ইতিহাস গড়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় তীরন্দাজদের বাজিমাত

ভারতের পুরুষ কম্পাউন্ড তীরন্দাজ দল (Indian Archers) দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব তীরন্দাজ চ্যাম্পিয়নশিপে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। রিশাভ যাদব, আমান সাইনি এবং প্রথমেশ ফুগে-র…

Indian Archers

ভারতের পুরুষ কম্পাউন্ড তীরন্দাজ দল (Indian Archers) দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব তীরন্দাজ চ্যাম্পিয়নশিপে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। রিশাভ যাদব, আমান সাইনি এবং প্রথমেশ ফুগে-র সমন্বয়ে গঠিত এই দল ফ্রান্সকে ২৩৫-২৩৩ স্কোরে পরাজিত করে ভারতের প্রথম পুরুষ কম্পাউন্ড দলীয় স্বর্ণপদক জিতেছে।

এই জয় ভারতীয় তীরন্দাজির ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, কারণ এটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষ কম্পাউন্ড দলের প্রথম স্বর্ণপদক। এই দিনে ভারতের মিশ্র কম্পাউন্ড দল, জ্যোতি সুরেখা ভেন্নাম এবং রিশাভ যাদব, নেদারল্যান্ডসের কাছে ১৫৫-১৫৭ স্কোরে পরাজিত হয়ে রৌপ্যপদক অর্জন করেছে।

   

ফাইনালে ভারতীয় দল ফ্রান্সের নিকোলাস গিরার্ড, জিন ফিলিপ বুলচ এবং ফ্রাঁসোয়া ডুবয়ার সমন্বয়ে গঠিত দলের মুখোমুখি হয়। তিন সেটের শেষে স্কোর ১৭৬-১৭৬-এ সমতায় ছিল। তবে, চতুর্থ ও নির্ণায়ক রাউন্ডে ভারতীয় ত্রয়ী অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ৫৯ পয়েন্ট অর্জন করে, যেখানে ফ্রান্স ৫৭ পয়েন্টে থেমে যায়।

এই দুই পয়েন্টের ব্যবধান ভারতকে ঐতিহাসিক স্বর্ণপদক এনে দেয়। ফাইনালে পৌঁছানোর পথে ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুট-অফে ৩০-২৮ স্কোরে জয়, কোয়ার্টার ফাইনালে আমেরিকার বিরুদ্ধে ২৩৪-২৩৩ স্কোরে এবং সেমিফাইনালে তুরস্কের বিরুদ্ধে ২৩৪-২৩২ স্কোরে জয়লাভ করে। এই জয়গুলি ভারতীয় দলের ধারাবাহিকতা এবং মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ দেয়।

একই দিনে জ্যোতি সুরেখা ভেন্নাম এবং রিশাভ যাদবের মিশ্র কম্পাউন্ড দল ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে ১৫৫-১৫৭ স্কোরে পরাজিত হয়ে রৌপ্যপদক অর্জন করে। প্রথম সেটে ভারত এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয় সেটে ৩৭ পয়েন্টের দুর্বল পারফরম্যান্স তাদের পিছিয়ে দেয়।

এটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের মিশ্র কম্পাউন্ড দলের দ্বিতীয় পদক, এর আগে ২০২১ সালে ইয়াঙ্কটনে জ্যোতি এবং অভিষেক বর্মা রৌপ্য জিতেছিলেন। রিশাভ যাদব এই চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি পদক জিতে ভারতের তরুণ প্রতিভার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছেন।

Advertisements

ভারতীয় তীরন্দাজির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ভারতীয় তীরন্দাজির ইতিহাসে এই স্বর্ণপদক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এর আগে ভারত কম্পাউন্ড বিভাগে একাধিক পদক জিতলেও পুরুষ দলীয় ইভেন্টে কখনও স্বর্ণ জিততে পারেনি। ২০২৩ সালে বার্লিনে ভারতের মহিলা কম্পাউন্ড দল জ্যোতি সুরেখা ভেন্নাম, পারনীত কৌর এবং আদিতি গোপীচাঁদ স্বামীর নেতৃত্বে প্রথম স্বর্ণ জিতেছিল।

এছাড়া, জ্যোতি সুরেখা ২০১৯ সালে ব্যক্তিগত কম্পাউন্ড ইভেন্টে ব্রোঞ্জ এবং ২০২৩ সালে প্যারিসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। পুরুষ দলের এই জয় ভারতীয় তীরন্দাজির ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতামূলক উপস্থিতি প্রমাণ করে।

ভারতীয় দলের সদস্যরা এই জয়কে তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং দলগত প্রচেষ্টার ফল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রিশাভ যাদব বলেন, “এই জয় আমাদের জন্য একটি স্বপ্নের সাফল্য। আমরা প্রতিটি ম্যাচে আমাদের সেরাটা দিয়েছি।” আমান সাইনি জানান, “ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনালে আমরা চাপ সামলে নিয়েছি, এবং এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।”

প্রথমেশ ফুগে এই জয়কে ভারতীয় তীরন্দাজির ভবিষ্যতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তীরন্দাজি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি এই জয়কে ‘ভারতীয় তীরন্দাজির সুবর্ণ যুগের সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই জয়ের জন্য দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “ভারতীয় তীরন্দাজ দলের এই ঐতিহাসিক জয় দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত। এটি আমাদের যুবাদের প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ।” ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়াও দলের প্রশংসা করে বলেন, “এই সাফল্য ভারতীয় ক্রীড়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে।”