ফুটবলের নিয়মে (IFAB new rules) আগামী ২০২৫-২৬ মরশুম থেকে কিছু পরিবর্তন আসছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি), যারা ফুটবলের নিয়ম-কানুন নির্ধারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে, সম্প্রতি এই পরিবর্তনগুলোর অনুমোদন দিয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে গোলকিপারদের জন্য একটি বড় নিয়ম সবচেয়ে আলোচিত। আইএফএবি-র এই সিদ্ধান্ত ২০২৪-২৫ মরশুমের শেষ দিকে এসে ফুটবলের ভবিষ্যৎ গতিপথে নতুন মোড় আনবে।
আইএফএবি হল ফুটবলের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, যারা বিশ্বব্যাপী খেলার ধারাবাহিকতা ও নিয়মের একরূপতা বজায় রাখে। এই সংস্থায় ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের চারটি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যেকের একটি করে ভোট রয়েছে। ফিফা (ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) আরও চারটি ভোট রাখে, যা বিশ্বের ২০৭টি জাতীয় অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে আইএফএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নতুন নিয়ম পাস করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত ১ মার্চ বেলফাস্টে অনুষ্ঠিত ১৩৯তম এজিএম-এ এই নতুন নিয়মগুলো চূড়ান্ত হয়েছে।
গোলকিপারদের জন্য নতুন নিয়ম
নতুন নিয়মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটি গোলকিপারদের জন্য। বর্তমানে ল অফ দ্য গেম-এর ১২.২ ধারা (ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক) অনুযায়ী, গোলকিপার যদি ছয় সেকেন্ডের বেশি বল হাতে রাখেন, তবে প্রতিপক্ষ দলকে একটি ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক দেওয়া হয়। তবে, এই নিয়ম খুব কমই কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়। ফুটবল ম্যাচে আমরা প্রায়ই দেখি, গোলকিপাররা সময় নষ্ট করতে বল বেশিক্ষণ হাতে রাখেন, যা মাঠে বিতর্ক এবং দর্শকদের মধ্যে হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০২৫-২৬ মরশুম থেকে এই নিয়মে পরিবর্তন আসছে। নতুন নিয়মে গোলকিপারদের বল হাতে রাখার সময়সীমা বাড়িয়ে আট সেকেন্ড করা হয়েছে। তবে, যদি কোনো গোলকিপার আট সেকেন্ড বা তার বেশি সময় বল হাতে রাখেন, তবে প্রতিপক্ষ দলকে একটি কর্নার-কিক দেওয়া হবে। এই পরিবর্তন সময় নষ্ট করার প্রবণতা কমাতে এবং খেলার গতি বাড়াতে সাহায্য করবে। আইএফএবি জানিয়েছে, বিভিন্ন যুব লিগে এই নিয়মের পরীক্ষা ইতিবাচক ফল দিয়েছে। রেফারিরা শেষ পাঁচ সেকেন্ডের জন্য হাত তুলে গোলকিপারদের সতর্ক করবেন।
অন্যান্য নিয়মে পরিবর্তন
গোলকিপারদের জন্য নিয়ম ছাড়াও আরও কিছু পরিবর্তন ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এর মধ্যে রয়েছে ল ৮.২ (ড্রপড বল), ল ৯.২ (বল ইন প্লে), ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রোটোকল এবং ম্যাচ অফিশিয়ালদের জন্য ব্যবহারিক গাইডলাইন।
ল ৮.২ (ড্রপড বল): এই নিয়মে বলা হয়েছে, যদি খেলা পেনাল্টি বক্সের বাইরে বন্ধ হয়, তবে যে দলের কাছে বল ছিল বা যে দলটি বল দখলের সম্ভাবনায় ছিল, তাদেরকেই ড্রপ বল দেওয়া হবে। যদি রেফারি এটি নির্ধারণ করতে না পারেন, তবে শেষ যে দলটি বল স্পর্শ করেছিল, তাদের দেওয়া হবে। বলটি যেখানে খেলা বন্ধ হয়েছিল, সেখানেই ড্রপ করা হবে।
