ভারত এবং ইংল্যান্ডের (India vs England T20I) মধ্যে পুণেতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল বেশ আলোচিত। ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে হর্ষিত রানা (Harshit Rana) হটাৎ মাঠে নামেন, তবে তার আগমনের পেছনে ছিল এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। কারণ ভারতের প্রথম একাদশে ছিলেন না তিনি, কিন্তু হঠাৎ করেই কনকাশন সাব (Concussion Sub) হিসেবে মাঠে নামেন এবং নিজের অভিষেক ম্যাচেই সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন এই নাইট তারকা।
ভারতীয় দলের শিবম দুবে, যিনি প্রথমে মাঠে ছিলেন। ইনিংসের শেষ দিকে একটি বল তার মাথায় লাগে। এর ফলে মাথা ঘুরতে শুরু করলে তাঁকে মাঠে আর রাখা সম্ভব হয়নি। এরপর, ম্যাচ রেফারির মাধ্যমে হর্ষিত রানাকে মাঠে নামানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এই সুযোগ পেয়ে, কেকেআরের অভিজ্ঞ এই পেসার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অভিষেক ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করতে একেবারে প্রস্তুত ছিলেন।
Harshit Rana (two career T20 runs) has been allowed to come in as a like-for-like concussion sub for Shivam Dube (nine overs in his last 12 T20Is). Hmm
— Ben Gardner (@Ben_Wisden) January 31, 2025
হর্ষিত রানার অভিষেক ছিল একদম স্বপ্নের মত। তিনি ৪ ওভারে ৩৩ রানে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের সিরিজ জয় হওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সবার সামনে নতুনভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারাটা ছিল তার জন্য এক চ্যালেঞ্জ এবং তা তিনি সফলভাবে পালন করেন।
কেকেআরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগান হর্ষিত
হর্ষিত রানার জন্য এটি ছিল এক বড় সুযোগ। যদিও তিনি প্রথম একাদশে ছিলেন না, তবে কেকেআর দলের হয়ে ডেথ ওভারে বল করার অভিজ্ঞতা তাকে সাহায্য করেছে। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, “আমি বহুদিন ধরে নিজেকে প্রস্তুত রাখছিলাম। এমন একটা সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, একদিন এটা আসবেই এবং যখন সেটা এল, তখন আর পরিস্থিতির কথা ভাবিনি। শুধুমাত্র নিজের বোলিং নিয়েই চিন্তা করছিলাম।”
এই সুযোগে তিনি লিয়াম লিভিংস্টোন, জেকব বেথেল এবং জেমি ওভারটনের মত ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটসম্যানদের উইকেট নেন। তার দুরন্ত পারফরম্যান্সে ভারত ১৫ রানে ম্যাচটি জিতে নেয়।
কনকাশন সাব-এর নিয়ম এবং বিতর্ক
তবে, হর্ষিত রানার মাঠে নামার পেছনে কনকাশন সাবের নিয়ম রয়েছে। ২০১৯ সালে আইসিসি কনকাশন সাব চালু করে, যা নির্দেশ করে যে কোনও ক্রিকেটারের মাথায় আঘাত লাগলে, সেই ক্রিকেটারকে বদলি করার জন্য অন্য একজন ক্রিকেটারকে মাঠে নামানো যেতে পারে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, যে ধরনের ক্রিকেটার মাঠ ছাড়ছেন, তার পরিবর্তে সেই ধরনের ক্রিকেটারকেই দলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ, ব্যাটসম্যানের বদলে ব্যাটসম্যান এবং বোলারের বদলে বোলার।
এক্ষেত্রে, শিবম দুবে ছিলেন একটি অলরাউন্ডার এবং হর্ষিত রানা ছিলেন বোলার। এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার তার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, “এটা তো লাইক ফর লাইক বদলি নয়। আমরা এর সঙ্গে সহমত নই,” বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ম্যাচের পরিপ্রেক্ষিত
ম্যাচের পরে ভারতের বোলিং কোচ মর্কেল বলেন, “শিবম দুবে যখন সাজঘরে ফিরে মাথাব্যথায় ভুগছিলেন, তখনই আমরা কনকাশন সাবের জন্য নাম জমা দিয়েছিলাম। ম্যাচ রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে হর্ষিতকে খেলানো যাবে, আর সেটা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।”
এদিকে, কেভিন পিটারসেনও এই বিষয়ে তার মন্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “শিবমের বদলে হর্ষিত মাঠে নামতে পারে না, কারণ শিবম পেসার নয়, আর হর্ষিত পুরোপুরি পেসার।”
সমর্থকদের আশাবাদ
হর্ষিত রানার এই দুর্দান্ত অভিষেক ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যদিও বদলি হিসেবে তাকে নামানো নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে তার পারফরম্যান্স সকলকে মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে, কেকেআরের হয়ে শেষ ওভারে বল করার অভিজ্ঞতা যে তাকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করেছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই ম্যাচে একদিকে যেমন হর্ষিতের পারফরম্যান্স আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তেমনি কনকাশন সাব নিয়ে বিতর্কও একটি বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে বিতর্ক যাই হোক, হর্ষিত রানার জন্য এটি ছিল এক বিরল সুযোগ, যা তিনি পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন।