শিলংয়ে ব্লুটাইগার্সদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে ৫ বাংলাদেশি ফুটবলার

আগামী বুধবার শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ (AFC Asian Cup 2027) কোয়ালিফায়ারে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ (India vs Bangladesh)। এই ম্যাচটি ভারতের…

Top 5 Bangladesh Players to Watch Against India in AFC Asian Cup

আগামী বুধবার শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ (AFC Asian Cup 2027) কোয়ালিফায়ারে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ (India vs Bangladesh)। এই ম্যাচটি ভারতের জন্য তাদের যাত্রার শুরু হলেও, বাংলাদেশের ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ এই ‘ডার্বি’ ম্যাচটিকে জয়ের লক্ষ্য হিসেবে দেখছে। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশ দলের কাছে এই ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের দলে এমন কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা ভারতের শক্তিশালী দলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন। শুধু রক্ষণে নয়, আক্রমণেও তাদের কাছে এমন খেলোয়াড় আছেন, যারা ভারতের ডিফেন্সকে চাপে ফেলতে সক্ষম। আসুন দেখে নিই, ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পাঁচ খেলোয়াড় যাদের উপর সবার নজর থাকবে:

টপু বর্মন
৩০ বছর বয়সী এই সেন্টার-ব্যাক বাংলাদেশের রক্ষণের অন্যতম ভরসার নাম। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান, বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে তার পূর্বের লড়াইগুলো তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। ৬০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা টপু ভারতের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। ২০২১ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করতে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

   

টপু বর্মন একজন দক্ষ রক্ষণভাগের খেলোয়াড়, যিনি প্রতিপক্ষের আক্রমণের ধরণ পড়তে ও তা মোকাবিলায় দারুণভাবে সক্ষম। চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে নয়টি ম্যাচে তিনটি ক্লিন শিট রাখতে সাহায্য করেছেন তিনি। ভারতের আক্রমণভাগকে কেন্দ্রীয় এলাকায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তাদের ফরোয়ার্ডদের হতাশ করতে টপুকে তার সেরাটা দিতে হবে।

Advertisements

মিতুল মারমা
ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে হয়তো বেশিরভাগ সময় রক্ষণাত্মক খেলতে হবে। ভারতীয় আক্রমণভাগ বারবার গোলের সুযোগ তৈরি করবে, আর তখনই দলের ভরসা হয়ে উঠবেন তরুণ গোলরক্ষক মিতুল মারমা। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশের প্রথম পছন্দের গোলকিপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ইতিমধ্যে ১৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন।

মিতুলের তীক্ষ্ণ প্রতিক্রিয়া ও চটজলদি রিফ্লেক্স তাকে বিশেষ করে তুলেছে। চলতি মৌসুমে আবাহনী ঢাকার হয়ে আটটি ম্যাচে ছয়টি ক্লিন শিট রেখেছেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ১২ ম্যাচে তিনটি ক্লিন শিটও তার ঝুলিতে রয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সেভ করা, লম্বা বল সংগ্রহ করা এবং বিপজ্জনক ক্রস মোকাবিলায় তার দক্ষতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

মোহাম্মদ হৃদয়
মাঝমাঠের লড়াই এই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারত যেখানে বলের দখল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইবে, সেখানে বাংলাদেশ তাদের ছন্দে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন মোহাম্মদ হৃদয়। ২৬ বছর বয়সী এই আবাহনী ঢাকা মিডফিল্ডার তার কর্মতৎপরতা ও শক্তির জন্য পরিচিত।

হৃদয় মাঝমাঠে অনেকটা জায়গা কভার করেন এবং প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের চাপে রাখতে পছন্দ করেন। ভারতীয় মিডফিল্ডারদের বিরুদ্ধে তিনি সময়মতো প্রেসিং করে বল দখলে নিয়ে কাউন্টার-অ্যাটাক শুরু করতে পারেন। রক্ষণের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ফাঁকা জায়গা বন্ধ করা এবং ভারতীয়দের গোলের সুযোগ কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে হৃদয়ের কঠোর পরিশ্রম গুরুত্বপূর্ণ হবে।

আল-আমিন
বাংলাদেশের আক্রমণভাগে উঠতি তারকা আল-আমিন এই ম্যাচে অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন। ২০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ২০২৪/২৫ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশ পুলিশ দলের হয়ে দারুণ পারফর্ম করেছেন। ১০ ম্যাচে সাত গোল করে তিনি প্রমাণ করেছেন, অভিজ্ঞ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও তিনি কার্যকর।

আল-আমিন একজন বহুমুখী ফরোয়ার্ড, যিনি সেন্টার-ফরোয়ার্ড এবং ডানপ্রান্তের উইঙ্গার হিসেবে খেলতে পারেন। তার গতি, অপ্রত্যাশিত চলাচল এবং ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং তাকে বিশেষ করে তুলেছে। ভারতীয় রক্ষণভাগকে চমকে দিয়ে যদি তিনি বড় সুযোগ পান, তাহলে বাংলাদেশের জন্য চমক তৈরি করতে পারেন।

হামজা চৌধুরী
ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী এই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক করতে প্রস্তুত। ২৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় নাম এবং ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটির হয়ে ৫০টিরও বেশি ম্যাচ খেলা হামজা অভিজ্ঞতা ও শারীরিক শক্তি নিয়ে আসছেন।

মাঝমাঠে তিনি ভারতীয় খেলোয়াড়দের চাপে রাখবেন, গুরুত্বপূর্ণ ডুয়েল জিতবেন এবং দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। হামজাকে শান্ত রাখতে ভারতীয় মিডফিল্ডারদের তীক্ষ্ণ থাকতে হবে, কারণ তিনি যদি মুক্তভাবে খেলতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের জন্য বড় জয় সম্ভব।

ভারতের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য রক্ষণ ও আক্রমণের ভারসাম্য গুরুত্বপূর্ণ। টপু ও মিতুলের নেতৃত্বে রক্ষণ শক্ত থাকলে এবং হৃদয় ও হামজা মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ রাখলে, আল-আমিনের মতো তরুণ প্রতিভা ভারতকে অবাক করে দিতে পারে। বাংলাদেশের সমর্থকরা এই পাঁচ তারকার কাছে বড় কিছুর প্রত্যাশা করছেন।