ভারতীয় টেস্ট দলের (India Cricket Team) নতুন অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করতে চলেছেন ২৫ বছর বয়সী শুভমন গিল (Shubman Gill)। তিনি হচ্ছেন ভারতের ৩৭তম টেস্ট অধিনায়ক, যিনি রোহিত শর্মার অবসর নেওয়ার পর এই দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। এই দায়িত্ব পাওয়ার পর শুভমন গিল জানিয়েছেন, প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) ও প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকারের (Ajit Agarkar) পক্ষ থেকে তার ওপর কোনও রকম চাপ বা অতিরিক্ত প্রত্যাশা নেই। বরং তারা গিলকে স্বাধীনভাবে নেতৃত্ব দিতে উৎসাহিত করেছেন।
স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে কথা বলার সময় গিল বলেন, “আমি বহুবার গৌতি ভাই ও অজিত ভাইয়ের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা আমাকে শুধু এটুকুই বলেছেন—আমি যেন নিজেকে একজন নেতা হিসেবে প্রকাশ করতে পারি। তারা কোনও রকম অতিরিক্ত প্রত্যাশা আমার ওপর চাপিয়ে দেননি। তারা কখনও বলেননি যে আমাকে এমন কিছু করতে হবে যা আমি পারি না।”
গিল আরও বলেন, “তবে একজন খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রতি কিছু প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক। তাই আমি নিজের কাছ থেকেই কিছু প্রত্যাশা করি, কিন্তু দলের কোচ ও নির্বাচকের দিক থেকে কোনও চাপ নেই। এতে আমি অনেকটাই স্বস্তিতে আছি এবং আমার কাজকে মন দিয়ে এগিয়ে নিতে পারছি।”
নতুন অধিনায়ক হিসেবে শুধু ম্যাচ জেতা বা ট্রফি জেতাকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন না গিল। তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের মধ্যে একটি ইতিবাচক ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দিকে।
তিনি বলেন, “সব ট্রফি ও সাফল্যের বাইরে আমি চাই এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে যেখানে প্রত্যেকে নিজেদের নিরাপদ ও খুশি মনে করবে। কারণ আমি জানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, খেলোয়াড়দের রোটেশন হচ্ছে, অনেক ম্যাচ খেলতে হয়। এরকম অবস্থায় যদি একটা স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা যায়, তবে সেটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য।”
গিলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে ইংল্যান্ড সফর, যা শুরু হবে ২০শে জুন থেকে। ঐতিহাসিকভাবেই ইংল্যান্ড সফর সবসময় কঠিন হয়ে থাকে ভারতীয় দলের জন্য। সেখানেই নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন গিল—নেতৃত্বের মঞ্চে প্রথমবার।
গিল এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিবান ব্যাটসম্যানদের একজন। টেস্ট, এক দিনের ক্রিকেট এবং টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। বিশেষ করে ২০২৩ সাল থেকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে তিনি ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য মুখ হয়ে উঠেছেন।
অধিনায়ক হিসেবে গিলের পথচলা শুরু হতে চলেছে এমন এক সময়ে, যখন ভারতীয় টেস্ট দল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের অবসর, তরুণদের আগমন—সব মিলিয়ে একটি নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গিলের নেতৃত্ব কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত তার মানসিক প্রস্তুতি, চিন্তাধারা এবং নেতৃত্বের দর্শন যথেষ্ট ইতিবাচক ও ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।
একজন তরুণ অধিনায়ক হিসেবে গিল যদি দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, ঐক্য এবং স্বাধীনভাবে খেলার পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, তবে তার নেতৃত্বে ভারতীয় টেস্ট দল এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ইংল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে গিল কীভাবে নিজের প্রথম সিরিজ সামলান এবং দলের সাফল্যের পথে দলকে নিয়ে যেতে পারেন।