মাত্র তিন বছরের পথচলা। তবুও ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) মঞ্চে দ্রুত গতিতে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে ডায়মন্ড হারবার এফসি (Diamond Harbour FC)। এবার তাদের সামনে এক ঐতিহাসিক সুযোগ, ১৩৪তম ডুরান্ড কাপে (Durand Cup 2025) অভিষেক ঘটাতে চলেছে ক্লাব। আগামী ২৮ জুলাই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে কলকাতারই আর এক শক্তিশালী দল মহামেডান স্পোর্টিং বিরুদ্ধে।
ডুরান্ড কাপে গ্রুপ বি’তে ডায়মন্ড হারবার এফসি রয়েছে শক্তিশালী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, মহামেডান স্পোর্টিং এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ফুটবল দলের সঙ্গে। কঠিন এই গ্রুপের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মরিয়া নবাগত দল হিসেবে ডায়মন্ড হারবার।
ক্লাবের স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনার নেতৃত্বে প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখছে না ডায়মন্ড। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের ডুরান্ড কাপে অংশগ্রহণ, দলগত পরিকল্পনা নিয়ে জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের অন্যতম মুখ্য কর্মকর্তা আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মিকেল কোর্তাজা, প্রাক্তন ভারতীয় স্ট্রাইকার জবি জাস্টিন, মিডফিল্ডার গিরিক খোসলা এবং নরহরি শ্রেষ্ঠা।
স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মিকেল কোর্তাজার হাতে তুলে দেওয়া হয় ডুরান্ড কাপে ব্যবহৃত হতে চলা নতুন জার্সি। ২৬ বছর বয়সী এই বাঁ পায়ের ডিফেন্ডার স্পেনের এসডি আমোরেবিয়েতার হয়ে খেলে এসেছেন এবং ভারতীয় ফুটবলে পা রাখার পর নিজের দক্ষতা প্রমাণের জন্য প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
স্পেনের আবহাওয়া আর ভারতের গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার পার্থক্য থাকলেও, তিনি জানান পেশাদার ফুটবলারের মতো দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত তিনি। তাঁর ফুটবল আইডল ইনিগো মার্টিনেজ, যাঁর খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ডিফেন্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন মিকেল।
ডায়মন্ড হারবার এফসির দ্রুত উত্থানের পেছনে প্রধান অবদান রাখছেন কোচ কিবু ভিকুনা এবং ক্লাবের অন্যতম পরিচালক আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। পৃষ্ঠপোষকতা বা বড় কর্পোরেট বিনিয়োগ ছাড়াও, স্পষ্ট পরিকল্পনা, বিদেশি ও দেশীয় প্রতিভার সঠিক সংমিশ্রণ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা তাঁদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ডুরান্ডে অংশ নেওয়ার আগে ডায়মন্ড হারবার ইতিমধ্যেই আই-লিগ ২ জিতে আই-লিগ ২০২৫-২৬ মরসুমে জায়গা করে নিয়েছে। এখন তাদের চোখ দেশের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা আইএসএলের দিকে। ডুরান্ড কাপ সেই স্বপ্নযাত্রারই এক বড় মঞ্চ হতে চলেছে।
বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ক্লাব সই করিয়েছে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ক্লেন্টন সিলভেইরাকে, যিনি ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলেছেন এবং ভাস্কো দা গামা, করিন্থিয়ান্সের মতো বড় ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এছাড়াও, শিগগিরই দলে যোগ দিতে চলেছেন স্লোভেনিয়ার অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার লুকা মাজসেন, যিনি আইএসএলে পাঞ্জাব এফসির হয়ে খেলে নিজের গোল স্কোরিং দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
দেশীয় ফুটবলারদের তালিকাতেও রয়েছে একাধিক পরিচিত মুখ— বি জাস্টিন, নরহরি শ্রেষ্ঠা, গিরিক খোসলা, লিয়ানসাঙ্গা রেনথলেই, সহ একাধিক পরিচিত মুখ। অভিজ্ঞতা ও যুবশক্তির সংমিশ্রণে গড়ে তোলা দল স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে নয়, প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে নামতে চলেছে।
ক্লাবের শীর্ষ কর্মকর্তা আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আমাদের হয়তো মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের মতো সমর্থকসংখ্যা নেই, কিন্তু ডায়মন্ড হারবার অঞ্চল জুড়ে প্রচুর ফুটবলপ্রেমী আছেন। সমর্থকরাও যেন খেলা উপভোগ করতে পারেন, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
ডুরান্ড কাপ শুধুই একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং এক আবেগ, ইতিহাস, এবং সুযোগের মঞ্চ। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ফুটবলের এক নতুন শক্তি হিসেবে উঠে আসতে চলেছে ডায়মন্ড হারবার এফসি। তারা এবার আর কেবল স্বপ্ন নয়, ছক ভেঙে বাস্তব গড়ার জন্য প্রস্তুত।
Indian Football Club Diamond Harbour FC Gears Up for Durand Cup 2025