ল ৯.২ (বল ইন প্লে): যদি বল খেলার বাইরে যাওয়ার সময় কোনো দলের কোনো অভিপ্রায় ছাড়াই স্পর্শ করে (যেমন স্টাফ, বদলি খেলোয়াড় বা বহিষ্কৃত খেলোয়াড়), তবে শুধু একটি ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক দেওয়া হবে। এই ক্ষেত্রে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
ভিএআর প্রোটোকল: প্রতিযোগিতার ওপর নির্ভর করে, ম্যাচ অফিশিয়ালরা ভিএআর-এর ফলাফল ঘোষণা করতে পারেন। এছাড়া, সহকারী রেফারিদের জন্য একটি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। ভিএআর গোল/নো-গোল এবং গোলকিপারের লাইন ছাড়ার বিষয়টি পরীক্ষা করতে পারে। তাই সহকারী রেফারিদের আর এগুলো দেখতে হবে না। তারা পেনাল্টি স্পটের সঙ্গে সমান্তরাল থেকে অফসাইড পরীক্ষা করবেন।
ফুটবলের জন্য নতুন দিশা
এই পরিবর্তনগুলো ফুটবলকে আরও গতিশীল এবং ন্যায্য করার লক্ষ্যে আনা হয়েছে। গোলকিপারদের জন্য নতুন নিয়ম সময় নষ্ট করার প্রবণতা কমাবে এবং খেলার গতি বাড়াবে। বর্তমানে ছয় সেকেন্ডের নিয়ম খুব কমই পালন করা হয়। আট সেকেন্ডের নতুন সীমা এবং কর্নার-কিকের শাস্তি এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এটি দর্শকদের জন্য খেলাকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলবে।
ড্রপড বল এবং বল ইন প্লে-এর নিয়মে পরিবর্তন খেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। ভিএআর প্রোটোকলের আপডেট রেফারিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও স্বচ্ছতা আনবে। এই পরিবর্তনগুলো ফুটবলের আধুনিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং খেলার গুণমান বাড়াবে।
ভারতীয় ফুটবলের ওপর প্রভাব
ভারতীয় ফুটবলের জন্যও এই নিয়মগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল), আই-লিগ এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতায় এই নিয়ম কার্যকর হবে। গোলকিপারদের সময় নষ্ট করার প্রবণতা ভারতীয় ম্যাচেও দেখা যায়। নতুন নিয়ম এই সমস্যা কমাতে পারে এবং খেলার গতি বাড়াতে সাহায্য করবে। আইএসএল-এর মতো প্রতিযোগিতায় ভিএআর প্রযুক্তি এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। তবে, ভবিষ্যতে এটি গ্রহণ করা হলে এই নতুন প্রোটোকল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ফুটবলের ভবিষ্যৎ
আইএফএবি-র এই নিয়মগুলো ফুটবলের আধুনিকীকরণে একটি বড় পদক্ষেপ। গোলকিপারদের জন্য নতুন আট সেকেন্ডের নিয়ম ম্যাচে সময় নষ্ট করার প্রবণতা কমাবে এবং দর্শকদের জন্য খেলাকে আরও আকর্ষণীয় করবে। আগামী মরশুমে ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ এই নিয়মগুলোর প্রথম বড় প্রয়োগ দেখবে। ভারতীয় ফুটবলের জন্যও এটি একটি শিক্ষণীয় সুযোগ।
এই পরিবর্তনগুলো ফুটবলকে আরও দ্রুত, ন্যায্য এবং আনন্দদায়ক করে তুলবে। ভক্তরা এখন অপেক্ষায় আছেন, কীভাবে এই নিয়মগুলো মাঠে প্রভাব ফেলে। ২০২৫-২৬ মরশুমে ফুটবলের গতিপথে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।