ভারতীয় ক্রিকেট দল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy 2025) সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে। এই জয়ের মাধ্যমে ‘মেন ইন ব্লু’ ২০২৩ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের প্রতিশোধ নিয়েছে বলে সমর্থকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বিরাট কোহলির ম্যাচ জয়ী ইনিংস এবং দলের অসাধারণ পারফরম্যান্স সমর্থকদের মধ্যে শিরোপা জয়ের আশা জাগিয়েছে। এই জয়ের সঙ্গে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়েছেন—তিনি ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে সমস্ত আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেছেন। ভারত এই জয়ের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পঞ্চমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে, যা অন্য কোনো দল তিনবারের বেশি করতে পারেনি।
দুবাইয়ে এক সমর্থক দিগ্বিজয় বলেন, “আমি বলেছিলাম, সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো ফাইনালের চেয়ে অনেক সহজ। আর একটু চেষ্টা করলেই আমরা ১২ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতব। এই দলের আত্মবিশ্বাস, জয়ের অভ্যাস এবং সুষ্ঠু সমন্বয় আমাদের শিরোপার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।” আরেক সমর্থক বংশ বলেন, “আমরা গর্বিত। প্রথমে ভেবেছিলাম ২৬৫ রান এই পিচে তাড়া করা কঠিন হবে। কিন্তু আমাদের ছেলেরা জিততেই হবে। তারা ৩০০ রানও তাড়া করতে পারত। আজ আমরা পুরো অস্ট্রেলিয়াকে চুপ করিয়ে দিয়েছি।” উজ্জয়িনীতে রাস্তায় ফাটল ফোটানো, পটনায় “ভারত মাতা কি জয়” ও “বন্দে মাতরম” স্লোগানের সঙ্গে উৎসব, এবং প্রয়াগরাজে সমর্থকদের আনন্দ-উল্লাস এই জয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
একজন সমর্থক, যিনি শরীরে ভারতের পতাকা এঁকে এমএস ধোনির জার্সি নম্বর পরেছিলেন, বলেন, “আমরা নিশ্চিতভাবে ট্রফি জিতব। অস্ট্রেলিয়াকে হারানো খুব বড় ব্যাপার। আমরা ২০২৩-এর হারের প্রতিশোধ নিয়েছি। বিরাট কোহলি দারুণ খেলেছেন। সেঞ্চুরি না করলেও, তাঁর ইনিংস সেঞ্চুরির সমান। এজন্যই তাঁকে ‘দ্য কিং’ বলা হয়।” ভারতের বিভিন্ন শহরে সমর্থকরা এই জয়কে উৎসবের মতো উদযাপন করেছেন।
ম্যাচের বিবরণ
ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতেই কুপার কনোলির উইকেট হারালেও, ট্র্যাভিস হেড (৩৩ বলে ৩৯, ৪ চার ও ২ ছক্কা) এবং স্টিভ স্মিথের মধ্যে ৫০ রানের জুটি গড়ে ওঠে। এরপর স্মিথ মার্নাস লাবুশেন (৩৬ বলে ২৯, ২ চার ও ১ ছক্কা) এবং অ্যালেক্স কেরির (৫৭ বলে ৬১, ৮ চার ও ১ ছক্কা) সঙ্গে আরও দুটি অর্ধশত রানের জুটি গড়েন। ৪৮তম ওভারে শ্রেয়াস আইয়ারের সরাসরি থ্রোতে কেরি রানআউট হন। অস্ট্রেলিয়া ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায়।
ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি সর্বোচ্চ ৩/৪৮ উইকেট নেন। বরুণ চক্রবর্তী (২/৪৯) এবং রবীন্দ্র জাদেজা (২/৪০) স্পিনের জালে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের আটকে দেন। অক্ষর প্যাটেল এবং হার্দিক পান্ডিয়া একটি করে উইকেট নেন।
