ইংল্যান্ডের (England) বিপক্ষে তাদের মাটিতেই প্রথমবারের মতো টি-২০ সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল (Indian Cricket Team)। বুধবার রাতে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ছয় উইকেটে জয় তুলে নিয়েই, এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিল হরমনপ্রীতের (Harmanpreet Kaur) নেতৃত্বাধীন ‘উইমেন ইন ব্লু’।
সিরিজ শুরুর আগে খুব কম মানুষই হয়তো ভাবতে পেরেছিলেন যে ভারত এই দাপট দেখাবে ইংল্যান্ডে। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডকে প্রথম এবং একমাত্রবার হারিয়েছিল ভারতীয় মহিলা দল টি-২০তে। এরপর প্রায় দুই দশক কেটে গিয়েছে, কিন্তু সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়নি তারা। এবার ইতিহাস গড়ে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাল হরমনপ্রীতের দল।
চতুর্থ টি-২০ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। কিন্তু ভারতীয় স্পিন ত্রয়ীর কড়া নিয়ন্ত্রণে কোনও ছন্দ খুঁজে পায়নি ইংরেজ ব্যাটাররা। রাধা যাদব, শ্রী চরণী এবং দীপ্তি শর্মা মিলে প্রতিপক্ষকে কার্যত দমিয়ে রাখেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে ম্যাচের সেরা হন রাধা। শ্রী চরণী (২-৩০) এবং দীপ্তি শর্মার (১-২৯) বোলিংও ছিল যথেষ্ট কার্যকর।
লর্ডসে স্বপ্নপূরণ পথে গিল, পাশে বিরাট-রোহিত জুটি!
পেসার আমনজোৎ কৌরও নিজের চার ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দখল করেন। ভারতের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও তীক্ষ্ণ ফিল্ডিং মিলিয়ে ইংল্যান্ড ২০ ওভারে ৭ উইকেটে মাত্র ১২৬ রান তুলতে সক্ষম হয়। সর্বোচ্চ রান আসে ওপেনার সোফিয়া ডাঙ্কলির ব্যাট থেকে—১৯ বলে ২২।
জবাবে, ভারতীয় ওপেনার স্মৃতি মন্ধানা ও শেফালি বর্মা শুরু থেকেই ইংল্যান্ড বোলারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। ৪.৪ ওভারে ৫০ রান তুলে ফেলে তারা। এই জুটি ভাঙার পর কিছুটা চাপ তৈরি হলেও হরমনপ্রীত কৌর ও জেমিমা রদ্রিগেজের ঠান্ডা মাথার ব্যাটিং সেই চাপ কাটিয়ে দেয়। হরমনপ্রীত ২৬ রান করে আউট হলেও জেমিমা ২২ বলে অপরাজিত ২৪ রানে দলকে জয় এনে দেন।
শেষদিকে আমনজোৎ রান আউট হলেও ভারতের জয় আটকাতে পারেনি ইংল্যান্ড। চার উইকেট হাতে রেখে ১৮ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে সিরিজে ৩-১ লিড নেয় ভারত।
প্রথম দুটি ম্যাচে নটিংহ্যাম ও ব্রিস্টলে জয় তুলে নিয়ে শুরুতেই সিরিজে ২-০ এগিয়ে যায় ভারত। তৃতীয় ম্যাচে ওভালে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচেই ভারতীয় স্পিনাররা ফের দাপট দেখিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেন। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর বলেন, “আমরা জিততে পেরে গর্বিত। গোটা সিরিজে আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছি। প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে অবদান রেখেছে। দেশের হয়ে এমন জয় সত্যিই গর্বের।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইংল্যান্ডে আসার আগে জাতীয় শিবিরে আমরা অনেক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেগুলো কাজে লাগাতে পেরেছি। সবাই জানত নিজেদের ভূমিকা। ঠিক সে ভাবেই আমরা খেলেছি।” এই জয় শুধু সিরিজ জয়ের দিক থেকে নয়, আগামী বছরের টি-২০ বিশ্বকাপের দিকেও বার্তা দিয়ে রাখল হরমনপ্রীতের দল। কারণ বিশ্বকাপের আসর বসবে ইংল্যান্ডেই। তার আগে ইংল্যান্ডের পরিবেশে এবং কন্ডিশনে এমন পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাস বাড়াবে দলকে।
বার্মিংহামে আগামী শনিবার (১২ জুলাই) সিরিজের শেষ টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যদিও সিরিজ ইতিমধ্যেই ভারতের দখলে, তবে শেষ ম্যাচটিও জিতে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করতেই চাইবে ‘উইমেন ইন ব্লু’। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের এই ঐতিহাসিক সাফল্য ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এমন জয় নিঃসন্দেহে মহিলা ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আরও বাড়াবে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।