ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) মরসুম যত শেষের দিকে এগাচ্ছে, পয়েন্ট টেবিলের অঙ্ক ততই জটিল হচ্ছে। এরই মধ্যে ডার্বি হেরে আলোচনার শিরোনামে উঠে এসেছে লিগ টেবিলের তলানিতে থাকা ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। কারণ মরসুমের প্রথম পর্বে এফসি গোয়ার (FC Goa) কাছে হেরেই কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন লাল-হলুদের প্ৰাক্তন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)। এরপর দলের দায়িত্বে আনা হয়েছিল স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোকে (Oscar Bruzon)। সেই সময় দলের পয়েন্ট ছিল সাত ম্যাচে শূণ্য। তবুও তিনি ফর্মুলা বলে দিয়েছিলেন লাল-হলুদ শিবির কোন অঙ্কে প্লে-অফে (Play Off)পৌঁছাবে। যদিও সেসব এখন অতীত। ১৫ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১১ নম্বরে রয়েছে ক্লেন্টন সিলভারা। এরপর দলের ফুটবলারদের চোট যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যার ফলে বর্তমানে ইস্টবেঙ্গল বেশ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। জোড়া হারে সুপার সিক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ কমেছে। হায়দরাবাদের সঙ্গে ড্রয়ের পর মুম্বই এবং মোহনবাগানের কাছে পরপর দুই ম্যাচে হারের ফলে দলের অবস্থা আরও সংকটজনক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তারা পয়েন্ট টেবিলে ১০ পয়েন্টের ব্যবধানে মুম্বই সিটির থেকে পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে মুম্বই সিটি ছয়ে অবস্থান করছে। এক ম্যাচ কম খেললেও ইস্টবেঙ্গলের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাদের লক্ষ্য এখন একটাই, পরবর্তী তিনটি ম্যাচে জয় লাভ করা।
অস্কার ব্রুজোর অধীনে ইস্টবেঙ্গলের দলটি সবসময় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। পরবর্তী তিনটি ম্যাচ যথেষ্ট কঠিন হতে চলেছে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে গোয়া, কেরালা এবং মুম্বই। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ হবে অ্যাওয়ে (যাতে ম্যাচের চাপ বাড়বে), এবং একটি ম্যাচ হবে হোমে। এই কঠিন সময়ে ইস্টবেঙ্গলের কাছে যে একটি জয় প্রয়োজন তা অস্বীকার করার মতো নয়। তবে কোচ অস্কার ব্রুজো এখনও আশা ছাড়েননি। তার মতে, “আমাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমরা জিততে পারব।”
গোয়া ম্যাচটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো নিজেই প্রথম ভারতে কোচিং করিয়েছিলেন গোয়াতে। তিনি স্পোর্টিং ক্লাব দ্য গোয়াতে দু’বছর কোচিং করেছিলেন এবং সেখানে অনেক স্মৃতি রয়েছে তার। সুতরাং, গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নামবেন তিনি। এই পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা, কারণ একদিকে চোট, কার্ড সমস্যার কারণে দল জর্জরিত, অন্যদিকে সুপার সিক্সে যাওয়ার লক্ষ্য এখনও পূর্ণ হয় নি। অস্কার জানান, “আমার গোয়ার সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িত। এখানে আমার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে ভাল সময় কেটেছে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ইস্টবেঙ্গল এখনও আইএসএলে টানা তিনটি ম্যাচ জেতেনি, তবে আমি আশা হারাচ্ছি না। আমাদের অবশ্যই গোয়া ম্যাচে জিততে হবে, কারণ সুপার সিক্সে যেতে হলে আরও অনেক কিছু করতে হবে।”
অস্কার যখন ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন তার লক্ষ্য ছিল শীর্ষ তিনে ফিনিশ করা। কিন্তু চোট ও কার্ড সমস্যা, কিছু ম্যাচে দলের সাফল্য না আসা, এসব কারণে সেই লক্ষ্য এখন কিছুটা দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তার আশাবাদী মনোভাব এখনও ঠিক তেমনই রয়েছে। প্রথম ছয় ম্যাচে পয়েন্ট না পাওয়ার পর, পরবর্তী ছয় ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে কিছুটা উজ্জীবিত হয় ইস্টবেঙ্গল। তবে, পরবর্তীতে দুটি হার দলের আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা দিয়েছে। তাই অস্কার মনে করছেন, পরবর্তী তিনটি ম্যাচে জয়ী হতে পারলে ইস্টবেঙ্গলের সুপার সিক্সে পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকবে।
এই সময়ে দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোসের পারফরম্যান্সও ইস্টবেঙ্গলের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মরসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা থাকা সত্ত্বেও এই মরসুমে তার ফর্ম তেমন ভালো নয়। অস্কার মনে করেন, চোটের কারণে ডিমির পারফরম্যান্সে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, এবং বল সাপ্লাই সঠিকভাবে না পাওয়ার কারণে তার খেলা দুর্বল হয়ে পড়েছে। “দিমি একজন দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। তবে, তারও চোট ছিল। সে যদি টানা ৫-৬টা ম্যাচ খেলতে পারে, তবে ছন্দ ফিরে পাবে,” বলেই অস্কার জানিয়েছেন।
এছাড়াও,সাউল ক্রেসপো এবং মাদিহ তালালের মরসুমের বাকি ম্যাচ থেকে বাদ পড়া দলের সাফল্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে যেহেতু ম্যাচ সাপ্লাই কমে গিয়েছে, ফলে দলকে মাঝমাঠে সমস্যা হতে হয়েছে। তবে, নতুন বিদেশি খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি এবং সাউল ক্রেসপোর প্রত্যাবর্তনে অস্কার আশাবাদী যে দলের পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হবে।
একদিকে, গুয়াহাটিতে রিচার্ড সেলিস দলের সাথে যোগ দিয়েছেন এবং কলকাতায় মাত্র দুটো সেশন প্র্যাকটিসের পর তিনি গোয়ায় দলের সাথে গিয়েছেন। রবিবার তিনি প্রথমবার ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে মাঠে নামতে পারেন। তার যোগদান থেকে দলের আক্রমণভাগে নতুন এক শক্তি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।