মঙ্গলবার ২০২৭ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের (AFC Asian Cup 2027 Qualifiers) প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত বনাম বাংলাদেশ (India vs Bangladesh)। ম্যাচের আগে দুই দলের সাংবাদিক সম্মেলনে কোচ, অধিনায়ক ও খেলোয়াড়দের মধ্যে একে অপরের প্রতি সম্মান জানাতে কোনো ঘাটতি চোখে পড়েনি। তবে মাঠের লড়াইয়ে আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটে উঠবে। বাংলাদেশ দল সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে যাওয়ার আগেই ভারতের কোচ-ফুটবলার এসে পৌঁছায়। দুই দলের চারজন প্রতিনিধি একসঙ্গে উপস্থিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এমন সৌজন্যতা স্বাভাবিক হলেও, এই ম্যাচের গুরুত্ব দুই দলের কাছেই অপরিসীম।
কিন্তু বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ওপার বাংলায় ভারত-বিরোধী মনোভাব ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ভারতের কাছে এটি একটি গ্রুপ লিগের ম্যাচ হলেও, বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য অনেক বেশি। বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ম্যাচ জিততে পারলে বাংলাদেশীদের কণ্ঠ আরও জোরালো হবে। আর হারলে অজুহাতের বন্যা বইবে। তাই জামাল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য একটাই জয়।
ম্যাচের পূর্ববর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ দল সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) আট মাস পর ফিরে আসাকে সম্মান জানিয়েছে। একইভাবে ভারতও বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথমবারের মতো হামজা চৌধুরীর (Hamza Choudhury) অন্তর্ভুক্তিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। হামজার আগমন বাংলাদেশ দলের শক্তি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া দুজনেই জানিয়েছেন, দল জয়ের জন্য প্রস্তুত। গত কয়েকদিনে শিলংয়ে অনুশীলন মাঠ নিয়ে নানা সমস্যা হলেও, তারা তাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চান না। সৌদি আরবে ক্যাম্প করে দলের প্রস্তুতি নিয়ে কাবরেরা সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী এবং জিততে চাই। এটি একটি আকর্ষণীয় ও কঠিন ম্যাচ হবে।”
হামজা বনাম ছেত্রীর লড়াইকে ‘এক্সাইটিং’ আখ্যা দিয়েছেন কাবরেরা। তিনি বলেন, “হামজা আমাদের শক্তি বাড়িয়েছে। সুনীলও দুর্দান্ত খেলোয়াড়। তার প্রতি ও ভারতের প্রতি আমাদের সম্মান আছে।” বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে জিতেছিল। কাবরেরা জানেন, এরপর আর জয়ের মুখ দেখা যায়নি। তবে তিনি আশাবাদী, “এই ম্যাচে আমরা মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী।”
জামাল ভূঁইয়ারও ভারতের সঙ্গে স্মৃতি আছে। ২০১৯ সালে কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে সাদ উদ্দিনের গোলটি তাঁরই অ্যাসিস্টে হয়েছিল। সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চান তিনি। জামাল বলেন, “র্যাঙ্কিংয়ে আমরা পিছিয়ে, কিন্তু তা দেখছি না। হামজার মতো খেলোয়াড় দলে এসেছেন, তিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করছেন। জয়ের জন্য সেরাটা দেব।” ঘরের মাঠে ভারতের সমর্থকদের চাপ থাকবে বাংলাদেশের ওপর। তবে জামাল সেই চাপ উৎরে জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
হামজার আগমনকে বাংলাদেশের কোচ সবচেয়ে শক্তিশালী দলের দাবি করেছেন। জামাল বলেন, “ড্র হলে ওকে, কিন্তু জিতলে খুব ভালো। স্থানীয় খেলোয়াড়দেরও ভালো খেলতে হবে।” বাংলাদেশের মানুষ এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে। জামাল মনে করেন, “চাপ আছে, তবে জয়ের কথাই ভাবছি।”
অন্যদিকে, ভারতের কোচ মানোলো মার্কুয়েজ বলেন, “ম্যাচ ভালো বা খারাপ হতে পারে। কিন্তু প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। জয় দিয়ে শুরু করলে পুরো প্রতিযোগিতায় আত্মবিশ্বাস বাড়বে।” ” হামজা সম্পর্কে তিনি বলেন, “সে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছে। এশিয়ান ফুটবলের জন্য ভালো। তার বিপক্ষে খেলতে আমার দল উজ্জীবিত।” ছেত্রীর ফিরে আসা নিয়ে তিনি বলেন, “সুনীল আসায় ভালো হয়েছে। চাপ থাকবে, তবে জিততে হবে।”
একইসঙ্গে মানোলো মার্কুয়েজের ( প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের প্রস্তুতির উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ, মালদ্বীপ বা অন্য কারও বিরুদ্ধে খেলি, আমাদের প্রস্তুতি একই থাকে। আমরা প্রতিপক্ষের সেরা রূপ আশা করি এবং তাদের শক্তি-দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে প্রস্তুত হই।”
ভারতের ডিফেন্ডার সন্দেশ জিঙ্গাল বলেন, “বাংলাদেশ চেনা প্রতিপক্ষ। ছেত্রী আমাদের জন্য বড় প্রেরণা। তবে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দলের কথা নয়, আমাদের প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। ভালো প্রস্তুতি থাকলে যে কোনো দলের বিরুদ্ধে লড়তে পারি, না হলে যে কারও কাছে হারতে পারি।” তাই এদিন দুই দলই জয়ের জন্য মরিয়া। মাঠেই হবে আসল টক্কর।