চিনকে হারিয়ে এশিয়ান মহিলা হকি চ্যাম্পিয়ন্স ভারত

ভারতের মহিলা হকি দল আরেকবার নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Asian Champions Trophy) ২০২৪-এর ফাইনালে চিনের বিরুদ্ধে এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ১-০ গোলে জয়ী…

india Women's Asian Champions Trophy

ভারতের মহিলা হকি দল আরেকবার নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Asian Champions Trophy) ২০২৪-এর ফাইনালে চিনের বিরুদ্ধে এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ১-০ গোলে জয়ী হয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা ধরে রাখল ভারত। দলের জয় এনে দিলেন তরুণ স্ট্রাইকার দীপিকা, যিনি ৩১তম মিনিটে একটি পেনাল্টি কর্নার থেকে অসাধারণ রিভার্স হিটের মাধ্যমে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন।

টুর্নামেন্টে দীপিকার অবদান
দীপিকার জন্য এই টুর্নামেন্ট ছিল একটি স্মরণীয় অধ্যায়। ফাইনালে গোলটি করার পাশাপাশি তিনি ১১টি গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। লিগ পর্বেও ভারত চিনের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে দুর্দান্ত জয় পেয়েছিল।

   

ভারতের তৃতীয় শিরোপা জয়
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত তৃতীয়বার এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল। এর আগে দলটি ২০১৬ এবং ২০২৩ সালে এই শিরোপা জয় করেছিল। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ভারত এখন এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দল হিসেবে পরিচিত।

চিনের হতাশা, জাপানের সান্ত্বনা
চিন এই টুর্নামেন্টে তাদের তৃতীয় রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে, জাপান তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মালয়েশিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে সান্ত্বনা পুরস্কার জিতে নিয়েছে।

ফাইনালের খেলার বিশ্লেষণ
ফাইনালে দুই দলই সমান তালে লড়াই করে। ম্যাচের প্রথমার্ধে উভয় দলের ডিফেন্স দুর্ভেদ্য ছিল, ফলে কোনো পক্ষই গোল করতে পারেনি।

প্রথমার্ধের উত্তেজনা
১৭ বছর বয়সী তরুণ খেলোয়াড় সুনেলিতা টপ্পো পুরো ম্যাচ জুড়ে তার ড্রিবলিং দক্ষতা এবং ডিফেন্স ভেদ করার ক্ষমতা দিয়ে নজর কাড়েন। চিন প্রথম পেনাল্টি কর্নারটি পায় দ্বিতীয় কোয়ার্টারের তিন মিনিটে। তবে ভারতের দ্বিতীয় গোলরক্ষক বিচু দেবী খারিবাম চমৎকার ডাইভ দিয়ে সেই আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন।

ভারত এরপর পরপর চারটি পেনাল্টি কর্নার পায়, তবে কোনোটি কাজে লাগাতে পারেনি। দীপিকা বেশ কয়েকবার সুযোগ পেলেও গোল করতে ব্যর্থ হন।

দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের আক্রমণ
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভারত একটি পেনাল্টি কর্নার আদায় করে। এবার দীপিকা ভুল করেননি। ৩১তম মিনিটে তিনি রিভার্স হিটের মাধ্যমে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন।

চিনের পাল্টা আক্রমণ ও বিচু দেবীর নৈপুণ্য
গোল হজম করার পর চিন আক্রমণের চাপ বাড়ায়। এক পর্যায়ে দীপিকা আরেকটি সুযোগ পান পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে। কিন্তু চিনের গোলরক্ষক লি তিং দুর্দান্ত রিফ্লেক্স দেখিয়ে সেই শট রক্ষা করেন।

চিন বেশ কয়েকবার ভারতের সার্কেলে প্রবেশ করলেও ভারতের ডিফেন্স দুর্ভেদ্য থেকে যায়। বিশেষ করে অধিনায়ক সালিমা টেটের নেতৃত্বে ডিফেন্স লাইনের পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়।

দলের সাফল্যের কারণ
ভারতের মহিলা হকি দলের সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাদের অসাধারণ সমন্বয় এবং দক্ষ কোচিং। দীপিকার মতো তরুণ খেলোয়াড়দের উত্থান এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দৃঢ়তা দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

আগামী দিনের প্রত্যাশা
ভারতের এই শিরোপা জয় নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। দীপিকা, সালিমা টেট এবং বিচু দেবীর মতো খেলোয়াড়রা ভারতীয় হকির একটি উজ্জ্বল অধ্যায় তৈরি করেছেন। এখন লক্ষ্য থাকবে অলিম্পিকের মতো বড় মঞ্চে এই ফর্ম ধরে রাখা।
ভারতের এই জয়ের জন্য গোটা দেশ গর্বিত। খেলোয়াড়দের এই কৃতিত্ব দেশের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে।