লাল বলের ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টায় ব্যস্ত ভারতের একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঝলসে ওঠা প্রতিভারা এখন নজর দিচ্ছেন টেস্ট ক্রিকেটের পরিধিতে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার দিকে। এই তালিকায় নতুন নাম তিলক ভার্মা (Tilak Verma)। ভারতীয় ক্রিকেটের (Indian Cricketer) অন্যতম সম্ভাবনাময় বাঁ-হাতি ব্যাটার এবার ইংল্যান্ডের (England) ঐতিহ্যবাহী কাউন্টি ক্রিকেটে (County Cricket) নাম লিখিয়ে বড় মঞ্চের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন।
বর্তমানে জাতীয় দলের মূল টেস্ট স্কোয়াডে নেই বা ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচের সুযোগ পাচ্ছেন না, তাঁদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলার সুযোগ নিচ্ছেন। কারণ, নিরবচ্ছিন্ন ম্যাচ প্র্যাকটিস এবং কঠিন কন্ডিশনে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের থেকে বড় মঞ্চ আর হয় না। তিলক ভার্মাও সেই পরিকল্পনার পথেই হাঁটলেন।
হ্যাম্পশায়ারের সঙ্গে চুক্তি
ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি ক্লাবের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদী চুক্তি করেছেন তিলক ভার্মা। ২০২৫ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের চারটি ম্যাচে তাঁকে খেলতে দেখা যেতে পারে তাঁকে। যদিও তাঁর প্রাথমিক পরিচয় ভারতের সাদা বলের ক্রিকেটার হিসেবে। চারটি ওয়ানডে এবং ২৫টি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন এই তরুণ। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেট আর ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে এখনও অনেকটাই অজানা নাম তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র ১৮টি ম্যাচ খেলেছেন। তবুও তাঁর ব্যাটিংয়ের পরিণত ভঙ্গিমা এবং টেম্পারামেন্ট ক্রিকেট বোদ্ধাদের আশা জাগিয়েছে যে, টেস্ট ক্রিকেটেও তিলকের জায়গা পাকাপোক্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
ভারতীয় দলে জায়গার জন্য প্রস্তুতি
ভারতীয় দল এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডেই অবস্থান করছে। ২০ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ঐতিহাসিক পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। তরুণ অধিনায়ক শুভমন গিলের নেতৃত্বে ভারতের মূল টেস্ট দল ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তবে তিলক সেই দলে নেই। এখনই টেস্ট টিমে জায়গা না পেলেও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে চাইছেন তিনি। ইংল্যান্ডের সুইং-সিমিং কন্ডিশনে দীর্ঘ ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা তাঁকে একধাপ এগিয়ে দেবে, যদি জাতীয় নির্বাচকেরা ভবিষ্যতে তাঁকে লাল বলের ক্রিকেটে বিবেচনা করেন।
তরুণদের নতুন রাস্তায় হাঁটা
এই উদ্যোগ শুধু তিলকের একার নয়। এর আগেই ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, যিনি সম্প্রতি চোট কাটিয়ে ফিরেছেন, তিনিও কাউন্টি ক্রিকেটে সই করেছেন। জাতীয় দলে জায়গা না থাকা অবস্থায় বা অফ-সিজনে কাউন্টিতে খেলে নিজেকে প্রস্তুত রাখা নতুন প্রজন্মের ভারতীয় ক্রিকেটারদের অন্যতম কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ধরনের সুযোগ তরুণ ক্রিকেটারদের টেস্ট ক্রিকেটের মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্টি ক্রিকেটের চাপ, কন্ডিশন, পিচের বৈচিত্র্য – সব মিলিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতা, যা ভবিষ্যতে জাতীয় দলে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তিলকের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ
তিলক ভার্মার ব্যাটিং স্টাইল ইতিমধ্যেই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছে। বাঁ-হাতি হিসেবে মিডল অর্ডারে বোলারদের ওপর চাপ তৈরি করার ক্ষমতা তাঁর অন্যতম শক্তি। লাল বলের ক্রিকেটে যদি তিনি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন, তবে সাদা পোশাকেও তাঁকে দেখা যেতে পারে ভবিষ্যতে।
এই কাউন্টি সফর শুধু প্র্যাকটিস নয়, বরং নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে চলেছে। হ্যাম্পশায়ারের হয়ে খেলতে নামার সময় তিলকের কাছে সুযোগ থাকবে লাল বলে তাঁর স্কিল, ধৈর্য ও মানসিক দৃঢ়তা প্রমাণ করার। সফল হলে ভারতীয় টেস্ট দলে ঢোকার দরজাও খুলে যেতে পারে।