে হয়ে রইল এক অনন্য মাইলফলক।

থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে নামার আগে ভারতীয় দল ছিল দারুণ আত্মবিশ্বাসী। আগের তিন ম্যাচে ২২ গোল করে ফুরফুরে মেজাজে থাকা মনীষা কল্যাণ, সন্ধ্যা রঙ্গনাথন, আশালতা দেবী, সঙ্গীতা বাসফোররা মাঠে নামেন জয় নিয়েই। যদিও কাগজে-কলমে থাইল্যান্ড ছিল পরিষ্কার ফেভারিট, কারণ তারা ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪৬ নম্বরে, আর ভারত ৭০ নম্বরে। তবে মাঠে নেমে ভারত শুরু থেকেই বুঝিয়ে দেয় যে আজকের ম্যাচটা শুধুই একটা খেলার লড়াই নয়, এটা এক স্বপ্নপূরণের লড়াই।

   

প্রথমার্ধে দুই দলই আক্রমণাত্মক খেলা চালায়। থাইল্যান্ড একাধিকবার ভারতের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করে, তবে ভারতীয় রক্ষণভাগ এবং গোলকিপার পন্থই চন্দ প্রথম থেকেই সতর্ক ছিলেন। ২৪ মিনিটে একটি সহজ সুযোগ হারানোর পর ২৯ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোলটি আসে বাংলার মেয়ে সঙ্গীতা বাসফোরের পা থেকে। তাঁর দূরপাল্লার শট জালে জড়িয়ে ভারতের স্বপ্নের যাত্রা শুরু করে। এরপর ভারত আরও দুইবার সুযোগ পেলেও ব্যবধান বাড়াতে ব্যর্থ হয়। বিরতিতে যাওয়ার আগে ৪৫ মিনিটে থাইল্যান্ড গোলের একটি সুবর্ণ সুযোগ মিস করে এবং প্রথমার্ধ শেষে ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভারতের রক্ষণে একটু ঢিলেমি দেখা যায়। ৪৭ মিনিটে চ্যাটচাওয়ানের একটি সাধারণ ক্রস ভুল বোঝাবুঝিতে জালে ঢুকে যায় এবং ম্যাচ সমতায় ফিরে আসে। গোলকিপার পন্থই চন্দ বলের গতিপথ বুঝতে না পারায় এই গোল খাওয়া। কিন্তু ভারত হাল ছাড়ে না। একের পর এক আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে ম্যাচ এগিয়ে চলে। ৬৮ মিনিটে মনীষার নেওয়া দুর্দান্ত ফ্রি-কিক ফিরিয়ে দেয় থাই গোলকিপার, তবে ফিরতি বল পেয়ে সঙ্গীতা শট নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৭৪ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি আসে। কর্নার কিক থেকে শিলকি দেবীর মাথা ছুঁয়ে বল পৌঁছে যায় সঙ্গীতা বাসফোরের কাছে এবং তিনি মাথা দিয়েই জালে পাঠিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন। গোটা ভারতীয় শিবিরে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। এরপর ম্যাচের বাকি সময় থাইল্যান্ড বারবার আক্রমণ চালায়, কিন্তু ভারতের রক্ষণদুর্গ একটুও টলেনি। বিশেষ করে শেষ দশ মিনিটে ভারতীয় ডিফেন্ডারদের লড়াই ছিল প্রশংসনীয়। ৮৫ মিনিটে অনজু তামাং গোলকিপারকে কাটিয়ে নেওয়ার পরও গোল করতে ব্যর্থ হন। যোগ করা সময়েও ভারত রক্ষণে জমে থেকে প্রতিপক্ষকে গোল করতে দেয়নি।

Advertisements

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে অনজু তামাং চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লে তাঁর বদলে নামেন মালবিকা। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় ডাগআউটে শুরু হয় উদযাপন। শুধু জয় নয়, এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ, এই জয় শুধু একটি টুর্নামেন্টে জায়গা পাওয়ার লড়াই ছিল না, বরং তা ছিল ভারতীয় মহিলা ফুটবলের আত্মবিশ্বাসের নতুন সূচনার দিন। এই ম্যাচ প্রমাণ করে দিল, পরিকল্পনা, অধ্যবসায় আর সাহস নিয়ে নামলে বিশ্বের যেকোনও প্রতিপক্ষকেই হারানো সম্ভব। ভারতীয় মেয়েদের ফুটবলে এই জয় এক নতুন দিগন্তের পথ দেখিয়ে দিল।

Indian Football Team beat Thailand by 2-1 with qualify to AFC Womens Asian Cup 2026 at Australia