ভারতীয় ফুটবল দল, যারা ‘ব্লু টাইগার্স’ নামে পরিচিত৷ তারা ২০২৫ সালের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হবে মালদ্বীপ জাতীয় ফুটবল দলের (India vs Maldives)। এই ম্যাচটি ১৯ মার্চ শিলং-এর জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি প্রীতি ম্যাচ হলেও, এর গুরুত্ব কম নয়। কারণ, এটি ভারতের জন্য ২০২৭ সালের এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের প্রস্তুতির অংশ। ২৫ মার্চ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগে এই লড়াই দলের শক্তি ও কৌশল পরীক্ষার একটি সুযোগ।
প্রধান কোচ মানোলো মার্কেজের কাছে এই ম্যাচটি তাঁর মূল খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফিটনেস এবং পারফরম্যান্স পরখ করার একটি মঞ্চ। এটি তাঁর নতুন কৌশল এবং দর্শনকে খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করারও একটি পরীক্ষা। মালদ্বীপ, যারা ‘রেড স্ন্যাপার্স’ নামে পরিচিত, তাদের মুখোমুখি হওয়া ভারতের জন্য সহজ হবে না। এই দলটির কাছে কিছু প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় রয়েছে এবং তারা একটি শক্ত, প্রতিরোধী রক্ষণভাগ নিয়ে মাঠে নামবে।
মালদ্বীপ জাতীয় দল সম্পর্কে
মালদ্বীপ জাতীয় ফুটবল দল গত ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিফা-স্বীকৃত আন্তর্জাতিক দল হিসেবে খেলছে। ১৯৭৯ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখার পর থেকে এই দলটি তাদের প্রায় পাঁচ দশকের ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতন দেখেছে। প্রথম কয়েক বছরে তেমন সাফল্য না পেলেও, ১৯৮৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জিতে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নাম কামায়। ১৯৯১ সালে একই প্রতিযোগিতায় তারা রুপোর পদকও জিতেছিল।
Also Read | শিলং ম্যাচের আগে ভারতীয় টিম থেকে ছিটকে গেলেন ছাংতে
মালদ্বীপের বেশিরভাগ সাফল্য এসেছে এসএএফএফ (দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন) চ্যাম্পিয়নশিপে। ১৯৯৭ সালে প্রথমবার এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে তারা রানার্স-আপ হয়। ১৯৯৯ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় তারা তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ১৯৯৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিটি এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে তারা অন্তত সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। ২০০৩ সালে তারা বাংলাদেশের কাছে ফাইনালে হেরে রানার্স-আপ হয়। ২০০৮ সালে প্রথমবার এসএএফএফ শিরোপা জিতে তারা ভারতকে হারায়। এক দশক পর ২০১৮ সালে আবারও ভারতকে পরাজিত করে তারা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে।
তবে, মহাদেশীয় মঞ্চে মালদ্বীপ এখনও তেমন ছাপ ফেলতে পারেনি। তারা কখনও এএফসি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি, ফিফা বিশ্বকাপ তো দূরের কথা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের সর্বোচ্চ স্থান ছিল ১২৪, যা ২০০৬ সালের জুলাই-আগস্টে অর্জিত হয়েছিল।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
২০২৪ সালে মালদ্বীপ মাত্র দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। এএফসি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করতে না পারায় বছরের শুরুর দিকে তারা কোনও ম্যাচ খেলেনি। নভেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুটি প্রীতি ম্যাচে তারা অংশ নেয়। প্রথম ম্যাচে তারা ১-০ গোলে জয় পায়, যা ছিল একটি অপ্রত্যাশিত ফলাফল। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ২-১ গোলে জিতে প্রতিশোধ নেয়।
২০২৩ সালে মালদ্বীপ ছয়টি ম্যাচ খেলে, যার মধ্যে এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি ম্যাচ ছিল। গ্রুপ পর্বে তারা মাত্র একটি ম্যাচ জিতে বাদ পড়ে। পুরো বছরে তারা ছয়টির মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচে জয় পায়।
কোচ আলি সুজাইন
২০২৪ সালে মালদ্বীপ অভিজ্ঞ কোচ আলি সুজাইনকে আবারও জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছে। ইতালীয় কোচ ফ্রান্সেস্কো মোরেইরোর বিদায়ের পর সুজাইন ফিরে আসেন। তিনি কয়েক দশক ধরে মালদ্বীপের ফুটবলের সঙ্গে জড়িত। খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার তেমন উল্লেখযোগ্য না হলেও, কোচ হিসেবে তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছেন।
২০০২ সালে ভিক্টোরি স্পোর্টস ক্লাবে সহকারী কোচ হিসেবে তাঁর কোচিং শুরু হয়। সেখানে তিনি পাঁচটি জাতীয় লিগ শিরোপা জিততে সাহায্য করেন। ২০০৯ থেকে তিনি স্বাধীনভাবে কোচিং শুরু করেন। ভিক্টোরি এসসি, ক্লাব গ্রিন স্ট্রিটস এবং মাজিয়া এসঅ্যান্ডআরসি-র মতো ক্লাবে কাজ করেছেন তিনি। মাজিয়ার সঙ্গে তিনি ২০১৬ সালে ধিভেহি প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন এবং এফএ কাপ ও প্রেসিডেন্টস কাপও জিতেছেন।
সুজাইন ২০২১ সালে একবার মালদ্বীপের কোচ ছিলেন। ২০২৪ সালে ফিরে এসে তিনি মাত্র দুটি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি দলের রক্ষণকে শক্তিশালী করেছেন এবং ৪-৪-২ ফর্মেশনের মাধ্যমে খেলার ধরন গড়ে তুলছেন।
মূল খেলোয়াড়
হাসান নাইজ: মালদ্বীপের আক্রমণভাগের সবচেয়ে বড় হুমকি এই ২৬ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। ৪৩ ম্যাচে ১০ গোল করা নাইজ মাজিয়া এসঅ্যান্ডআরসি-র হয়ে খেলেন। তিনি বিরোধী বক্সে অস্থিরতা তৈরি করতে পারেন এবং ফিনিশিংয়ে বৈচিত্র্য দেখান।
আলি ফাসির: ৩৬ বছর বয়সেও এই অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড দলের নেতা। ৬৮ ম্যাচে ১১ গোল করা ফাসির গত বছর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুটি গোল করেছেন। তাঁর অফ-দ্য-বল রান এবং পজিশনিং ভারতের জন্য সমস্যা হতে পারে।
কী আশা করা যায়?
মালদ্বীপ সম্ভবত ভারতকে বলের দখল দিয়ে রক্ষণাত্মক খেলতে চাইবে। তারা চাপ শোষণ করে কাউন্টার-অ্যাটাকে ভর করবে। তাদের উইঙ্গাররা দ্রুত বল ফরোয়ার্ডদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবে। সেট-পিসেও তারা শারীরিক শক্তি দিয়ে হুমকি হতে পারে। ভারতকে এই ম্যাচে উদ্ভাবনী আক্রমণ এবং সতর্কতা দেখাতে হবে।