ঘরোয়া ক্রিকেটে (Cricket) এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের ইতি টানলেন গুজরাটের প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চাল (Priyank Panchal)। বাইশ গজে দীর্ঘ সফরের শেষে সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আবেগঘন পোস্টে প্রথম শ্রেণির এবং পেশাদার ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন ভারতের ‘এ’ দলের (ndian Cricket A Team) প্রাক্তন এই অধিনায়ক। তিনি যে কেরিয়ারের শেষ মরসুম খেলছেন, সেই ইঙ্গিত আগেই ছিল, তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা একরাশ আবেগে ভরিয়ে দিল ক্রিকেট অনুরাগীদের।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গুজরাটের হয়ে সর্বাধিক শতরান করা ব্যাটার প্রিয়ঙ্কের ঝুলিতে রয়েছে ১২৯টি ম্যাচে ৮৮৫৬ রান। ২৯টি শতরান ও ৩৪টি অর্ধশতরান সহযোগে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৩১৪—যা ঘরোয়া ক্রিকেটে এক বিরল কীর্তি। শুধু তাই নয়, লিস্ট-এ ক্রিকেটেও সফল ছিলেন তিনি। করেছেন ৯টি শতরানসহ সাড়ে তিন হাজারের বেশি রান।
২০১৬-১৭ সিজনে গুজরাতকে প্রথম রঞ্জি ট্রফি জেতানোর পিছনে প্রিয়ঙ্কের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। সেই ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন এই ওপেনার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই ডানহাতি ব্যাটার সেই সময় থেকেই জাতীয় দলের আশেপাশে ঘোরাফেরা করলেও, ভাগ্য তাঁকে কাঙ্খিত নীল জার্সির ছোঁয়া দেয়নি।
View this post on Instagram
ঘরোয়া ক্রিকেটে বছরের পর বছর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স সত্ত্বেও ভারতের মূল দলে জায়গা না পাওয়া প্রিয়ঙ্কের কেরিয়ার অনেকটা পদ্মাকর শিভলকর, অমল মজুমদার, রাজিন্দর গোয়েলদের মতোই অপ্রাপ্তির কাহিনি হয়ে রইল। ভারতের ‘এ’ দলের হয়ে খেললেও, মূল দলে সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট।
শেষ রঞ্জি ম্যাচে গুজরাটের হয়ে কেরলের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ১৪৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে শেষবারের মতো শতরানের স্বাদ নিয়ে বিদায় জানান তিনি। সেই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে কেরল মাত্র দু’রানে এগিয়ে থেকে ফাইনালের টিকিট কেটে নেয়। যদিও দলের হার, তবুও ব্যক্তিগতভাবে সম্মানের সঙ্গে ক্যারিয়ারে ইতি টানলেন প্রিয়ঙ্ক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অবসর ঘোষণার সময় প্রিয়ঙ্ক লিখেছেন, “এটা ভীষণ আবেগঘন সময়। একইসঙ্গে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও কৃতজ্ঞতায় ভরা। ক্রিকেট আমার জীবনে শুধু একটি খেলা নয়, এক আদর্শ, এক পথচলার নাম। এই খেলার জন্য আমি যা পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।” তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রয়াত বাবার প্রতি, যিনি প্রিয়ঙ্ককে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্ক বলেন, “ভারতের হয়ে খেলা ছিল আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। কিন্তু এখন বুঝি সেই সুযোগ আর আসবে না। তাই আর খেলা চালিয়ে যাওয়ার মানে হয় না।” তাঁর এই কথায় ঝরে পড়ছে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা, কিন্তু একইসঙ্গে ফুটে উঠছে এক কৃতজ্ঞ হৃদয়ের নম্রতা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন বহু ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন দুর্দান্ত পারফর্ম করেও জাতীয় দলের দরজা ছুঁতে পারেননি। তাদেরই একজন হয়ে ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নিলেন প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চাল। এই বিদায় যেন আরও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রতিভা ও পরিশ্রম থাকলেও ভাগ্য কতটা বড় ভূমিকা নেয় ক্রীড়াজগতে।