ভারতের (Indian Cricket Team) প্রাক্তন অধিনায়ক ও রেকর্ড গড়া ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি (Virat Kohli) শুধু মাঠেই নয়, ব্যবসা জগতেও নিজের দাপট দেখিয়েছেন। ২০১৭ সালে নিজের জার্সি নম্বর ‘১৮’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চালু করেন ‘ওয়ান৮’ ব্র্যান্ড, যা পরবর্তীতে লাইফস্টাইল, অ্যাথলেশিওর এবং খাবার-দাবার ব্যবসায়ও প্রবেশ করে। সেই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে ‘ওয়ান৮ কমিউন’ (One8 Commune), একটি প্রিমিয়াম রেস্তরাঁ চেইন, যা বর্তমানে দিল্লি, কলকাতা, পুনে, হায়দরাবাদ এবং বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) মতো বড় শহরে বিস্তৃত।
তবে এবার সেই ‘ওয়ান৮ কমিউন’ বেঙ্গালুরু শাখা আবারও আইন অমান্যের অভিযোগে বিতর্কে জড়াল। কুব্বন পার্ক এলাকার এই অভিজাত রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে কর্নাটক সরকারের তামাকবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে কুব্বন পার্ক থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রেস্তরাঁয় কোনও নির্দিষ্ট ধূমপান এলাকা ছিল না, যা ২০০৩ সালের ‘Cigarettes and Other Tobacco Products Act’ (COTPA) ৪ ও ২১ নম্বর ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
নিয়মভঙ্গের ধারাবাহিকতা
এটি প্রথম নয়, যখন কোহলির রেস্তরাঁ নিয়মভঙ্গের অভিযোগে চাপে পড়েছে। গত বছর, জুন মাসে একই রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ের বাইরে চালু রাখার অভিযোগে FIR দায়ের হয়। পরে ডিসেম্বরে, বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে (BBMP) পক্ষ থেকে রেস্তরাঁটিকে নোটিস পাঠানো হয়, কারণ সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উপযুক্ত ছাড়পত্র ছিল না।
এর কিছুদিন পর, গভীর রাতে উচ্চস্বরে গান বাজানো, রাত দেড়টা পর্যন্ত খোলা রাখা, এমনকি মুম্বই শাখায় তামিলনাড়ুর এক ব্যক্তিকে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠে আসে। সব মিলিয়ে, ‘ওয়ান৮ কমিউন’-এর বিরুদ্ধে বারবার নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠে আসছে, যা বিরাট কোহলির ব্র্যান্ড ইমেজের সঙ্গে একরকম সাংঘর্ষিক।
কড়াকড়ি কর্নাটক সরকারের
তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার রোধে সম্প্রতি কর্নাটক সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্যের সব হুক্কা বার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তামাকজাত দ্রব্য কেনার বয়সসীমা ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বেঙ্গালুরুর পুলিশ ওয়ান৮ কমিউনের উপর নজরদারি চালায় এবং ধূমপানের নির্দিষ্ট জায়গা না থাকার জন্য মামলা রুজু করে।
আইন কী বলে?
COTPA ২০০৩-এর ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও হোটেল, রেস্তরাঁ, বিমানবন্দর কিংবা পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ, যদি না সেখানে নির্দিষ্টভাবে পৃথক ধূমপান এলাকা নির্ধারিত থাকে। ২১ নম্বর ধারা সেই নিয়মভঙ্গের জন্য জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থার বিধান রাখে। বিরাট কোহলির রেস্তরাঁ এই দুই ধারা ভেঙেছে বলে অভিযোগ।
একাধিকবার নিয়মভঙ্গের অভিযোগ, সরকারি নোটিস এবং এখন তামাকবিরোধী আইনের মামলা—সব মিলিয়ে বিরাট কোহলির ‘ওয়ান৮ কমিউন’ আজ এক বিপজ্জনক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয়তা এবং গ্ল্যামার দিয়ে ব্যবসার সূচনা করা যায়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের জন্য চাই নিয়ম মেনে চলা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ।
ক্রিকেট মাঠের ‘ক্যাপ্টেন কোহলি’ কীভাবে এই অফ-ফিল্ড সমস্যার মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আগামী দিনে ওয়ান৮ কমিউন নিয়মমাফিক ব্যবসায় কতটা মনোযোগ দেয়, এবং পুনরাবৃত্ত এই সমস্যার থেকে মুক্ত হতে কী পদক্ষেপ নেয়—সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন আইনজীবী, ব্যবসায়ী মহল এবং তাঁর ভক্তকুল।