রুদ্ধশ্বাস করা এক ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (KKR) পরাজিত করে আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) প্লে-অফের দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে দিল চেন্নাই সুপার কিংস (CSK)। ইডেন গার্ডেন্সে দুই উইকেটে নাটকীয় জয়ে চার ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল চেন্নাই, আর কেকেআরের স্বপ্নভঙ্গ ঘটল ঘরের মাঠেই।
ম্যাচের শুরুটাই ছিল নাটকীয়। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কেকেআরের ব্যাটিং ইনিংস খুব একটা ঝলমলে ছিল না। অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে ৪৮ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন। মাঝের ওভারে মন্থর পিচে রান উঠছিল না। শেষদিকে আন্দ্রে রাসেল ২১ বলে ৩৮ ও মনীশ পাণ্ডে দ্রুত রান এনে দলের সংগ্রহ ১৭৯/৬ পর্যন্ত নিয়ে যান। চেন্নাইয়ের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন নূর আহমেদ—৪ উইকেট তুলে নিয়ে কেকেআরের মিডল অর্ডার ভেঙে দেন।
তবে রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাইয়ের শুরু ছিল ভয়াবহ। প্রথম ওভারেই আউট হন আয়ুষ মাহাতে। এরপর ডেভন কনওয়ে’র উইকেটও পড়ে যায় কোনও রান না করেই। দুই ওপেনারকেই হারিয়ে বিপাকে পড়ে CSK। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে নামা নবাগত উর্ভিল প্যাটেল ঝড় তুলে দেন। মাত্র ১১ বলে ৩১ রান করে চারটি বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। যদিও আগ্রাসী খেলার ফলস্বরূপ পাওয়ারপ্লের মধ্যেই পাঁচটি উইকেট হারায় চেন্নাই।
ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় তখন, যখন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস ও শিবম দুবে জুটি বাঁধেন। চাপে থাকা দলকে টেনে তোলেন এই দুই ব্যাটার। বিশেষ করে ব্রেভিস এক ওভারে ভৈভব অরোরার বিরুদ্ধে ৩০ রান তুলে পুরো ম্যাচটাই ঘুরিয়ে দেন। তাঁর ২২ বলে হাফসেঞ্চুরি চেন্নাইয়ের রান তাড়াকে সহজ করে দেয়। এই ইনিংস ছিল ভয়ডরহীন, পরিকল্পিত ও ম্যাচ পরিস্থিতির প্রতি মানানসই।
শেষদিকে ম্যাচ আবার উত্তেজনার মোড় নেয়। ধীরে ধীরে ম্যাচ চেন্নাইয়ের দিকে ঝুঁকলেও উইকেট পড়ে যাচ্ছিল। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রান, তখন নামেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। অভিজ্ঞ অধিনায়ক প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয়ের পথ পরিষ্কার করে দেন। তার পরের বলেই প্রয়োজনীয় রান তুলে ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
এই জয়ে চেন্নাই সুপার কিংস সামান্য হলেও প্লে-অফে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখল। অন্যদিকে, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য এই হার কার্যত ছিটকে যাওয়ার শামিল। এখন তারা সর্বোচ্চ ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে পারবে, এবং সেই জন্য চাই হবে অন্য দলগুলোর একাধিক হার—যা একপ্রকার অলৌকিকতারই সমান।
ম্যাচের প্রধান নায়ক ছিলেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস ও উর্ভিল প্যাটেল। তরুণ এই দুই খেলোয়াড় বিপর্যস্ত অবস্থায় দলের জন্য সাহসী ইনিংস খেলেন। নূর আহমেদের স্পিন ম্যাজিকও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চেন্নাইয়ের জন্য এই জয় শুধুমাত্র এক ম্যাচ জয় নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য বড় প্রেরণা।
এখন দেখার, শেষ দুটি ম্যাচে কীভাবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে ধোনির চেন্নাই, আর কেকেআর কী এখনও শেষ চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে কিনা।