মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan) যে শুধুমাত্র আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই দল গড়ে তা নয়। এক্ষেত্রে তারা ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) ভবিষ্যত গড়ার কাজেও সমান মনোযোগী। এবারের সুপার কাপেই (Super Cup 2025) তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মিলেছে। প্রথম সারির অনেক খেলোয়াড়কে বিশ্রামে রেখে দ্বিতীয় সারির খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠন করে মোহনবাগান কেরালা ব্লাস্টার্সের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে সেমি ফাইনালে পৌঁছে যাবে, তা অনেকেই ভাবেনি। কিন্তু আশিক কুরুনিয়ান, সাহাল, দীপক টাংরিদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে দীপেন্দু, আমনদীপ, সালাউদ্দিন, সুহেল ভাটদের মতো উঠতি প্রতিভার মেলবন্ধন মোহনবাগানকে এনে দিল এক চমকপ্রদ জয়।
সুপার কাপের ম্যাচে মাত্র এক বিদেশি ফুটবলারকে রেখেই যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোহনবাগান খেলেছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ছিলেন তরুণ এবং তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ। তবুও তাঁদের পারফরম্যান্স এতটাই পরিণত ও আত্মবিশ্বাসী ছিল যে কেরালা ব্লাস্টার্সের হেভিওয়েট স্কোয়াডও হার মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই জয়ে যেমন ফুটবলারদের পরিশ্রম ও প্রতিভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তেমনি সিনিয়র খেলোয়াড়দের গাইডেন্স ও অনুপ্রেরণাও ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আইএসএলে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে ফাইনালে আশিক কুরুনিয়ানের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামা ছিল টার্নিং পয়েন্ট। সেই ম্যাচে তাঁর উপস্থিতিতেই দল নতুন উদ্যমে খেলতে শুরু করে এবং শেষমেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। সুপার কাপে সেই ধারাই বজায় রেখেছেন তিনি। সুহেল ভাটের করা গোলের পিছনে ছিল আশিকের নিখুঁত পাস। অন্যদিকে সাহাল করেন এক দুর্দান্ত গোল, যেটি দলের মনোবল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। সিনিয়ররা নিজেদের ভূমিকা শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও যথাযথভাবে পালন করেছেন।
ম্যাচের পরে আশিক কুরুনিয়ান জানিয়েছিলেন, “মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের মধ্যে এখন জয়ের মানসিকতা গড়ে উঠেছে। মাঠে নামলেই আমরা জিততে চাই – এটাই আমাদের মন্ত্র। মরসুমের শুরু থেকেই আমাদের একটাই লক্ষ্য থাকে – ট্রফি জয়। ম্যাচে কী হবে, সেটা নিয়ে আমরা ভাবি না। আমরা ভাবি কীভাবে জিতে মাঠ ছাড়ব।” তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে দলের মনোবল এখন তুঙ্গে এবং খেলোয়াড়দের মানসিকতা একেবারেই পেশাদার।
মোহনবাগানের কোচিং স্টাফ এবং ম্যানেজমেন্টও প্রশংসার দাবিদার। তাঁরা দলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তরুণ খেলোয়াড়দের এই সুযোগ দিয়েছেন। তাঁরা শুধু মূল দলকেই সাফল্য এনে দেওয়ার চেষ্টা করছেন না, বরং তরুণ প্রতিভাদের সুযোগ দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য এক শক্তিশালী ব্যাকআপ গড়ে তুলছেন। এই পদ্ধতিই ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
অন্যদিকে কেরালা ব্লাস্টার্সের কোচ কয়েকদিন আগেই জানিয়েছিলেন যে তিনি ভারতীয় ফুটবলারদের উন্নতির দিকটি তাঁর কাজের মধ্যে গণ্য করেন না, বরং বিদেশিদের ওপর ভরসা রেখেই দল সাজাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ১০ জন ভারতীয় খেলোয়াড় নিয়ে গড়া মোহনবাগান সেই ‘হেভিওয়েট’ দলকে হারিয়ে দিল।
মোহনবাগান শুধু একটি ক্লাব নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান যা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে চলেছে। তাদের এই সাফল্য শুধু ক্লাবের নয়, গোটা দেশের ফুটবলের উন্নতির দিশা দেখায়। সুপার কাপ ২০২৫ তাদের এই অভিযান এখন শুধুই ট্রফির দিকে এগিয়ে চলা, আর সেই যাত্রার প্রধান রসদ – জয় করার মানসিকতা।