কলকাতা লিগে ভূমিপুত্র ইস্যুতে IFA অফিসের বড় পদক্ষেপ বাংলাপক্ষের

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (IFA) এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ঘরোয়া ফুটবলে স্থানীয় প্রতিভাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কলকাতা ফুটবল লিগে (CFL) অংশগ্রহণকারী প্রতিটি…

IFA Bhumiputra Footballer Controversy where Bangla Pokkho Protest

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (IFA) এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ঘরোয়া ফুটবলে স্থানীয় প্রতিভাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কলকাতা ফুটবল লিগে (CFL) অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ক্লাবকে ন্যূনতম ১৫ জন ‘ভূমিপুত্র’ অর্থাৎ বাংলার সন্তান ফুটবলারকে দলভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে ম্যাচের একাদশে অন্তত ৫ জন স্থানীয় ফুটবলারকে খেলানো বাধ্যতামূলক।

আইএফের (IFA) ভূমিপুত্র ফুটবলার (Bhumiputra Footballer) সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজ্যের ফুটবল মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে অনেকেই আইএফের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অন্যদিকে সমাজ ও রাজনীতির সংযোগস্থলে অবস্থানকারী সংগঠন ‘বাংলাপক্ষ’ (Bangla Pokkho) এই নিয়মকে অপর্যাপ্ত বলে প্রতিবাদে সরব হয়েছে।

   

বাংলাপক্ষের দাবি ও আন্দোলন

‘বাংলাপক্ষ’ মনে করে, বর্তমান নিয়ম বাঙালি ফুটবলারদের প্রতি সুবিচার করছে না। তাদের দাবি, প্রতিটি দলে অন্তত ৯ জন ভূমিপুত্র ফুটবলার থাকতে হবে এবং ২ জনের বেশি বহিরাগত ফুটবলার খেলানো চলবে না। এই নিয়ে শুক্রবার তারা IFA অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ও ডেপুটেশন জমা দেয়।

বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত ৩০ বছর ধরে শুনে আসছি যে বাইরের রাজ্যের ফুটবলার খেলালে বাংলার ছেলেরা উন্নতি করবে। বাস্তবে আমরা দেখছি উল্টোটা। এতে বাঙালির ফুটবলের উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হচ্ছে। বাঙালি ফুটবলাররা চান্স পাচ্ছে না৷ বাংলা সন্তোষ ট্রফিতে পিছিয়ে পড়ছে, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে বাঙালির প্রতিনিধিত্ব প্রায় নেই, এমনকি কলকাতা ডার্বিতেও বাঙালি ফুটবলার পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠছে। এইভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে কলকাতা লিগ থেকেও বাঙালি হারিয়ে যাবে। বাঙালি ফুটবলাররা চান্স না পেলে খেলবে কেন? বাংলার ফুটবলকে বাঁচাতে এবং বাঙালি তথা ভূমিপুত্র ফুটবলার তুলে আনতে বাংলার ফুটবল সংস্থাকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যখন শুধুমাত্র বাংলার ছেলেরা খেলতো, তখন বাংলা একের পর এক সন্তোষ ট্রফি জিততো। সেই সময় ভারতীয় দলে ৭-৮ জন বাঙালি ফুটবলার থাকতো। এখন সেটা কল্পনাতীত। তাই বাংলার ফুটবলকে বাঁচাতে হলে IFA-কে আরও কঠোর ও স্থানীয় বান্ধব নীতি নিতে হবে।”

ডোমিসাইল দুর্নীতি ও আধার কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ

Advertisements

বাংলা পক্ষের সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতির মতে, “বর্তমানে ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যার একটি হল ডোমিসাইল দুর্নীতি। আধার কার্ড কিংবা ঠিকানা জাল করে অনেক ভিন রাজ্যের খেলোয়াড় বাংলার ফুটবলার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে নিচ্ছে। এটা শুধু ফুটবলে নয়, ক্রিকেটেও হচ্ছে। এই জালিয়াতি বন্ধ না করলে বাংলার ছেলেমেয়েরা চিরতরে সুযোগ হারাবে।”

তাদের দাবি, প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্কুল সার্টিফিকেট ও SDO অনুমোদিত ডোমিসাইল সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করতে হবে। যদি আধার কার্ড বা ঠিকানা জালিয়াতি করে কেউ খেলেন, তাহলে তাকে গ্রেফতার করতে হবে এবং সেই ক্লাবকে ব্যান করতে হবে।

অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ

শীর্ষ পরিষদ সদস্য অরিন্দম চ্যাটার্জী কলকাতা ময়দানের আর্থিক দুর্নীতির দিক তুলে ধরে বলেন, “অনেক ক্লাব ইচ্ছাকৃতভাবে বাইরের প্লেয়ারদের নেয় যাতে কম পারিশ্রমিকে চুক্তি করে বাকি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেটে তুলতে পারে। এটা এক ধরনের সিন্ডিকেটের কাজ। এর ফলে বাংলার প্রতিভাবান ফুটবলাররা বাদ পড়ে যাচ্ছে। বাঙালি, সাঁওতাল, লেপচা সহ সব ভূমিপুত্র ফুটবলারদের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।”

ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নতুন নিয়ম নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে রাজ্যের একাংশ। বাংলাপক্ষ সহ অনেক ফুটবল প্রেমী সংগঠনের দাবি, আরও কঠোর এবং বাঙালি বান্ধব নিয়ম প্রণয়ন জরুরি, যাতে বাংলার সন্তানরা খেলাধুলার জগতে নতুন করে উঠে আসতে পারে। তারা মনে করছে, ভূমিপুত্র ফুটবলারদের সমর্থন ও সুযোগ না দিলে বাংলার ফুটবল অচিরেই হারিয়ে যাবে এক অন্ধকারে। তাই এই মুহূর্তে প্রয়োজন দূরদর্শী ও কার্যকর পদক্ষেপ।