ভারতীয় ক্রিকেট দলের (Indian Cricket Team) একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav)। তার ঘূর্ণি বলের জাদু বহুবার ভারতকে জিতিয়েছে ম্যাচ। কিন্তু এই ক্রিকেটার যে একজন গভীর ফুটবল প্রেমী, বিশেষ করে মোহনবাগানের একজন নিষ্ঠাবান সমর্থক, তা অনেকেরই অজানা ছিল। রেভস্পোর্টজকে দেওয়া একান্ত সাখ্যাৎকারে কুলদীপ জানান, ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা থেকে মোহনবাগানের (Mohun Bagan) প্রতি টান, এবং টেস্ট দলে ফিরে আসার লক্ষ্যে তার প্রস্তুতির কথা।
মোহনবাগানের জন্য ভালোবাসা
কুলদীপ বলেন “মোহনবাগানের সমর্থকদের যে উন্মাদনা, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমি বহুবার গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছি, কারও নজরে না পড়ে, শুধু একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে খেলা উপভোগ করতে চেয়েছি। মোহনবাগান শুধু একটা ক্লাব নয়, এশিয়ার বুকে এটা একটা প্রতিষ্ঠান, একটা ইতিহাস।”
কুলদীপ আরও জানান, তিনি নিয়মিত ইউরোপের বড় বড় ফুটবল লীগ ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট দেখেন। কিন্তু মোহনবাগানকে সামনে থেকে দেখা, গ্যালারির উত্তেজনা অনুভব করা—এই অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বলেন, “কোভিডের সময় ফুটবল নিয়ে গভীরভাবে জানার সুযোগ পাই। ট্যাকটিক্স, পজিশনিং, গেম ম্যানেজমেন্ট এসব নিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। এমনকি অনেক কিছু আমার ক্রিকেটেও প্রয়োগ করি। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে আমি একটা ফুটবল টিম ম্যানেজ করতে পারি।”
হংকং বনাম ভারতের লড়াইয়ে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এই পাঁচ ফুটবলার
ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ও প্রস্তুতি
এই মুহূর্তে কুলদীপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, ইংল্যান্ডের মাটিতে আসন্ন পাঁচ টেস্টের সিরিজ। ৩১ বছরে পা রাখতে চলা এই চায়নাম্যান স্পিনার এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৩টি টেস্ট খেলেছেন। এর পেছনে কারণ একাধিক ইনজুরি, ও একই সঙ্গে দলে অশ্বিন ও জাদেজার মতো কিংবদন্তি স্পিনারের উপস্থিতি।
“হ্যাঁ, ফিরে আসাটা সহজ ছিল না। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ মিস করার পর আবার জাতীয় দলে ফিরতে পারাটা বিশেষ কিছু। আইপিএল ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের অভিজ্ঞতা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, কিন্তু টেস্ট সিরিজ খেলাটা একেবারে আলাদা স্তরের চ্যালেঞ্জ,” বলেন কুলদীপ।
তিনি আরও বলেন, “এখন আমি ব্যাটসম্যানদের পড়তে শিখেছি। টি-টোয়েন্টি খেলতে খেলতে এই দক্ষতা অর্জন করেছি, যা টেস্টেও কাজে লাগবে। কীভাবে ব্যাটসম্যানের পরবর্তী মুভ বুঝতে হয়, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
মানসিক প্রস্তুতি ও ইনজুরি থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা
“প্রথম ইনজুরির সময় খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু তারপরে শেখার চেষ্টা করেছি—নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে, প্রক্রিয়ার ওপর মন দিতে। এখন আমি অনেক বেশি শান্ত থাকি,” বলেন কুলদীপ।
তিনি জানান, বলের গতি, অ্যাঙ্গেল, এবং লেংথে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন নিজের বোলিংয়ে, যা সব ফরম্যাটেই কার্যকরী হয়েছে।
মেসি আবার ভারতে! কেরলে ক্রীড়ামন্ত্রীর পোস্টে তুঙ্গে জল্পনা
বিদেশের মাটিতে খেলার চ্যালেঞ্জ
ইংল্যান্ডের মতো কঠিন কন্ডিশনে খেলতে গেলে কৌশলে পরিবর্তন আনতেই হয়। সেই প্রসঙ্গে বলেন, “আমি সিমেন্ট উইকেটে বড় হয়েছি। তাই টার্ফ না পেলেও চলে। কিন্তু বিদেশে খেলার সময় রেভলিউশন, ড্রিফট ও ডিপের মতো জিনিসগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
ডিউক ও কুকাবুরা বল নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতাও শেয়ার করলেন। “ডিউক বল বেশ শক্ত, স্পিন বেশি হয় এবং ড্রিফট করে। কুকাবুরা আবার গ্রিপ ভালো দেয়, আমি এই বলটা বেশি পছন্দ করি। তবে প্রতিটি বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে।”
ব্যাটিংয়ে অবদান রাখতে প্রস্তুত
তিনি বলেন, “আমার টেকনিক ভালো, এবং আমি লাল বল নিয়ে ব্যাট করতে আত্মবিশ্বাসী। ব্যাট হাতে যদি দলকে ২০-৩০ রানও দিতে পারি, তাতেও অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়। আমি চেষ্টা করি প্রথম দু’ওভার টিকে থাকতে। তারপর আত্মবিশ্বাস আসে।”
চাপ না নিয়ে উপভোগ করার বার্তা
তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, “আপনি X-ফ্যাক্টর হতে পারেন”—তাতে কি চাপ বাড়ে? উত্তরে কুলদীপ হেসে বলেন, “না, একদমই না। আমি এটা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি শুধু নিজের সেরাটা দিতে চাই। ইংল্যান্ড খুব আক্রমণাত্মক খেলে, তাই সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু আমি বোলিং উপভোগ করি, সেটাই উইকেট এনে দেয়।”
একজন পেশাদার ক্রিকেটার হলেও, কুলদীপ যাদবের চোখে ফুটবলের জন্য যে ভালবাসা, তা অনন্য। মোহনবাগানের প্রতি তার যে আবেগ, তা শুধু একজন সমর্থক নয়, বরং একজন প্রকৃত ক্রীড়ানুরাগীর পরিচয় দেয়। আর ক্রিকেটে তার প্রত্যাবর্তনের যাত্রা, মানসিক দৃঢ়তা ও খেলায় পরিণতিপ্রাপ্ত পরিবর্তন—সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড সফরে তিনি ভারতের অন্যতম মূল অস্ত্র হতে পারেন, বিশেষ করে টেস্ট ফরম্যাটে।