রান তাড়া করতে নেমে ভারত শুরুতেই অধিনায়ক রোহিত শর্মা (২৯ বলে ২৮, ৩ চার ও ১ ছক্কা) এবং শুভমান গিলের (৮) উইকেট হারিয়ে ৪৩/২-এ নেমে যায়। এরপর বিরাট কোহলি এবং শ্রেয়াস আইয়ার (৬২ বলে ৪৫, ৩ চার) ৯১ রানের জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরান। কোহলি অক্ষর প্যাটেলের (৩০ বলে ২৭, ১ চার ও ১ ছক্কা) সঙ্গে ৪৪ রান এবং কেএল রাহুলের (৩৪ বলে ৪২*, ২ চার ও ২ ছক্কা) সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়েন। হার্দিক পান্ডিয়া ২৪ বলে ২৮ রানের (১ চার ও ৩ ছক্কা) দ্রুতগতির ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করেন। ভারত ৪৮.১ ওভারে ২৬৭/৬ করে ম্যাচ জিতে নেয়।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নাথান এলিস (২/৪৮) এবং অ্যাডাম জাম্পা (২/৬০) সেরা বোলার ছিলেন।
সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ও প্রতিশোধের গল্প
এই জয় শুধু একটি ম্যাচের ফলাফল নয়, বরং ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের ক্ষত ভোলার একটি মাধ্যম। সেই ফাইনালে ভারত অপরাজিত থেকেও শিরোপা হাতছাড়া করেছিল। এবার সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সমর্থকরা সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দে মেতে উঠেছেন। পটনার রাস্তায় “ভারত মাতা কি জয়” স্লোগান, উজ্জয়িনীতে ফাটল ফোটানো, এবং প্রয়াগরাজে উৎসবের পরিবেশ এই জয়ের তাৎপর্য তুলে ধরেছে।
বিরাট কোহলির ৮৪ রানের ইনিংস এই জয়ের মূল চালিকাশক্তি। যদিও তিনি সেঞ্চুরি করতে পারেননি, তাঁর শান্ত এবং কৌশলগত ব্যাটিং ভারতকে জয়ের পথে রেখেছিল। সমর্থকরা তাঁর এই পারফরম্যান্সকে ‘সেঞ্চুরির সমান’ বলে প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে, রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারত প্রতিটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
#WATCH | Uttar Pradesh | Prayagraj witnesses massive celebrations after India’s victory over Australia in the semifinal of #ChampionsTrophy2025 pic.twitter.com/1xbiniGpZ9
— ANI (@ANI) March 4, 2025
ভারতের শক্তি ও সম্ভাবনা
এই ম্যাচে ভারতের বোলিং এবং ব্যাটিং উভয় বিভাগই দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছে। মোহাম্মদ শামির গতি, চক্রবর্তী ও জাদেজার স্পিন, এবং হার্দিকের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ভারতের শক্তিশালী দলগত সমন্বয় প্রমাণ করেছে। ব্যাটিংয়ে কোহলির ধারাবাহিকতা, শ্রেয়াসের স্থিতিশীলতা, এবং রাহুল-হার্দিকের ফিনিশিং দক্ষতা ভারতকে ফাইনালের জন্য প্রস্তুত করেছে।
সমর্থকরা এখন আশা করছেন, ৯ মার্চ দুবাইয়ে ফাইনালে ভারত শিরোপা জিতে ২০১৩ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গৌরব ফিরিয়ে আনবে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের বিজয়ী হবে ভারতের প্রতিপক্ষ। এই জয়ের মাধ্যমে ভারতীয় দল প্রমাণ করেছে যে তারা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
এই জয় ভারতীয় ক্রিকেটের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ভারত শুধু ফাইনালে পৌঁছায়নি, সমর্থকদের হৃদয়েও জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছে। ২০২৩-এর পরাজয়ের ক্ষত এখন অনেকটাই ভুলে গেছে ভারতীয় সমর্থকরা। ফাইনালের জন্য অপেক্ষা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। “ভারত মাতা কি জয়” ধ্বনি আরও জোরালো হবে যদি রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারত শিরোপা জিতে নেয়।