ভারতীয় ক্রিকেটের (Indian Cricket) বর্তমান মুখ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। এক সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) সফল অধিনায়ক এবং পরবর্তীকালে মেন্টর হিসেবে যিনি আইপিএল (IPL 2025) ট্রফি জিতিয়েছেন, সেই গম্ভীর আজ ভারতের জাতীয় দলের হেড কোচ। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনেই প্রশ্ন জাগে—এই কলকাতার সঙ্গে এতটা হৃদ্যতা থাকা সত্ত্বেও, গম্ভীর কি আজও কেকেআরকে মিস করেন?
মাহি-শো ঘিরে পারদ চড়ছে তিলোত্তমায়, প্র্যাক্টিস না করেও KKR কাঁটা ‘৭’!
এই প্রশ্নের জবাবে গম্ভীর স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তিনি কেকেআরকে মিস করেন না। সম্প্রতি ABP Network India at 2047-এর একটি আলোচনাসভায় গম্ভীর বলেন, ‘‘সত্যি বলতে, আমি কেকেআরকে মিস করি না। কারণ এখন আমার কাছে দায়িত্ব অনেক বড়। জাতীয় দলকে সামলাতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে যদি আমি বলি যে কেকেআরকে মিস করছি, তাহলে সেটা আমার বর্তমান দায়িত্বকে অসম্মান করা হবে।’’
এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, গম্ভীর বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছেন। একসময়ে কলকাতার প্রেমে পড়ে সেখানে স্থায়ী বসবাসের পরিকল্পনা করা গম্ভীর আজ একজন পেশাদার কোচ, যাঁর একমাত্র লক্ষ্য ভারতীয় দলকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দলে পরিণত করা।
কেকেআর থেকে টিম ইন্ডিয়া: এক লম্বা যাত্রা
ভারতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়ছেন স্প্যানিশ কোচ? ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা
গৌতম গম্ভীরের কেকেআরের সঙ্গে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, যখন তাঁকে দলের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে কেকেআর ২০১২ এবং ২০১৪ সালে আইপিএল জয় করে। একজন কৌশলী অধিনায়ক এবং দলগঠনের ক্ষেত্রে দূরদর্শী হিসেবে গম্ভীরের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ২০২৪ সালে মেন্টর হিসেবে তাঁর প্রত্যাবর্তন কেকেআরকে আবারও চ্যাম্পিয়ন করায়, প্রমাণিত হয় গম্ভীরের উপস্থিতি মানেই সাফল্য।
তবে জাতীয় দলের কোচ হওয়ার পর তাঁর ভূমিকায় বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। এখন তাঁকে দল নির্বাচন নয়, বরং নির্বাচিত দল থেকে সেরা একাদশ বেছে নেওয়া এবং দলকে মানসিক ও কৌশলগতভাবে তৈরি করাই প্রধান কাজ।
ইংল্যান্ড সফর এবং গম্ভীরের ভাবনা
ভারতীয় ফুটবলের নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়েছেন কোচ জামিল!
ভারতীয় দলের সামনের বড় চ্যালেঞ্জ ইংল্যান্ড সফর। ২০০৭ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনও টেস্ট সিরিজ জয় করতে পারেনি ভারত। এই প্রসঙ্গে গম্ভীর বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিদেশ সফরের রেকর্ড যথেষ্ট ভাল। একমাত্র এই বছর বাদ দিলে, আমরা বিগত দুইবার অস্ট্রেলিয়ায় জিতেছি। ইংল্যান্ডে খেলা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি বিশ্বাস করি আমরা যে কোনও দলকে হারাতে পারি।’’ এই আত্মবিশ্বাসই তাঁর কোচিং দর্শনের ভিত্তি। গম্ভীর শুধু ফলাফল নয়, মাঠে দলের মানসিকতা এবং লড়াই করার ক্ষমতাকেও সমান গুরুত্ব দেন।
রোহিত-বিরাট ইস্যু: স্পষ্ট বার্তা
সুপার কাপের ভবিষৎ নিয়ে বড় বার্তা মার্কুয়েজের!
রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, ইংল্যান্ড সফরে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে নানা জল্পনা। এই প্রসঙ্গে গম্ভীর পরিষ্কারভাবে জানান, ‘‘দল নির্বাচন কোচের কাজ নয়। সেটা নির্বাচকদের কাজ। কোচ কেবল স্কোয়াডের মধ্য থেকে একাদশ বেছে নেন।’’ তাঁর মতে, কোচ এবং নির্বাচক—এই দুটি ভূমিকাকে আলাদা করে বোঝা দরকার।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
গম্ভীরের দৃষ্টিতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অনেকটাই তরুণ প্রতিভাদের ওপর নির্ভরশীল। তিনি চান এমন একটা দল তৈরি করতে, যারা যেকোনও পরিস্থিতিতে লড়াই করতে পারে এবং নিজেদের জাত প্রমাণ করতে সক্ষম। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাক, কিন্তু সেটি যেন গঠনমূলক হয়, এটাই তাঁর মূলমন্ত্র। তিনি বলেন, ‘‘দলের সবাইকে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে হবে। কার কী ভূমিকা, সেটি স্পষ্ট না হলে উন্নতি অসম্ভব।’’
বর্তমানে গৌতম গম্ভীর শুধুমাত্র একজন আইপিএল বিজয়ী অধিনায়ক নন, বরং ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ গঠনের কারিগর। কেকেআরের সঙ্গে আবেগ থাকলেও, পেশাদার দায়িত্বকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি সেই আবেগকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে, এই আশাই রাখছে গোটা দেশ।