ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket Team) নতুন এক ইতিহাসের সূচনা হল বার্মিংহামের এজবাস্টনে (Edgbaston)। তরুণ অধিনায়ক শুভমন গিলের (Shubman Gill) নেতৃত্বে ভারত ৩৩৬ রানে হারাল ইংল্যান্ডকে (England)। এটি শুধু বড় জয় নয়, বরং ইংলিশ মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাফল্য। দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে নেতৃত্বের নতুন ছক কষলেন নতুন অধিনায়ক গিল।
৫৮ বছরের অপেক্ষার অবসান, বার্মিংহামে প্রথম জয়
১৯৬৭ সালে প্রথমবার এজবাস্টনে টেস্ট খেলার পর আটটি ম্যাচে সাতটি হারের পর এই মাঠে জয় এল অবশেষে। শুধু তাই নয়, এর আগে এশিয়া মহাদেশের কোনও দলই এই মাঠে জয়ের মুখ দেখেনি। সেই রেকর্ড ভেঙে শুভমন গিল হলেন প্রথম এশীয় অধিনায়ক, যিনি এজবাস্টনে দলকে জয় এনে দিলেন। বার্মিংহামে এই জয়ের সঙ্গে ভারতের বিদেশের মাটিতে টেস্টে সবচেয়ে বড় জয় এটি।
অধিনায়ক গিলের দুই ইনিংসে দুই শতরান
লিডসে প্রথম টেস্টে হারের পর গিল ও গম্ভীরের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু শুভমন গিল দেখালেন, তিনি চাপের মুখে কতটা পরিণত। এজবাস্টনে প্রথম ইনিংসে ২৬৯ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে তিনিই ম্যাচের মূল নায়ক। নিজের ২৫তম টেস্টে অধিনায়ক হিসাবে অভিষেকেই জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি, আর তৈরি করলেন একাধিক রেকর্ড। এক টেস্টে সর্বোচ্চ (৪৩০) রান করে গাভাসকরকেও ছাড়িয়ে গেলেন।
আকাশ দীপের দুরন্ত স্পেল, গড়লেন ইতিহাস
বাংলার পেসার আকাশ দীপ এই টেস্টে ছিলেন ভারতীয় বোলিংয়ের বড় অস্ত্র। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট নিয়ে ১০ উইকেটের বিরল কীর্তি গড়লেন। ইংল্যান্ডে চেতন শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় যিনি এক টেস্টে ১০ উইকেট পেলেন। তাঁর বোলিং ফিগার (৪১.১-৪-১৮৭-১০) এখন ইংল্যান্ডে টেস্টে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সেরা।
মহম্মদ সিরাজের ধারাবাহিকতা ও নেতৃত্ব
বুমরাহ না থাকলেও ভারতীয় পেস আক্রমণের দায়িত্ব নিখুঁতভাবে সামলেছেন মহম্মদ সিরাজ। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ৪০৭ রানে থামিয়ে দেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট পেলেও তাঁর সুইং ও সিম মুভমেন্ট ইংলিশ ব্যাটারদের নাকাল করে তোলে। সিরাজ এই ম্যাচে মোট ৭টি উইকেট শিকার করেন।
রান–উইকেট দুই বিভাগেই দুর্দান্ত জাদেজা
প্রথম টেস্টে ব্যর্থ হলেও এজবাস্টনে জ্বলে উঠলেন রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম ইনিংসে ৮৯ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংস খেলে দলের ভিত গড়েন। সঙ্গে নেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এক ম্যাচে ১৫৮ রান এবং একটি উইকেট নিয়ে দলের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বড় অবদান রাখেন তিনি।
পন্থের ঝড়ো ইনিংস, দ্রুত রান তোলার দিশা দেখালেন
সেঞ্চুরি না পেলেও ঋষভ পন্থের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৮ বলে ৬৫ রানের ইনিংস ছিল ম্যাচের গতি নির্ধারক মুহূর্তগুলির অন্যতম। তাঁর এই ইনিংসেই ভারত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিয়ে নেয়। উইকেটের পেছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ নিয়েও নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন পন্থ।
ইংল্যান্ডের বিপর্যয়: বাজবল ব্যর্থ, প্রশ্নের মুখে অধিনায়ক স্টোকস
৬০৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড ২৭১ রানে অলআউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে কিছুটা লড়াই করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। বিশেষ করে আকাশ দীপ ও সিরাজের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে একে একে ধসে পড়ে ইংরেজ ব্যাটিং লাইনআপ।
এই জয়ের ফলে ২০২৫-২৭ চক্রের ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট টেবিলে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারত। দুটি ম্যাচে ১২ পয়েন্ট ও ৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে গিলের দল রয়েছে ভালো জায়গায়। ইংল্যান্ড নেমে গেছে পঞ্চম স্থানে। অস্ট্রেলিয়া এখনও শীর্ষে রয়েছে ১০০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে।
প্রথমবার টেস্টে ভারতের বিরল কীর্তি
৫৮৭ ও ৪২৭ রানের ইনিংস মিলিয়ে এই ম্যাচে ভারত এজবাস্টনে প্রথম দল হিসেবে ১০০০+ রান করল। টেস্ট ইতিহাসে এই পঞ্চম ঘটনা, কিন্তু ভারতের জন্য এটি প্রথম। এর আগে কেবল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানই এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিল।
সিরিজের তৃতীয় টেস্ট শুরু হবে ১০ জুলাই থেকে লর্ডসে। গিলের অধিনায়কত্ব, আকাশ দীপ-সিরাজের বোলিং ও ব্যাটিং ফর্ম থাকলে ভারত ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়ের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারে। শুভমন গিল ও গৌতম গম্ভীরের যুগলবন্দিতে ভারতীয় দল শুধু ম্যাচই জেতেনি, বদলেছে মনোভাব, খেলা ও ইতিহাস। এজবাস্টনের জয় ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
Indian Cricket Team make record at Edgbaston against England help Shubman Gill Double Century