Champions Trophy 2025:  নিউজিল্যান্ডের ভাগ্য নির্ধারণ করবে ভারতীয় স্পিনাররা

আধুনিক ক্রিকেটের দুই শীর্ষ দল, ভারত এবং নিউজিল্যান্ড, রবিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy 2025) গৌরবের জন্য লড়াই করবে। দর্শকাসনে পরিপূর্ণ এই…

India vs New Zealand Spinners

short-samachar

আধুনিক ক্রিকেটের দুই শীর্ষ দল, ভারত এবং নিউজিল্যান্ড, রবিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy 2025) গৌরবের জন্য লড়াই করবে। দর্শকাসনে পরিপূর্ণ এই মাঠে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। এর আগে ২০০০ সালে নাইরোবিতে এই দুই দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে ক্রিস কেয়ার্নস অপরাজিত সেঞ্চুরি করে ভারতের ২৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে নিউজিল্যান্ডকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন।

   

পঁচিশ বছর পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। ভারত ও নিউজিল্যান্ড আইসিসি টুর্নামেন্টে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শিরোপা ভাগ করে নিয়েছিল এবং এক দশক পরে ২০১৩ সালে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ এমএস ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড বারবার ফাইনালে পৌঁছলেও প্রতিবারই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। ২৫ বছর পর ব্ল্যাকক্যাপস এখন একটি জয়ের দূরত্বে রয়েছে তাদের আইসিসি শিরোপার খরা কাটানোর।

দুবাইয়ে ভারতের স্পিন আধিপত্য
দুবাই ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও তার সৈন্যদের জন্য একটি আদর্শ মঞ্চ হয়ে উঠেছে। এই টুর্নামেন্টে ভারতের স্পিনাররা আধিপত্য বিস্তার করেছে, বিশেষ করে রহস্যময় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী দলে যোগ দেওয়ার পর। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাকে প্রথমবার খেলানো হয়েছিল। সেই ম্যাচে তিনি নিউজিল্যান্ডের ২৫০ রানের লক্ষ্য ভেঙে দিয়ে ৫/৪২-এর ম্যাচ জয়ী ফিগার নিয়ে ফিরেছিলেন। ভারতের স্পিন শক্তির কাছে নিউজিল্যান্ড ৪৪ রানে হেরে গিয়েছিল। রবিবারের ফাইনালে যদি পিচ টুর্নামেন্টের মতোই খেলে, তবে স্পিনাররাই খেলার দিক নির্ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিউজিল্যান্ডের স্পিন প্রতিরোধ
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডেরও স্পিনাররা এই টুর্নামেন্টে দারুণ ছাপ ফেলেছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের উচ্চ রানের পিচে। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাদের স্পিনাররা ৭ উইকেট নিয়েছিল, যা ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তাদের যৌথ সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ফাইনালের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভারতের চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আশা করি, এবার তৃতীয়বার আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। ভারতের বিরুদ্ধে খেলা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। তারা এখানে দারুণ ক্রিকেট খেলছে এবং এই কন্ডিশন ভালো বোঝে। তবে আমরাও ভালো খেলেছি। কয়েকদিন আগে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের কন্ডিশন বুঝতে সাহায্য করবে। এটি একটি নকআউট ম্যাচ, যে দল দিনের শেষে ভালো খেলবে, তারাই ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরবে।”

ভারতের ব্যাটিং গভীরতা
ভারতের সহ-অধিনায়ক শুভমান গিল এই টুর্নামেন্টে দলের ব্যাটিং লাইনআপের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ। রোহিত এবং বিরাট বিশ্বের সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যান। রোহিত সাদা বলের সেরা ওপেনারদের একজন, আর বিরাট ওডিআই-এর সেরা ব্যাটসম্যান। এছাড়া শ্রেয়স দারুণ ফর্মে রয়েছে। কেএল, হার্দিক এবং জাদ্দু আমাদের ব্যাটিংয়ে গভীরতা দিয়েছে। এই গভীরতার কারণে ওপরের ব্যাটসম্যানরা আরও স্বাধীনভাবে খেলতে পারে। আগে আমাদের ব্যাটিংয়ে গভীরতার অভাব ছিল, তাই ব্যাটসম্যানদের ওপর বেশি চাপ থাকত। কিন্তু এখন আমরা আরও মুক্তভাবে খেলতে পারি।”

কোহলির রেকর্ডের অপেক্ষা
এই ফাইনালে ইতিহাস গড়তে পারেন ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। তিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ক্রিস গেইলের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙতে মাত্র ৪৫ রান দূরে রয়েছেন। কোহলির ব্যাটিং দক্ষতা এবং ফাইনালের চাপে তার পারফরম্যান্স ভারতের জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

পিচ এবং কৌশল
দুবাইয়ের পিচ এই টুর্নামেন্টে স্পিনারদের জন্য সহায়ক হয়েছে। ভারতের বরুণ চক্রবর্তী এবং অন্যান্য স্পিনাররা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের স্পিনার মিচেল স্যান্টনার এবং ইশ সোধি ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা করতে প্রস্তুত। যে দল স্পিনের বিরুদ্ধে ভালো প্রতিরোধ গড়তে পারবে, তারাই শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে।

দুই দলের শক্তি
ভারতের শক্তি তাদের ব্যাটিং গভীরতা এবং স্পিন বোলিংয়ে। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আইয়ার এবং কেএল রাহুলের মতো ব্যাটসম্যানরা যেকোনো পরিস্থিতিতে ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন। স্পিন বিভাগে বরুণ চক্রবর্তী এবং রবীন্দ্র জাদেজা দলের জন্য বড় সম্পদ। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের শক্তি তাদের স্পিন বোলিং এবং দলগত প্রতিরোধে। কেন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে এবং ড্যারিল মিচেলের মতো ব্যাটসম্যানরা ভারতের স্পিন আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে এই ফাইনাল একটি উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই হতে চলেছে। ভারত তাদের স্পিন শক্তি এবং ব্যাটিং গভীরতা নিয়ে মাঠে নামবে, আর নিউজিল্যান্ড তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্পিন বোলিং দিয়ে শিরোপার খরা কাটাতে চাইবে। দুবাইয়ের মঞ্চে যে দল দিন শেষে সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারবে, তারাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরবে। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি একটি অবিস্মরণীয় দিন হতে চলেছে।