২০২৫ সালের এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ যেমন ক্রিকেট মাঠে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, ঠিক তেমনই মাঠের বাইরে রাজনীতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও তৈরি করেছে প্রবল ঝড়। রবিবার পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও সুর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল—তারা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB)-এর চেয়ারম্যান ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) সভাপতি মোহসিন নকভির হাত থেকে ট্রফি (Asia Cup Trophy) ও বিজয়ী মেডেল নিতে অস্বীকার করে।
ফাইনাল ম্যাচে টিলক বর্মার অনবদ্য অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ১৪৭ রানের লক্ষ্য সহজেই পেরিয়ে যায় ভারত। ম্যাচের শেষে পাকিস্তান দলের সদস্যরা রানার্স-আপ মেডেল সংগ্রহ করলেও ভারতীয় দলের সদস্যরা মঞ্চে ওঠেননি। কেবলমাত্র ‘প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল’ হিসেবে টিলক ও ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ হিসেবে অভিষেক শর্মা তাদের ব্যক্তিগত পুরস্কার নিতে যান। কিন্তু দলগত ট্রফি এবং মেডেল ভারতীয় দল গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, যা অনুষ্ঠানের এক ঘণ্টা দেরির অন্যতম কারণ ছিল বলে ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল লাইভ সম্প্রচারে জানান।
Also Read | জাতীয় দলে যোগ দিতে পারেন বাগানের এই তারকা ফুটবলাররা
এই ঘটনার পেছনের কারণ রাজনৈতিক ও আবেগঘন। এবারের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে এক তীব্র আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে। এপ্রিল-মে মাসে পাহালগাম সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং পরবর্তী সামরিক সংঘর্ষের স্মৃতি এখনও তাজা। ওই হামলায় শহীদ ভারতীয় সেনাদের উদ্দেশে ভারত-পাকিস্তান গ্রুপ পর্বের জয়ের পর ম্যাচটি উৎসর্গ করেছিলেন অধিনায়ক সুর্যকুমার যাদব। ‘অপারেশন সিন্ধুর’ নামে ভারতের প্রতিশোধমূলক বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে।
এছাড়াও পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আচরণও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ফাস্ট বোলার হরিস রউফ ভারতীয় দর্শকদের দিকে “৬-০” এবং “ফাইটার জেট” ইঙ্গিত করেন সুপার ফোরের ম্যাচে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে রাফালও রয়েছে, ধ্বংস করেছে — যদিও ভারত সরকার এই দাবি অস্বীকার করেছে।
Also Read | জল্পনার অবসান, মাদিহ তালালকে বিদায় জানাল ইস্টবেঙ্গল
এই পরিস্থিতিতেই মোহসিন নকভি, যিনি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও, রউফের ইঙ্গিতের সঙ্গে মিল রেখে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর একটি ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রুপ করেন। নকভির এই পদক্ষেপকে “অগ্নিপরীক্ষা” এবং “অপেশাদার” বলে আখ্যা দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একাধিক শীর্ষকর্তা। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি পদে থেকে এমন আচরণ অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেও সমালোচনা হয়।
এ সব ঘটনার প্রতিবাদেই ভারতীয় দল ট্রফি গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এটি শুধুমাত্র ক্রিকেট মাঠের সিদ্ধান্ত নয়, বরং কূটনৈতিক বার্তা — সন্ত্রাসবাদ ও অসম্মানের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে স্পষ্ট করে দেওয়া।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI)-এর তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও বোর্ড সূত্রের খবর, “জাতীয় সম্মান ও সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রশ্নে আপস নেই। ক্রিকেট মাঠেও আমরা সেই বার্তাই দিয়েছি।”