এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ কোয়ালিফায়ার্স-এর গ্রুপ সি-তে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দল বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল। শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র-তে শেষ হয়েছে। দুই দলই বেশ কয়েকটি সুযোগ সৃষ্টি করলেও কেউই গোলের দেখা পায়নি। এই ম্যাচে ভারতের তারকা ফুটবলার সুনীল ছেত্রী হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক করা প্রিমিয়ার লিগ তারকা হামজা চৌধুরীও দলকে জয় এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
Also Read | ডেভিড কাতালা কে? কেরালা ব্লাস্টার্সের নতুন হেড কোচকে জানুন
ম্যাচ শুরুর প্রথম থেকেই ভারতীয় দল বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছিল, কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে সেগুলি কাজে লাগাতে পারেনি। সুনীল ছেত্রী, যিনি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়ে দলে ফিরেছেন, এই ম্যাচে নিজের ছাপ রাখতে পারেননি। প্রথমার্ধে তিনি একটি সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের গোলরক্ষক তা ঠেকিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধেও তিনি কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে বদলি করে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভারতীয় সমর্থকদের কাছে এটি একটি বড় হতাশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ ছেত্রী গত সপ্তাহে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে গোল করে দলকে ৩-০ গোলে জয় এনে দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ দলের জন্য এই ম্যাচটি ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটির হয়ে ১০০-র বেশি ম্যাচ খেলা হামজা চৌধুরী এই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক করেন। তবে, শিলংয়ের দর্শকরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাননি; বরং মাঠে তার প্রতিটি পদক্ষেপে হামজাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হতে হয়েছে। বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া ম্যাচের আগে হামজাকে তাদের “মেসি” বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, “সুনীল ছেত্রী একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়, কিন্তু হামজা একজন প্রিমিয়ার লিগ তারকা।” তবে, মাঠে হামজা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তিনি মাঝমাঠে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করলেও গোলের সুযোগ তৈরিতে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি।
Also Read | তিস্তা জল বিতর্কে কেন্দ্রকে সতর্কবার্তা তৃণমূল সাংসদের
প্রথমার্ধে ভারত একটি বড় বিপদের মুখে পড়েছিল। ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল কাইথ একটি ভুল করেন, যার ফলে বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় গোলের সামনে বল পেয়ে যান। কিন্তু ভারতীয় ডিফেন্ডার সুভাশীষ বোস দুর্দান্তভাবে গোললাইন থেকে বলটি ক্লিয়ার করে দলকে রক্ষা করেন। এই ঘটনা ছাড়াও বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে আরও কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু ভারতের ডিফেন্স এবং কিছুটা ভাগ্যের জোরে তারা গোল করতে ব্যর্থ হয়। ভারতের পক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে খেলা কিছুটা উন্নত হয়েছিল। লিস্টন কোলাসো এবং ফারুখ চৌধুরী কয়েকটি ভালো মুভ তৈরি করেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাদের শটগুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এই ম্যাচটি ছিল এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ কোয়ালিফায়ার্স-এর তৃতীয় রাউন্ডের প্রথম খেলা। গ্রুপ সি-তে ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও সিঙ্গাপুর এবং হংকং রয়েছে। ছয়টি ম্যাচের পর যে দল গ্রুপে শীর্ষে থাকবে, তারাই সরাসরি এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেবে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য এই ড্র একটি হতাশার বিষয়। গত সপ্তাহে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয়ের পর ভারতীয় সমর্থকরা আশা করেছিলেন যে, নতুন কোচ মানোলো মার্কেজের অধীনে দল টানা জয়ের ধারা বজায় রাখবে। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ফলাফল তাদের প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশের জন্যও এই ম্যাচটি একটি মিশ্র অনুভূতি নিয়ে এসেছে। তারা ভারতের মাটিতে এখনও কোনো জয় পায়নি, এবং এই ড্র তাদের সেই রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও একটি পয়েন্ট অর্জন করেছে। হামজা চৌধুরীর অভিষেক এবং দলের লড়াকু মনোভাব বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে। তবে, গোল করতে না পারার দুঃখ তাদের মধ্যেও রয়ে গেছে।
পশ্চিমবঙ্গের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এই ম্যাচটি ছিল বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের হয়ে হামজার খেলা এবং ভারতের সুনীল ছেত্রীর উপস্থিতি—দুটোই এই ম্যাচে উত্তেজনা যোগ করেছিল। কলকাতার ফুটবল মাঠে যেমন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের লড়াইয়ে উন্মাদনা দেখা যায়, তেমনই এই ম্যাচেও দুই প্রতিবেশী দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দর্শকদের মনে উৎসাহ জাগিয়েছিল। তবে, গোলের অভাবে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই পারফরম্যান্স দলের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছে। সুনীল ছেত্রীর উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং ফিনিশিংয়ে সমস্যা এখনও দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, বাংলাদেশ হামজার মতো খেলোয়াড়ের সঙ্গে আরও সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। তবে, দুই দলকেই পরবর্তী ম্যাচে আরও কার্যকরী হতে হবে।
এই গ্রুপে ভারতের পরবর্তী ম্যাচ হবে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে, আর বাংলাদেশ খেলবে হংকংয়ের সঙ্গে। এই ড্র-এর পর দুই দলই জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। ভারতীয় কোচ মানোলো মার্কেজ বলেছেন, “আমাদের আরও ভালো খেলতে হবে। ছয়টি ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনালের মতো।” ভক্তরা এখন অপেক্ষায় আছেন, কবে দল তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।