লর্ডস টেস্ট (Lords Test) হল ঐতিহ্য, সম্মান আর ক্রিকেটীয় গৌরবের মঞ্চ। সেই ঐতিহাসিক মাঠেই ভারতীয় দল (Indian Cricket Team) হেরে বসল মাত্র ২২ রানে। তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের (England) বিরুদ্ধে এই হার শুধু পরাজয় নয়, বরং প্রশ্ন তুলে দিল ক্রিকেটারদের আত্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে। শেষ দিনে কার্যত একা লড়ে গিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। যদিও লর্ডসের এই হারের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ।
১. লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৯৩। সাধারণত এধরনের রান তাড়া করা ভারতের মতো ব্যাটিং ভারসাম্যপূর্ণ দলের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে যে দল প্রথম টেস্টে ৮০০’র উপর রান করেছে এবং দ্বিতীয় টেস্টেও প্রায় ৭০০ ছুঁয়েছে। তৃতীয় টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসও যথেষ্ট বড়, ৩৮৭। তবুও শেষ ইনিংসে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ধসে পড়ল গোটা ব্যাটিং অর্ডার। শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ, যশস্বী জয়সওয়াল কেউই দায়িত্ব নিতে পারলেন না। দলের প্রয়োজনে যে ধৈর্য ও পরিকল্পনা দরকার, সেটাই দেখা গেল না।
২. চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা মানেই চাপ, তা লর্ডস হোক বা লখনউ। এই ইনিংসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানসিক চাপ সামলানো। কিন্তু ভারতের তরুণ ব্যাটাররা বারবার ভেঙে পড়লেন। গিল, পন্থ, নীতীশ রেড্ডি, করুণ নায়ার—সবাই বলের গতি, সুইং ও বাউন্সের সামনে আত্মসমর্পণ করলেন। একমাত্র জাদেজা চেষ্টা চালিয়েছেন, কিন্তু একার প্রচেষ্টা তো যথেষ্ট নয়। ইংল্যান্ড বোলাররা একবার ছন্দে উঠতেই ভারতের ব্যাটিং লাইনে ভয় ঢুকে গেল।
৩. ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে যখন মনে হচ্ছিল তারা দ্রুত অলআউট হয়ে যাবে, তখন জেমি স্মিথ ও ব্রাইডন কার্সের ৮৬ রানের জুটি ম্যাচের রূপরেখা পাল্টে দেয়। দুই ব্যাটার অসাধারণ ধৈর্য ও স্ট্র্যাটেজিক ব্যাটিং দেখান। বুমরাহ ও সিরাজ তখন কিছুটা ক্লান্ত, আর ভারতীয় ক্যাপ্টেন গিল সেই মুহূর্তে পরিকল্পনার অভাব দেখিয়েছেন। এই অতিরিক্ত রানটাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।
৪. এজবাস্টনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েই কি ভারতীয় দল আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে? টেস্ট সিরিজের মাঝপথে এমন মানসিকতা ভয়ঙ্কর হতে পারে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু খেলোয়াড়ের অতি আগ্রাসী মনোভাব। শুভমন গিল নিজে যেমন একাধিকবার মাঠে মেজাজ হারিয়েছেন, তেমন সিরাজ ও নীতীশ রেড্ডিও ভুল সিদ্ধান্তে উইকেট খুইয়েছেন। ম্যাচের রাশ একাধিকবার নিজেদের দিকে টেনে এনে ভারত তা ধরে রাখতে পারেনি।এটাই প্রমাণ করে যে দল মানসিকভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না।
৫. লর্ডস টেস্টে নতুন বিতর্ক জন্ম দিল বল। ম্যাচের মাত্র দশ ওভার পরই বলের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিল, পুরনো হয়ে পড়ছিল। এর ফলে বুমরাহ, সিরাজদের মতো বোলারদের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছিল। বল যত পুরনো হয়েছে, সুইং কমে গেছে এবং পেসাররা ভুগেছেন। এই নিয়ে ম্যাচের মাঝেই ভারতীয় ক্যাম্পে আলোচনা শুরু হয়, যা হয়তো দলের মনঃসংযোগেও প্রভাব ফেলেছে। কোচ গৌতম গম্ভীর ও অধিনায়ক গিলকে ভবিষ্যতে এই ধরনের ‘off-field distraction’ মোকাবিলা করতে শিখতে হবে।
লর্ডসে এই হারের ফলে ভারত সিরিজেও পিছিয়ে পড়েছে। ম্যাচের অধিকাংশ সময় নিয়ন্ত্রণে রেখেও এমন হার একমাত্র তখনই সম্ভব, যখন টিম কম্বিনেশন, মানসিক দৃঢ়তা ও পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকে। রবীন্দ্র জাদেজার একার পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না, প্রয়োজন গোটা দলের সমন্বিত প্রয়াস। বল বিতর্ক, ব্যাটিং ধস, টেল এন্ডারদের রানে হাত খোলা—সব মিলিয়ে এই হার ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এখন দেখার বিষয়, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারতীয় দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না।
Indian Cricket Team loss at Lords Test against England where five key reasons behind the defeat